০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ জিলহজ ১৪৪৫
`

মৃত্যুযন্ত্রণার স্বরূপ

-

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন- ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে।’ (সূরা আলে ইমরান-১৮৫) আর মৃত্যুর মাধ্যমেই দুনিয়ার জীবনের সমাপনী আসে এবং আখিরাতের অনন্ত অসীম জীবনের সূচনা হয়।
মৃত্যুর সময় আপতিত কষ্টই হলো মৃত্যুযন্ত্রণা। প্রত্যেক মানুষকেই অন্তিম মুহূর্তে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের চারটি আয়াতে মৃত্যু যন্ত্রণার স্বরূপ বর্ণনা করেছেন।
প্রথম আয়াত : ‘মৃত্যুযন্ত্রণা অবশ্যই আসবে। এটা থেকেই তোমরা অব্যাহতি চেয়ে আসছ।’ (সূরা কাফ-১৯)
দ্বিতীয় আয়াত : ‘হায়! তুমি যদি ওই জালিমদের দেখতে তারা মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করবে।’ (সূরা আনআম-৯৩)
তৃতীয় আয়াত : ‘এরপর যখন কারো প্রাণ কণ্ঠাগত হয়।’ (সূরা ওয়াকিয়াহ-৮৩)
চতুর্থ আয়াত : ‘সাবধান, যখন প্রাণ কণ্ঠাগত হবে।’ (সূরা কিয়ামাহ-২৬)
মহান আল্লাহ এক আশ্চর্যকর বিবরণ ও ধারাবাহিক চিত্রের মাধ্যমে মৃত্যুর দৃশ্যের বর্ণনা করছেন। পবিত্র কুরআনে তিনি বলেন- ‘সাবধান, যখন প্রাণ কণ্ঠাগত হবে। বলা হবে, কে তাকে বাঁচাবে? তখন সে মনে করবে, দুনিয়া থেকে বিদায়ের ক্ষণ এসে গেছে। আর জড়িয়ে যাবে এক পায়ের নলা আরেক পায়ের নলার সাথে। সেদিন সব কিছুর যাত্রা হবে তোমার প্রতিপালকের পানে।’ (সূরা কিয়ামাহ : ২৬-৩০)
হজরত সুফিয়ান সাওরি রহ: বলেন, ‘যখন জান কবজকারী ফেরেশতা মানুষের মনের রন্ধ্র স্পর্শ করে তখন থেকে ওই ব্যক্তি আর অন্যদের চিনতে পারে না। তার মুখ তখন বন্ধ হয়ে যায়। দুনিয়ার সব কিছুর কথা ভুলে যায়। এ সময় তার এত বেশি কষ্ট হয় যে, যদি সে সময় মৃত্যুর নেশা তার ওপর চড়ে না বসত তাহলে আশপাশের লোকদের ওপর সে ছুরি চালিয়ে দিত।’
হজরত ঈসা আ: বলেন, ‘হে বন্ধুগণ! মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করো, তিনি যেন আমার ওপর মৃত্যুযন্ত্রণা সহজ করে দেন। মৃত্যুযন্ত্রণা যে কত কঠিন তা বুঝতে পেরে সে ভয়ে আমি জীবন্ত মরা হয়ে রয়েছি।’
রাসূলুল্লাহ সা: ওফাতের সময় এ দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! মুহাম্মদ সা:-এর ওপর মৃত্যুযন্ত্রণা সহজ করো।’ হজরত আয়েশা রা: বলেন, ‘যার ওপর মৃত্যুযন্ত্রণা সহজ হয়, তার সৌভাগ্যের কোনো আশা আমি করি না। কারণ রাসূলে কারিম সা:-এর পবিত্র দেহ থেকে জীবন বের হওয়ার সময় মৃত্যুযন্ত্রণা আমি নিজ চোখে দেখেছি। সে সময়ে তিনি বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! অস্থি ও শিরাসমূহ থেকে তুমি রূহ টেনে বের করছ। এ যন্ত্রণা আমার ওপর সহজ করো।’
হজরত হাসান রা: বলেন, মৃত্যুযন্ত্রণা ও কষ্টের কথা উল্লেখ করে রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘তলোয়ার দ্বারা ৩০০ আঘাত করলে যেরূপ যন্ত্রণা হয়, মৃত্যুযন্ত্রণা তদ্রƒপ।’ অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে মৃত্যু সবচেয়ে সহজ হয় তাও লোহার পেরেক পায়ে বিঁধলে যেরূপ কষ্ট হয়, তা আর বের করা সম্ভব নয়।’
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে- হজরত মুসা আ:-এর মৃত্যুর পর আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে মুসা! মৃত্যুকে তুমি কেমন পেয়েছ?’ মুসা আ: বললেন, ‘মৃত্যুর সময় আমার অবস্থা ফুটন্ত পানির মাঝে ডুবে যাওয়া জীবন্ত পাখির মতো ছিল। না সে মরে শান্তি পাচ্ছে, না উড়তে পেরে কষ্ট থেকে মুক্তি পাচ্ছে।’ (ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি : শরহে সুদুর-১/৩৯)
হজরত কাবুল আহবার রা: হজরত ওমর রা:-কে মৃত্যুর যন্ত্রণার অবস্থা প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিলেন, ‘কাঁটাযুক্ত একটি ডাল পেটের ভেতর ঢুকে গিয়ে এক একটি রগে বিঁধে গেলে সেটি টেনে বের করতে যেরূপ কষ্ট হয়, মৃত্যুযন্ত্রণাও তদ্রƒপ।’
হজরত শাদ্দাদ ইবনে আওস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘মৃত্যু একটি চৈতন্যবিনাশী ভয়ঙ্কর বস্তু। মুমিনের জন্য মৃত্যুর কষ্ট করাত দিয়ে চেরা, কেঁচি দিয়ে কাঁটা এবং ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করার চাইতেও কষ্টকর। মৃত্যুর পর কোনো ব্যক্তি যদি মৃত্যুযন্ত্রণার কথা দুনিয়াবাসীর কাছে বলে দিত তাহলে তারা সর্বপ্রকার আরাম আয়েশের কথা ভুলে যেত এবং তাদের জন্য ঘুম হারাম হয়ে যেত।’ (ইবনে আবি দুনিয়া, ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি : শরহে সুদুর-১/৪২)
হজরত আনাস রা: বর্ণনা করেন, ‘মানুষের জন্মের পর থেকে নিয়ে গোটা জীবনে যতগুলো কষ্ট সে পায় এর মধ্যে মৃত্যুযন্ত্রণার কষ্টই সবচেয়ে বেশি।’ (ইবনে আবি দুনিয়া, ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি : শরহে সুদুর-১/৪১)
হজরত কা’আব রা: বর্ণনা করেন, ‘যতদিন মানুষ কবরে থাকবে ততদিন সে মৃত্যুর কষ্ট অনুভব করতে থাকবে। মুমিনের জন্য এ কষ্টটা বড়ই গুরুতর। কিন্তু কাফিরের জন্য সামান্য। কারণ তার কষ্ট তো মৃত্যুর পর চিরস্থায়ী আজাবের আকারে আসছে।’ (আবু নায়িম, হিলিয়াতুল উলিয়া-৬/৪৪, ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি : শরহে সুদুর-১/৩৮)
ইমাম আওজায়ি রহ: বলেন, ‘আমাদের কাছে এ মর্মে বর্ণনা পৌঁছেছে যে, মৃত ব্যক্তি মরণের পর থেকে নিয়ে হিসাব-নিকাশের জন্য ওঠার আগ পর্যন্তই মৃত্যুর কষ্ট অনুভব করতে থাকবে।’ (ইবনে আবি দুনিয়া, ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি : শরহে সুদুর-১/৩৮)
হজরত মায়সারা রা: রাসূলুল্লাহ সা:-এর উদ্ধৃতিতে বর্ণনা করেন, ‘মৃত্যুর প্রকৃত যন্ত্রণার এক ফোঁটা যদি আকাশ ও জমিনের অধিবাসীদের ওপর ঢেলে দেয়া হয় তাহলে সবাই মরে যাবে। আর কিয়ামতের একটি মুহূর্ত মৃত্যুর কষ্টের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি যন্ত্রণাদায়ক হবে।’ (মারওয়াজি, জানাজা অধ্যায়, ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি : শরহে সুদুর-১/৪০)
হজরত সাবেত রা: বর্ণনা করেন, ‘রাসূল সা: তীব্র মৃত্যুকষ্টে ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বলেছিলেন, অন্য কোনো বিষয়ের জন্য নয়, মানুষ যদি শুধু মৃত্যুযন্ত্রণার কথা ভেবে আমল করে তাহলেই তার জন্য যথেষ্ট।’ (জাওয়ায়েদে যুহদ, ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি : শরহে সুদুর-১/৩৫)
লেখক : সম্পাদক মাসিক সারস, পূর্ব রূপসা, খুলনা


আরো সংবাদ



premium cement
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে সই হতে পারে ২০ সমঝোতা স্মারক ইউক্রেনে তেলের লরি ও মিনিবাসের সংঘর্ষ, শিশুসহ নিহত ১৪ হজের অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা জানালেন সানিয়া মির্জা বালিয়াডাঙ্গীতে সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি কাশ্মিরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৮ ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শুরু গাজা যুদ্ধে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নেবে যুক্তরাজ্য : নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবসরের জল্পনার মধ্যেই ভবিষ্যৎ নিয়ে ইঙ্গিত রোনালদোর এলপিএলে একই দিনে সফলতা মোস্তাফিজ-তাসকিন-শরিফুলের রাবি ক্যাম্পাসে রিকশা ভাড়া নির্ধারণ, চালকদের থাকবে পোশাক

সকল