মাহে রমজানের শেষ জুমার ফজিলত
- ডা: মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
- ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
রমজান মাসের তৃতীয় দশকের বিদায়কালীন শুক্রবার তথা শেষ জুমার দিন মুসলিম বিশ্বে ‘জুমাতুল বিদা’ নামে পরিচিত ‘জুমা’ আরবি শব্দটির বাংলা অর্থ শুক্রবার আর ‘বিদা’ অর্থ শেষ। জুমাতুল বিদা অর্থ শেষ শুক্রবার। মাহে রমজানের শেষ জুমার দিনটি আমাদের সমাজে জুমাতুল বিদা নামে পরিচিত। যদিও পরিভাষাটি কুরআন বা হাদিসের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায় না। তারপরও মোবারক মাস রমজানের শেষ জুমার দিন হিসেবে এর গুরুত্ব কম নয়। রমজান আর জুমা একত্রে মিলিত হয়ে দিনটিকে করে তুলেছে মহিমাময়। উম্মতে মোহাম্মদির জন্য মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে বছর ঘুরে আসা মাহে রমজান আর তার সাথে যুক্ত সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন ইয়াওমুল জুমা। তাই জুমাতুল বিদা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের বিশেষ তৎপরতা লক্ষ করা যায়। মসজিদে জামাতের সাথে জুমার নামাজ আদায় করা এবং বিশেষ মুনাজাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা ও নিজের আকুতি দয়াময় প্রভুর দরবারে পেশ করাই যেন এদিনে সব মুসলমানের পরম আগ্রহের বিষয়।
জুমাতুল বিদার মহত্ত্ব : দু’টি কারণে জুমাতুল বিদা অত্যন্ত মহিমাময়- এক মাহে রমজান। রমজান মাস সীমাহীন ফজিলতের মাস এবং এটি উম্মতে মোহাম্মদির জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ উপহারস্বরূপ। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রব বলেছেন, বনি আদমের প্রত্যেকটি নেক-আমলের সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত দেয়া হয় শুধু রোজা ছাড়া। কেননা, রোজা শুধুই আমার জন্য, আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো। আর নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক আম্বরের চেয়েও বেশি প্রিয়। তোমাদের কারো রোজা থাকা অবস্থায় যদি কেউ তার সাথে জাহেলের মতো আচরণ করে তাহলে সে বলে দেবে, আমি একজন রোজাদার’ (বুখারি-৫৯২৭, মুসলিম- ১১৫১, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা-৮৮৯৪, মুসনাদে আহমাদ-৯৭১৪)। আর জুমার দিনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সূর্যোদয়ের মাধ্যমে যে দিনগুলো হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমার দিন।’ এই দিনে হজরত আদম আ:-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। আর এ দিনের মধ্যে এমন একটা সময় আছে, যখন কোনো মুসলমান নামাজরত অবস্থায় দোয়া করলে অবশ্যই তার দোয়া কবুল করা হয় (সুনানে তিরমিজি-৪৯১)। রমজান মাসে রোজা অবস্থায় জুমার দিনের নিশ্চিত দোয়া কবুলের শেষ সুযোগ হিসেবে জুমাতুল বিদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
করণীয় : জুমার দিনের কিছু সুন্নত আমল রয়েছে। যেমন- ১. সাবান দিয়ে ভালো করে গোসল করতে হবে; ২. নতুন বা উত্তম জামা কাপড় পরতে হবে; ৩. আতর তথা সুগন্ধি ব্যবহার করতে হবে; ৪. হেঁটে মসজিদে যেতে হবে; ৫. আগে আগে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে; ৬. ইমামের কাছাকাছি জায়গায় বসতে হবে। ৭. ইমামের খুতবা মনোযোগসহকারে শুনতে হবে; ৮. বেশি বেশি দরূদ শরিফ পাঠ করতে হবে; ৯. কাউকে কষ্ট দেয়া যাবে না, কোনো অনর্থক কাজ করা যাবে না। হজরত আওস ইবনে আওস আস-সাকাফি রা: থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে ভালো করে গোসল করবে এবং আগে আগে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং ইমামের কাছাকাছি বসে খুতবা মনোযোগসহকারে শুনবে আর কোনো রকম অনর্থক কাজ করবে না তাকে তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে লাগাতার এক বছর নামাজ ও রোজার সওয়াব দান করা হবে’ (সুনানে ইবনে মাজাহ-১০৮৭, সুনানে আবু দাউদ-৩৪৫, আস-সুনানুল কুবরা-১৭০৩, সুনানে নাসায়ি-১৩৮৪, মুসনাদে আহমাদ-১৬১৭৬, সহিহ ইবনে হিব্বান-২৭৮১)। জুমাতুল বিদার ফজিলত অনেক বেশি। রমজান মাসের সর্বোত্তম রাত লাইলাতুল কদর, আর সর্বোত্তম দিন জুমাতুল বিদা।
ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, রমজান মাসের শেষ শুক্রবার হজরত সুলায়মান আ: জেরুসালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন এবং মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘মসজিদ আল-আকসা’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ জন্য প্রতি বছর সারা বিশ্বের মুসলমানরা রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে ‘আল কুদস’ দিবস হিসেবে পালন করেন।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা