১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচুন

-

প্রচণ্ড তাপদাহে সারা দেশের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত, চারদিকে মানুষের হা-হুতাশ শুরু হয়ে গেছে। আসলে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি ও অসহনীয় তাপমাত্রাসহ দুর্ভিক্ষ, বন্যা, ভূমিকম্প, মহামারী, দাঙ্গা, যুদ্ধ-বিগ্রহ আল্লাহ তায়ালার ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ। মানুষের অপকর্ম, অপরাধ ও গুনাহের শাস্তির সতর্কসঙ্কেত। এগুলো আল্লাহ দেন যাতে মানুষ সর্বপ্রকার গোনাহের কাজ পরিহার করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে এবং বড় শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পায়। সুতরাং বড় শাস্তি আসার আগেই এবং বিরাজমান অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও অনাবৃষ্টির বিপর্যয় থেকে মুক্তির জন্য তাওবা ইস্তিগফার করে আল্লাহর আনুগত্যের সীমানায় ফিরে আসুন। আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করুন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, সেই বড় শাস্তির আগে আমি এ দুনিয়ায়ই (কোনো না কোনো) ছোট শাস্তির স্বাদ তাদের আস্বাদন করাতে থাকব, হয়তো তারা (নিজেদের বিদ্রোহাত্মক নীতি থেকে) বিরত হবে।’ (সূরা আস সিজদা-২১)

বড় শাস্তি বলতে আখিরাতের শাস্তিকে বুঝানো হয়েছে। কুফরি ও ফাসেকির অপরাধে এ শাস্তি দেয়া হবে। এর মোকাবেলায় ছোট শাস্তি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে এ দুনিয়ায় মানুষ যেসব কষ্ট পায় সেগুলো। যেমন- ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন রোগ, নিজের প্রিয়তম লোকদের মৃত্যু, ভয়াবহ দুর্ঘটনা, মারাত্মক ক্ষতি, ব্যর্থতা ইত্যাদি। সামাজিক জীবনে ঝড়-তুফান, ভূমিকম্প, বন্যা, মহামারী, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, যুদ্ধ এবং আরো বহু আপদ-বিপদ, যা লাখো লাখো কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে। এসব বিপদ অবতীর্ণ হওয়ার প্রয়োজন ও কল্যাণকর দিক বর্ণনা করে বলা হয়েছে, এর ফলে বড় শাস্তি ভোগ করার আগেই যেন মানুষ সচেতন হয়ে যায় এবং এমন চিন্তা ও অন্য কথায় এর অর্থ হবে দুনিয়ায় আল্লাহ মানুষকে একেবারেই পরমানন্দে রাখেননি। নিশ্চিন্তে ও আরামে জীবনের গাড়ি চলতে থাকলে মানুষ এ ভুল ধারণায় লিপ্ত হয়ে পড়বে যে, তার চেয়ে বড় আর কোনো শক্তি নেই যে, তার কোনো ক্ষতি করতে পারে; বরং আল্লাহ এমন ব্যবস্থা করে রেখেছেন যার ফলে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি, জাতি ও দেশের ওপর এমন সব আপদ-বিপদ পাঠাতে থাকেন, যা তাদের একদিকে নিজেদের অসহায়তা এবং অন্যদিকে নিজেদের চেয়ে বড় ও ঊর্ধ্বে একটি মহাপরাক্রমশালী সর্বব্যাপী শাসনব্যবস্থার অনুভূতি দান করে।

এ বিপদ প্রত্যেকটি ব্যক্তি, দল ও জাতিকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তোমাদের ভাগ্য যে, তোমাদের ভাগ্য উপরে অন্য এক সত্তা নিয়ন্ত্রণ করছেন। সব কিছু তোমাদের হাতে দিয়ে দেয়া হয়নি। আসল ক্ষমতা রয়েছে তার হাতে যিনি কর্তৃত্বসহকারে এসব কিছু করে চলেছেন। তার পক্ষ থেকে যখনই কোনো বিপদ তোমাদের ওপর আসে, তার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ তোমরা গড়ে তুলতে পারো না।

বর্তমান তাপমাত্রা বিচার করলে এ বিপদ নিছক বিপদ নয়; বরং আল্লাহর সতর্কসঙ্কেত। সত্য জানাবার এবং আমাদের বিভ্রান্তি দূর করার জন্যই পাঠানো হয়েছে। এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদেরকে খুব দ্রুত নিজেদের বিশ^াস ও কর্ম শুধরে নিতে হবে। তাহলে আল্লাহর বড় শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার কোনো প্রয়োজনই দেখা দেবে না। আমাদের ঈমানের দুর্বলতা ও পার্থিব জীবনে লোভ-লালসার কারণে বিপদাপদ দিয়ে আমরা অসহায়ের সাগরে ভাসছি। আমরা যদি আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করি তাহলে এ বিপদ আল্লাহ তুলে নেবেন। সাম্প্রতিক বাংলাদেশে মারাত্মক কতগুলো বড় বড় গোনাহের ব্যাপকতা লাভ করেছে। বড় কোনো বিপর্যয় নেমে আসার আগেই আমাদের সতর্ক হতে হবে। যারা এসব গোনাহের সাথে জড়িত আছেন, তাদের কাছে অনুরোধ অবিলম্বে এগুলো পরিত্যাগ করুন। নিজে বাঁচুন, দেশ ও দেশের জনগণকে বাঁচান। কারণ বিপদ যখন আসে তখন দোষী-নির্দোষী সবাইকে সমভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

১. জুলুম-নির্যাতন : সম্প্রতি জুলুম-নির্যাতনের হার যেকোনো সময়ের চেয়ে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন যাই থাকুক, বিবেকের ন্যূনতম নৈতিক চাহিদাটুকুও যদি অবশিষ্ট না থাকে। ক্ষমতাবান হয়েছে বলে ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধের ডাকটাও না শুনেন, তাহলে মানুষ জুলুম-নির্যাতনের শিকার হবেই। অহরহ হচ্ছেও তাই। দেশের প্রতি সেক্টরে এই জুলুম ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেছে। প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের নিজস্ব আইন-কানুন ও রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন ক্ষমতার কাছে ইদানীং বারবার হেরে যাচ্ছে। বারবার পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হওয়ার পরও তার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। ফলে দুর্বলরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। কোনো তরফ থেকে এ জুলুম অবসানের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। বিশাল কোনো বিপর্যয় নেমে আসার আগেই জুলুমবাজদের হাত গুটিয়ে নিতে হবে। সরকারকে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।

২. শিরকের প্রসার : মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ জনপদে ইদানীং শিরকের প্রচার ও প্রসার ব্যাপকতা লাভ করেছে। মুসলিম প্রধান দেশে মুসলমানরা নিজেদের কৃষ্টি-কালচারের পরিবর্তে অন্য জাতি-গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া কৃষ্টি পালন করতে হচ্ছে। ইসলামী অনুশাসন মানা ও চর্চার ওপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ইসলাম মানা, কুরআন চর্চা ও সালাত আদায় করতে পারছে না। অথচ ইসলাম ছাড়া অন্যান্য সব ধর্মের লোকেরা তাদের ধর্মচর্চা স্বাধীনভাবে পালন করতে পারছে। পয়লা বৈশাখের নামে শিরকের বিশাল মহড়া চালানো হচ্ছে। পূজা-অর্চনা সবই চলতে পারে কিন্তু মুসলমানদের কুরআন শিক্ষা ও সালাত আদায়ের অনুমতি পাওয়া যায় না। সারা দেশে প্রচণ্ড তাপমাত্রা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মুসলমানরা স্বতঃস্ফূর্ত ইসতিসকার সালাত আদায় করছে। তারই অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মুসলিম সন্তানরা সালাতুল ইসতিসকার সালাত আদায়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায়নি। এ পরিস্থিতিতে আল্লাহর গজব তো আসবেই। বর্তমান তাপদাহ থেকে আরো কঠিন বিপর্যয় নেমে আসার আগেই এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩. দুর্নীতি ও লুটপাট : দুর্নীতি ও লুটপাট অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিক হারে বেড়ে গেছে। যাকে যেখানেই ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে, সেখানেই সে দুর্নীতি ও লুটপাটের রেকর্ড গড়ছে ও ভাঙছে। যা রীতিমতো রূপকথার কল্পকাহিনীকেও হার মানাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে এ রেকর্ড ভাঙা-গড়ার প্রতিযোগিতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

৪. অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার প্রসার : বেহায়াপনা ইদানীং গা সহায় হয়ে পড়েছে। চরম লজ্জাকর বিষয়কেও এখন লজ্জা মনে হয় না। জিনা-ব্যভিচার প্রসার লাভ করেছে। ইবনে মাজাহর একটি হাদিসের মূল বক্তব্য হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘হে মুহাজিরগণ! পাঁচ কারণে জমিনে বিপর্যয় নেমে আসে, আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হয় না। তা হলো, মানুষের গোনাহ জিনা-ব্যভিচার, দুর্নীতি-দুশাসন, অঙ্গীকার ভঙ্গ, মাপে কম দেয়া ও সঠিকভাবে জাকাত আদায় না করা।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদি পৃথিবীতে অবলা জন্তু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুরা না থাকত তাহলে আল্লাহ তায়ালা কখনো আসমান থেকে বৃষ্টি নাজিল করতেন না।’ বর্তমান এই পরিস্থিতির জন্য আমরাই দায়ী। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে যার ফলে তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করানো যায়, হয়তো তারা বিরত হবে।’ (সূরা রুম-৪১) তাফসিরকাররা লোকদের ‘স্বহস্তের উপার্জন’ বাক্যাংশের অর্থ করেছেন, ফাসেকি, অশ্লীলতা, জুলুম ও নিপীড়নের এমন একটি ধারা যা শিরক ও নাস্তিক্যবাদের আকিদা-বিশ^াস অবলম্বন ও আখিরাতকে উপেক্ষা করার ফলে অনিবার্যভাবে মানবিক নৈতিক গুণাবলি ও চরিত্রের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে থাকে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘জনপদের লোকেরা যদি ঈমান আনত ও তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করত তাহলে আমি আসমান-জমিনের বরকতের ভাণ্ডার খুলে দিতাম।’ (সূরা আরাফ-৯৬) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন- ‘আর নিজের রহমতের আগে বাতাসকে সুসংবাদবাহীরূপে পাঠান। তারপর আকাশ থেকে বর্ষণ করেন বিশুদ্ধ পানি।’ (সূরা ফুরকান-৪৮)


আরো সংবাদ



premium cement
টানা জয়ে শীর্ষে রংপুর, প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে শান্তর ৮০ ইনসাফভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চায় জামায়াত : রেজাউল করিম টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে চান সৌম্য ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে সমর্থন ইতালির আবাহনীকে হারিয়ে শীর্ষে মোহামেডান ভারতকে ‘অসহযোগী’ দেশ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন : ডিএমপিতে ২ দিনে ১৭৯৯ মামলা কোরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি : নূরুল ইসলাম বুলবুল বিআরটি করিডোরে বিআরটিসির এসি বাস সার্ভিস চালু হচ্ছে রোববার বাংলাদেশে বিজেপির হিন্দুত্ববাদের বিকাশ ঘটছে! আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে আমির

সকল