০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১, ৫ রজব ১৪৪৬
`

মা-বাবার প্রতি করণীয়

-


মা-বাবা সম্পর্কে আমাদের করণীয় কী? তাদের প্রতি কী আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য?
ইমাম বুখারি রহ: সাহাবি হাকিম ইবনে হিজাম রা: থেকে বর্ণনা করেছেন- (তিনি বলেন) আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সা:! আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার ক্ষেত্রে কে অগ্রগণ্য? তিনি বলেন, ‘তোমার মা’। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বলেন, ‘তোমার মা’। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বলেন, ‘তোমার মা’। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বলেন, ‘তোমার বাবা’। (তাবারানি) তারপর ক্রমান্বয়ে আত্মীয় সম্পর্কের লোকেরা নৈকট্যের ভিত্তিতে সদাচরণ পাওয়ার হকদার। (সুনানে দারিমি, সুনানে তিরমিজি ও হাকিম, আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং-৩)
আরেকটি বর্ণনা লক্ষ করুন, সাহাবি ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত- কোনো ব্যক্তির প্রতি তার পিতা সন্তুষ্ট থাকলে, আল্লাহ তায়ালাও তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। আর তার পিতা অসন্তুষ্ট থাকলে, আল্লাহও তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং-২)
এ হাদিস দুটো থেকে পরিষ্কার বুঝে আসে, মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব ও করণীয় তথা তাদের দেখভাল সম্পর্কে। এরপর তারা মারা গেলে তাদের জন্য, দান-সদকা-দোয়া ইত্যাদি করাও জরুরি।

কুরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আপনার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি তথা রব আল্লাহকে ছাড়া তোমরা অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন। তাদেরকে (বিরক্তিসূচক শব্দ) ‘উহ’ বা ‘উফ’ বলো না। আর তাদেরকে ভর্ৎসনা করো না; বরং তাদের সাথে বলো সম্মানসূচক নম্র কথা।’ (সূরা বনি ইসরাইল-২৩)
এ আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদতের পর দ্বিতীয় নম্বরে মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ থেকে মা-বাবার আনুগত্য ও তাদের খেদমত করা এবং তাদের প্রতি আদব ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার গুরুত্ব পরিষ্কার হয়ে যায়। অর্থাৎ, প্রতিপালকের দাসত্ব ও আনুগত্যের দাবিগুলোর সাথে সাথে মা-বাবার দাবিগুলোও পূরণ করা অত্যাবশ্যক। বিশেষ করে বার্ধক্যে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলতে এবং তাদেরকে ধমক দিতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা বার্ধক্যে তারা দুর্বল ও অসহায় হয়ে যান। পক্ষান্তরে সন্তানরা হয় সবল এবং উপার্জনসক্ষম ও (সংসারের যাবতীয় বিষয়াবলির) ব্যবস্থাপনাকারী। এ জন্য প্রত্যেক সন্তানের উচিত, বার্ধক্যে পৌঁছে যাওয়া মা-বাবার প্রতি যত্নশীল হওয়া।
আল্লাহ তায়ালা আরো শিখিয়েছেন- ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি তুমি দয়া করো; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছে।’ (সূরা বনি ইসরাইল-২৪)

মা-বাবা উভয়ের জন্য উপর্যুক্ত আয়াতে দোয়া করার কথা শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
মা-বাবার জীবদ্দশায় প্রতিটি মুহূর্তে তাদের খোঁজখবর ও দেখভাল করাই হচ্ছে সন্তানের দায়িত্ব। এমনকি মৃত্যুর পরও তাদের জন্য দোয়া করা। তাদের বন্ধু, সহপাঠী ইত্যাদি শ্রেণীর মানুষের প্রতি সদাচরণ করা। তাদের জন্য দান-সদকা করাও কর্তব্য।
লেখক : খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement