১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কে মৃতদের জীবিত করবে

-

দ্বিতীয়াংশ
হজরত মুসা আ:-এর আগমনস্থলে বনি ইসরাইলদের বাসস্থানের কোনো এক অঞ্চলে ‘প্লেগ বা কলেরা’ নামক মহামারী রোগ দেখা দিলো। এমতাবস্থায় মৃত্যুর ভয়ে হাজার হাজার লোক ওই স্থান ত্যাগ করে সুদূরে এক উপত্যকায় আশ্রয় নিলো কিন্তু মৃত্যু সবাইকে গ্রাস করল, কেউ বাঁচতে পারল না। সময়ের ব্যবধানে ওই উপত্যকায় তাদের লাশ পচেগলে মাংস হাড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। সীমাহীন ক্ষমতাধর আল্লাহ তায়ালা ওই পচাগলা মৃত মানুষগণকে পুনরায় জীবিত করলেন। প্রমাণ আল্লাহর বাণী- অর্থ-‘হে রাসূল! তুমি কি তাদের দেখোনি, যারা তাদের গৃহসমূহ থেকে বের হয়েছে মৃত্যুর ভয়ে এবং তারা ছিল সংখ্যায় হাজার হাজার? এরপর আল্লাহ তাদের বললেন, তোমরা মরে যাও। তারপর তিনি তাদের জীবিত করলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তো মানুষের ওপর অনুগ্রহশীল। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ শুকরিয়া আদায় করে না।’ (সূরা বাকারা-২৪৩)
তাফসিরে নুরুল কুরআন (দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪০৯) অবলম্বনে আলোচ্য অবিশ্বাস্য ও অলৌকিক ঘটনাটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো- ইমাম রাজি রহ: বলেছেন, কুরআনুল কারিমে যে শব্দ চয়ন করা হয়েছে অর্থাৎ ‘উলুফ যা আলফুন (হাজার)-এর বহুবচন।’ এর দ্বারা বোঝা যায়, সেই এলাকার লোকসংখ্যা ১০ হাজারের কিছু উপরেই ছিল। যা হোক এ কথা প্রমাণিত হয় যে, অনেক লোকই ছিল। ঘটনাক্রমে সেখানে একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি ‘প্লেগ’ দেখা দেয়, তারা এ অবস্থায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে দু’টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী একটি বিস্তৃত ময়দানে আশ্রয় গ্রহণ করে। তারা মনে করেছিল এভাবে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কিন্তু তারা জানত না, এই পৃথিবীতে যিনি একবার আগমন করে তাকে অবশ্যই এখান থেকে গমনও করতে হবে। আল্লাহ পাক এই সত্য হাতেকলমে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য তাদের কাছে দু’জন ফেরেশতা পাঠালেন। তারা উপরোল্লিখিত ময়দানের দু’দিকে দাঁড়িয়ে এমন বিকট শব্দ করলেন, তাতে উপস্থিত সবাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। তাদের মধ্যে একজন মানুষও জীবিত থাকল না। এমনকি চারপার্শ্বের লোক এসে এই হাজার হাজার মৃত মানুষের ভয়াবহ দৃশ্য অবলোকন করল। তাদের চার দিকে একটি দেয়াল তুলে দিলো এবং হাজার হাজার মানুষের মৃত দেহগুলো পচেগলে একাকার হয়ে গেল।
অনেক দিন পরে বনি ইসরাইলের একজন নবী হজরত হিজকিল আ: ওই স্থান অতিক্রম করার সময় এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখলেন এবং মৃত লোকদের ঘটনা সম্পর্কে অবগত হলেন। এরপর তিনি আল্লাহ পাকের দরবারে এই বলে দোয়া করলেন- ‘হে আল্লাহ! তাদের সবাইকে পুনর্জীবন দান করো।’ আল্লাহ পাক তার দোয়া কবুল করলেন এবং তাকে নির্দেশ দিলেন তুমি তাদের হাড়গুলোকে সম্বোধন করে ডাকো, তিনি ডাকলেন- ‘হে পুরাতন হাড়গুলো, আল্লাহ পাক তোমাদের নিজ নিজ স্থানে একত্রিত হওয়ার আদেশ দিচ্ছেন।’ আল্লাহ পাকের কুদরতের অপূর্ব নমুনা দেখা গেল, এই হাড়গুলো আল্লাহ পাকের আদেশ শুনল এবং এই আদেশ পালন করে প্রত্যেকটি হাড় নিজ নিজ স্থানে অনতিবিলম্বে পুনঃস্থাপিত হলো। এরপর হজরত হিজকিল আ:-এর প্রতি আল্লাহ পাকের আদেশ হলো আর একবার হাড়গুলোকে ডেকে গোশত ও চামড়ার আবরণ গ্রহণের জন্য আদেশ দিতে। হজরত হিজকিল আ: তাই বললেন, ‘হে হাড়গুলো আল্লাহ পাক তোমাদের আদেশ করছেন, তোমরা গোশত পরিধান করো এবং রগ ও চামড়া দ্বারা সুসজ্জিত হও।’ হজরত হিজকিল আ: এই বাক্যটি উচ্চারণ করার সাথে সাথে কঙ্কাল মাত্রকে দেখা গেল এক একটি লাশে পরিণত হতে। এরপর রূহকে সম্বোধন করে বলা হলো-‘হে রূহ বা আত্মাসমূহ, আল্লাহ পাক তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন তোমরা যে যার শরীরে পূর্বে ছিল তার শরীরে ফিরে আসো।’ তার এই কথা বলার সাথে সাথে আল্লাহ পাকের বিস্ময়কর কুদরতের অপূর্ব নমুনাস্বরূপ প্রতিটি মানুষ জীবন্ত অবস্থায় তার সম্মুখে দণ্ডায়মান হলো এবং সবার মুখে একই বাক্য উচ্চারিত হলো- ‘সোবহানাকা লা-ইলাহা ইল্লা আনতা’ হে আল্লাহ তোমারই পবিত্রতা বর্ণনা করি, হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই।
উপরোক্ত অবিশ্বাস্য, অলৌকিক ও অত্যাশ্চর্য ঘটনাটি আমাদের জন্য কি শিক্ষণীয় ও স্মরণীয় বিষয় হবে না? এর সদুত্তর হবে ‘অবশ্যই শিক্ষণীয় ও স্মরণীয় হবে’ এবং আল্লাহ তায়ালা যে মৃতকে জীবিত করতে পারেন এ বিশ্বাস বা ঈমান সুদৃঢ় হবে।
প্রসঙ্গত নি¤œবর্ণিত আয়াতগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য : অর্থাৎ সূরায়ে-ক্বিয়ামাহ-এর ৩৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন-‘মানুষ কি মনে করে তাকে এভাবে অবাধে ছেড়ে দেয়া হবে? আল্লাহর আলোচ্য প্রশ্নের জবাবে সত্যিকার উত্তর হবে কাউকে আল্লাহ বিচারাধীনে না নিয়ে ছেড়ে দেবেন না, শেষ বিচারের দিনে তিনি ‘আহকামুল হাকিমিন’ প্রত্যেকের ন্যায়বিচার করবেন, বিচারের বিচার্য বিষয় হবে অন্তরের চিন্তা-ভাবনা, ধ্যাণ-ধারণা, ইচ্ছা, কামনা-বাসনা ইত্যাদি (যা হবে হয় সৎ বা অসৎ) এবং বাস্তবকর্মকাণ্ড বা আমলনামা (যা হবে সৎ বা অসৎ)। প্রসঙ্গত, সে আয়াতটিও স্মরণীয়-‘নিশ্চয়ই তোমার রবের পাকড়াও বড় ভয়ঙ্কর বা কঠিন।’ (সূরা আল-বুরুজ-১২) যা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে কাউকে অবাধে ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সম্মানিত পাঠক ভাই ও বোনেরা! আল্লাহ তায়ালার এই সাবধান বাণীটি আমরা স্মরণে রাখি এবং সৎ চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা সংরক্ষণ করি এবং সৎ কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করতে থাকি সব অসৎ চিন্তা-ভাবনা কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করে। সূরায়ে ক্বিয়ামাহ-এর ৩৭-৩৯ নং পর্যন্ত আয়াতে মহান আল্লাহ বলের্ন-‘সে কি একবিন্দু শুক্র ছিল না? যা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এরপর সে জমাট রক্তে পরিণত হয়, এরপর আল্লাহ পাক তাকে আকৃতি দান করেন এবং সুঠাম করেন। এরপর তিনি তার থেকে সৃষ্টি করেন যুগল নর-নারী।’ উপরোক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তায়ালা মাতৃগর্ভে সন্তানের সূচনা থেকে জন্মগ্রহণ পর্যন্ত বিবর্তনের অবস্থা বর্ণনা করে আমাদেরকে আমাদের জন্মলাভ সম্পর্কে জ্ঞাত করেছেন। আমাদের জন্মবিবরণ নিঃসন্দেহে মৃতকে জীবিত করা আল্লাহর অসীম ক্ষমতার প্রমাণ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে। তাহলে নিশ্চিহ্ন অবস্থা থেকে যিনি আমাদেরকে জীবন দান করলেন তিনি কি আমাদের এই দেহের মৃত্যুবরণের পর তা আবার জীবিত করতে পারবেন না? নিশ্চয়ই পারবেন। যেমন আল্লাহর বাণী- ‘তবুও কি তিনি (আল্লাহ) মৃতকে জীবিত করতে পারেন না? (সূরা কিয়ামাহ-৪০) আল্লাহর এ প্রশ্নটি সে প্রশ্নকারীর জন্য যথাযথ প্রযোজ্য। যেমন আল্লাহর বাণী- ‘মৃতকে কে জীবিত করবে (জাহান্নামে নিক্ষেপ করা বা জান্নাতদানের জন্য)?’ (সূরা ইয়াছিন-৭৮) যে আল্লাহ তায়ালা নিশ্চিহ্ন বা অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে আদম আ:-কে সৃষ্টি করলেন, পিতাবিহীন হজরত ঈসা আ:-কে মরিয়ম আ:-এর গর্ভে সৃষ্টি করলেন, বাবা-মায়ের মাধ্যমে নর-নারী সৃষ্টি করে চলেছেন, সে আল্লাহ কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম নন? নিশ্চয়ই আল্লাহ সক্ষম এবং তার জন্য সহজতর বিষয়।’
হে আল্লাহ! দয়া করে আমাদেরকে পরিপূর্ণ মুত্তাকি, মুমিন এবং মুসলিম হওয়ার তাওফিক দান করুন যাতে করে আমরা কুরআনের প্রত্যেকটি বাণী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে পারি দ্বিধা-সংশয়মুক্ত হয়ে আমাদের উভয় জগতের কল্যাণের স্বার্থে।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ


আরো সংবাদ



premium cement
অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের জন্য বাংলাদেশ নারী দল ঘোষণা গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিচয় মিলেছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে ভারত, প্রত্যাশা আসিফ মাহমুদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ব্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করব : ভিসি ৪৭তম বিসিএসের আবেদনের নতুন সময় জানালো পিএসসি জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার মানবসেবার জন্যই হাসপাতাল করেছি : জামায়াত আমির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত চট্টগ্রামে সাবেক এমপি মোতালেবসহ ২৪৮ জনের নামে মামলা চিন্ময়ের জামিন শুনানি জানুয়ারিতেই ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ, শুরু ১০ এপ্রিল

সকল