যেমন ছিলেন নবীজী সা:
- মুফতি ইবরাহীম আল খলীল
- ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ০৩ জুন ২০২৪, ০৫:৫৬
আমাদের নবীজী হজরত মুহাম্মাদ সা: কেবল শেষনবী এবং সর্বোত্তম ব্যক্তিত্বই নন; বরং তিনি সারা বিশ্বের সব মানুষের জন্য সর্বকালের আদর্শ, মুক্তিদূত ও পথপ্রদর্শক। মানবতার সর্বোত্তম জীবনাদর্শের প্রতিচ্ছবি। তার আদর্শ কেবল এক ক্ষেত্রে নয়, জীবনে চলার প্রতিটি ক্ষেত্রে তার আদর্শের সামগ্রিকতা স্বীকৃত। দৈনন্দিন জীবনে ভালো ব্যবহার। আদর্শ পরিবার গঠন। দরিদ্র ও অসহায়দের সাথে হৃদ্যতা প্রদর্শন। বিচার কার্যে ইনসাফ। জিহাদ ও যুদ্ধের ময়দানে দুর্দমনীয় বীরত্ব। অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। ন্যায়পরায়ণতা ও ক্ষমা প্রদর্শনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তসহ সব ধরনের গুণের অধিকারী তিনি। তার আচার-আচরণ চালচলন অত্যন্ত সৎ, নমনীয় ও কোমল ছিল। তিনি জীবনে কোনো মুসলমান কিংবা কাফেরের সাথেও কটাক্ষপূর্ণ ও কটু আচরণ করেননি। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন কারিমে ইরশাদ করেন-‘তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সূরা কলাম-৪)
সারা বিশ্বেই চলছে আজ মুসলমানদের ওপর সীমাহীন শোষণ ও নিপীড়ন। সর্বত্র চলছে অশান্তির আগুন। তাই নতুন করে শান্তিময় বিশ্ব গড়ে তুলতে এবং সর্বত্র ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে রাসূলুল্লাহ সা:-এর আদর্শের বিকল্প নেই। পবিত্র কুরআন কারিমে আল্লাহ তায়ালা অপর এক জায়গায় তার নবী সম্পর্কে বলেন-‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সা:-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আহজাব-২১)
নবীজী সা:-এর নাতি হজরত হাসান রা: বলেন, আমি নবীজী সা:-এর সাথীদের সাথে তার আচরণ সম্পর্কে আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, উত্তরে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: হাস্যোজ্জ্বল চেহারাসম্পন্ন, অমায়িক চরিত্রের অধিকারী ও বিনয়ী ছিলেন। কঠোর ছিলেন না। তার কাছে আগত ব্যক্তি নিরাশ ও হতাশ হতো না। তিনি নিজের মধ্য থেকে তিনটি জিনিস পরিত্যাগ করেছিলেন, ১. রিয়া বা আত্মপ্রকাশ; ২. অতিরঞ্জন; তিন. অনর্থক কার্যকলাপ। আর মানুষের জন্য তিনি তিনটি জিনিসকে পরিত্যাগ করেন, ১. তিনি কাউকে নিন্দা করতেন না; ২. কাউকে দোষারোপ করতেন না; ৩. সাওয়াবের প্রত্যাশা ব্যতীত কোনো কথাই বলতেন না। যখন তিনি কথা বলতেন, শ্রবণকারীরা এমনভাবে কান পেতে শুনত যেন তাদের মাথায় পাখি বসে আছে। এরপর যখন তিনি কথা শেষ করতেন তখন তারা কথা বলত। তারা তার সামনে কখনো ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি করত না। তার কাছে কেউ কথা বলা শুরু করলে তারা তার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকত। তার উপস্থিতিতে তাদেরই কথা বলার অধিকার থাকত যারা প্রথম কথা বলা শুরু করত। লোকেরা যাতে হাসে তিনিও তাতে হাসতেন। মানুষ যাতে আশ্চর্য হয় তিনিও তাতে আশ্চর্য হতেন এবং বলতেন, যখন তোমরা কোনো অভাবীকে তার প্রয়োজনীয় কিছু প্রার্থনা করতে দেখো তার প্রার্থনায় তাকে সাহায্য করো। তিনি মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা পছন্দ করতেন না। কারো কথা বলার সময় তার কথার মধ্যে বাধা দিতেন না। হ্যাঁ, তবে সীমা অতিক্রম করলে তাকে হয়তো আদেশ বা নিষেধ করতেন। (তিরমিজি শরিফ)
তিনি মানবজাতিকে বলে গেছেন, প্রকৃত মুসলিম তো সে ব্যক্তি যার হাত ও কথার অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদে থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির তো সে ব্যক্তি যে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নিষেধকৃত বস্তুকে ছেড়ে দেয়। (বুখারি-১০)
‘তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে জান, মাল ও কথার দ্বারা যুদ্ধ করো।’ (সুনানে আবু দাউদ)
‘আমি অভিসম্পাৎকারীরূপে প্রেরিত হয়নি; বরং আমি দয়ালুরূপে প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসলিম-২৫৯৯)
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে মৃত্যুবরণ করল সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (বুখারি-৪৪৫৭)
তাই পরকালীন জীবনকে সুন্দর করার জন্য আমাদের রাসূলুল্লাহ সা:-এর দেখানো পথ এবং পদ্ধতিতেই চলতে হবে। তা ভিন্ন অন্য কোনো পথে চলার মাধ্যমে আমরা সফল হতে পারব না এবং পরকালেও মুক্তি পাবো না।
লেখক : শিক্ষক, মাদরাসা আশরাফুল মাদারিস, তেজগাঁও, ঢাকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা