ইসলামে জাকাতের বিধান
- মুফতি ইবরাহীম আল খলীল
- ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫, আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৪
জাকাতদাতা গরিব ব্যক্তিকে জাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো জাগতিক স্বার্থ রাখতে পারবে না। জাকাত আদায়কালে আদায়কারীর উদ্দেশ্য হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি। এর অন্যথা হলে তা আমল হিসেবে বিবেচিত হবে না। এ ধরনের যেকোনো প্রয়াসে জাকাত আদায় হবে না। রাসূল সা: রিয়া বা লোক দেখানো আমল থেকে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। তাকে আখ্যায়িত করেছেন ছোট শিরক বলে। তিনি বলেন, আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক নিয়ে যতটা ভয় পাচ্ছি, অন্য কোনো ব্যাপারে এতটা ভীত নই।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস-২২৫২৮)
জাকাত দানকারী গরিব ব্যক্তিকে জাকাত দান করে তার ওপর কোনো অনুগ্রহ করছেন এমন ভাবলেও তা অন্যায় বলে বিবেচিত হবে। কারণ সম্পদের ওই নির্দিষ্ট অংশ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া গরিবের হক। তা গরিবের অধিকার। ধনীরা জাকাত আদায় করা মানে নিজেদের দায়িত্ব পালন করা। গরিবের উপর অনুগ্রহ করা নয়। কেননা কুরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে-‘এবং তাদের (ধনীদের) সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত-১৯)
জাকাতের অপরিহার্যতা কুরআনে : জাকাত ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হলো নামাজ ও জাকাত। কুরআনে কারিমের বহু স্থানে জাকাতের আদেশ করা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত প্রদান করো। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর কাছে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখছেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১১০) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পারো।’ (সূরা নূর, আয়াত-৫৬) আরেক আয়াতে জাকাতের গুরুত্বপূর্ণ সুফল বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদের পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন। আপনি তাদের জন্য দোয়া করবেন। আপনার দোয়া তো তাদের জন্য চিত্তস্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।’ (সূরা তাওবা, আয়াত-১০৩)
জাকাত দেয়া ধনীদের উপর ফরজ : কুরআনে কারিমের বিভিন্ন আয়াতে, যেখানে খাঁটি মুমিনের গুণ ও বৈশিষ্ট্য উল্লিখিত হয়েছে সেখানে নামাজ ও জাকাতের কথা এসেছে অপরিহার্যভাবে। এত অধিক গুরুত্বের সাথে নামাজ ও জাকাতের প্রসঙ্গ কুরআনে কারিমে এসেছে যে, এটি ছাড়া দ্বীন ও ঈমানের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না।
যারা জাকাত ফরজ হওয়া সত্ত্বেও আদায় করে না তারা জাকাতের সব সুফল থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কারণে তাদের যে মর্মন্তুদ শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে তা-ও কুরআন কারিমে বলে দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- ‘আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদের দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তারা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, এটি তাদের জন্য মঙ্গল। না, এটি তাদের জন্য অমঙ্গল। যে সম্পদে তারা কৃপণতা করেছে কিয়ামতের দিন তা-ই তাদের গলায় বেড়ি হবে। আসমান ও জমিনের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। তোমরা যা করো আল্লাহ তা বিশেষভাবে অবগত।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৮০)
হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার জাকাত দেয়নি কিয়ামতের দিন তা বিষধর সাপরূপে উপস্থিত হবে এবং তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের উভয় পাশে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ওই ধন, আমিই তোমার পুঞ্জীভূত সম্পদ।’ (বুখারি-১৪০৩)
জাকাত দিলে সম্পদ বাড়ে : ইসলামী বিধি-বিধান অনুসারে ধনীদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ সম্পদ গরিব ও অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করার নির্দেশনা রয়েছে। জাকাত সম্পদের শতকরা আড়াই শতাংশ হিসেবে আল্লাহর নির্ধারিত খাতে এটি বণ্টন করতে হয়।
যারা জাকাত প্রদান করে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ, আর যারা জাকাত দিতে কার্পণ্য করে তাদের জন্য রয়েছে দুঃসংবাদ। এ বিষয়ে এক হাদিসে মহানবী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো বান্দা যখন জাকাত আদায় করেন, তখন আল্লাহর আদেশে একজন ফিরিশতা তার জন্য এভাবে দোয়া করতে থাকেন, হে আল্লাহ! আপনার পথে যে দান-সাদাকা করে এবং জাকাত দেয়, তার সম্পদকে আপনি বৃদ্ধি করে দিন। আর যে ব্যক্তি সম্পদ ধরে রাখে (জাকাত দেয় না) তার সম্পদ আপনি ছিনিয়ে নেন।’ (বুখারি)
খোলাফায়ে রাশেদিন ও তার পরবর্তী সময়ে সঠিকভাবে জাকাত আদায়ের ফলে মুসলিম বিশ্বে জাকাত নেয়ার মতো লোক পাওয়া বেশ দুরূহ হয়ে পড়েছিল। এটি হলো জাকাতের সুফল, যা সমাজে শান্তি নিয়ে আসে আর দারিদ্র্য বিমোচন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।
লেখক : শিক্ষক, মাদরাসা আশরাফুর মাদারিস, তেজগাঁও, ঢাকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা