১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রমজানের গূঢ় রহস্য

-

রমজান শব্দটি রামাজ ধাতু থেকে এসেছে। এর শাব্দিক অর্থ হলো পুড়ে যাওয়া বা দগ্ধ হওয়া। কুরআনিক শব্দ হলো সিয়াম। সিয়ামের আভিধানিক অর্থ হলো বিরত থাকা, বিরত রাখা। রোজা ফার্সি শব্দ। ইসলামী শরিয়তের ভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব প্রকার খাদ্য, স্ত্রী সম্ভোগ ও রোজা ভঙ্গ করতে পারে এমন সব কাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকাকে বলে সাওম বা রোজা পালন। সিয়াম হলো সাধনার বিষয়। একজন মুসলমানকে সাধনা করে এর পূর্ণ ফায়দা হাসিল করতে হয়। অর্থাৎ ইহকাল ও পরকালের জীবনকে সার্থক করতে রোজা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধূলায় ধূসরিত হোক যে রমজান মাস পেলো অথচ তার গোনাহ ক্ষমা হওয়ার আগে রমজান মাস শেষ হয়ে গেল’ (তিরমিজি-৩৫৪৫)।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে। যেমন তোমাদের পূর্বপুরুষদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো’ (২-১৮৩)। রমজান মাস তো সেই মাস যেখানে কুরআন নাজিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক, হেদায়েতের স্পষ্ট নিদর্শন এবং কুরআন সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী (২ : ১৮৫)।
সিয়াম সাধনার মাহে রমজানে শুধু রোজা রাখলেই হবে না, সব ধরনের অন্যায় ও হারাম কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। পানাহার বর্জন করলেও কেউ মিথ্যা বললে অন্যের মনে কষ্ট দিলে, সুদ-ঘুষের মতো পাপকাজে লিপ্ত হলে তার সিয়াম সাধনা হবে না। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায় কথা ও অন্যায় কাজ ছাড়ল না তার খানাপিনা ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই’ (বুখারি)।

সব কিছুরই আদব আছে, রোজার আদব ছয়টি- ১. চোখকে গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখা; ২. জবানকে হিফাজত করা; ৩. কানকে গুনাহ থেকে নিবৃত করা; ৪. শরীর হাত-পা, অন্তর, পেট, লজ্জাস্থানসহ সর্বাঙ্গের, সব ধরনের গুনাহ থেকে পরহেজ করা; ৫. ইফতারির সময় হালাল সম্পদ থেকে ইফতার করা ও পরিমিত আহার করা এবং ৬. রোজা রাখার পর এই ভয়ে ভীত হওয়া যে, রোজা কবুল হচ্ছে কি না পাশাপাশি আশা রাখা। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে রোজা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার পেছনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন’ (বুখারি-২০১৪)।
আবু হুরায়রা থেকে অপর এক হাদিসে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আদম সন্তানের মধ্যে থেকে নেক আমলের সওয়াব নিম্নে ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। রোজাদারই আল-রাইয়ান দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন, অন্য কেউ নয়। কারণ তিনি বলেছেন, রোজা আমার জন্যই হয়ে থাকে, তাই এর বদলা আমি নিজেই দেবো। যেহেতু, বান্দা আমার জন্যই তার কামনা, বাসনা ও খাওয়া-দাওয়া ত্যাগ করেছে’ (মুসলিম-২৭৬৩)।

রোজাকে ঢাল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ঢাল যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে একজনকে রক্ষা করে রোজাও তেমন একজন রোজাদারকে পাপ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু রোজাদার যদি এ সব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে না পারে তাহলে তার রোজা পালন সঠিক হয়নি। এ পৃথিবীতে যারা স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন তারা প্রত্যেকেই নিজের নফসকে সুনিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

একজন মুমিনের প্রধান উদ্দেশ্য ইহকাল-পরকালের জীবনকে সফল করে তোলা। আর তা সম্পূর্ণ তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যমে। তাকওয়া হলো- আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলা আর যা তিনি নিষেধ করেছেন তা না করা। নফস, শয়তান, খারাপ মানুষ আমাদেরকে কুপথে যেতে প্ররোচিত করে। এ পথ থেকে বেঁচে চলতে হলে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য একান্ত প্রয়োজন। অপর দিকে, নফসকে নিয়ন্ত্রণ করে সঠিক পথে রাখা সম্ভব। আর এ সুযোগ সৃষ্টি হয় রমজান মাসে। ১৫-১৬ ঘণ্টা রোজা থেকে এবং শরীরের সব অঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করে নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ভালো মানুষ তৈরির এক সুযোগ সৃষ্টি হয়। নফসের পরিশুদ্ধতার আবহ সৃষ্টি হয়। মহান আল্লাহ পাক বলেছেন- ‘যে নফসকে পরিশুদ্ধ করতে পেরেছে সে সফল হয়েছে’। আর অন্য কোনো উপায়ে দেহ, মন, আত্মার সুসমন্বয় হয় না। এটিই রোজার গূঢ় রহস্য।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই’ পাটখাতে সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে : পাট উপদেষ্টা তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবি : ৩ দিন সাগরে ভেসে ছিল শিশুটি বিএসএমএমইউ’র ভিসিকে অবরুদ্ধ করে স্নাতকোত্তর কোর্সে ঢোকার চেষ্টা ১৩ চিকিৎসকের অস্ট্রেলিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশী শিক্ষক নিহত ডিজিটাল যুগে ইসলামিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও চ্যালেঞ্জ থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি ও ফানুস নিষিদ্ধ রিজার্ভ বেড়ে এক হাজার ৯০০ কোটির ঘরে এবার শীত কম হবে, নাকি বেশি জনগণের হয়রানি রোধে জমির ডিজিটাল জরিপ করা হচ্ছে : মহাপরিচালক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় অটোরিকশাচালক নিহত

সকল