০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

শরীর চর্চার উপকারিতা

-

সুন্দর জীবনের জন্য চাই সুস্বাস্থ্য। সুস্বাস্থ্যের জন্য দরকার শরীর চর্চা। শরীর ঠিক তো সব ঠিক। শরীর সুস্থ থাকলে সব কিছুই ভালো লাগে। শরীরকে সুস্থ ও মনকে নির্মল রাখতে শরীর চর্চার বিকল্প নেই। শরীর চর্চার উদ্দেশ্য হলো শারীরিক সুস্থতা যা শারীরিক ব্যায়াম নির্ভর। এটি স্বাস্থ্য রক্ষা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শক্তিশালী করার শক্তিশালী উপায়। হজরত মুহাম্মদ সা: নিজে নিয়মিত শরীর চর্চা করতেন। তিনি নির্দোষ খেলাধুলা, ঘোড়দৌড়, কুস্তি ও তীর নিক্ষেপ চর্চার জন্য অন্যদের উপদেশ দিতেন। তিনি বলেছেন, ‘পিতার ওপর সন্তানের অধিকার হলো, পিতা সন্তানকে লেখাপড়া, সাঁতার ও তীর-চালনা শেখাবে’ (সহিহ্ মুসলিম, কিতাবুল ক্বাদর)।
ইবাদতের স্বার্থে হলেও প্রতিটি মুসলিমের জন্য শরীর চর্চা করা অবশ্য কর্তব্য। হজরত মুহাম্মদ সা: বলেছেন, ‘তোমার ওপর তোমার শরীরের হক রয়েছে’ (বুখারি-১৮৬৭)।
শরীর চর্চার অনেক উপকারিতা রয়েছে। শরীর চর্চা প্রত্যেক মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। স্বাস্থ্য রক্ষা করে। মানুষের শরীর ও হাড়ের জোড়াকে মজবুত করে। শরীর চর্চা করলে মস্তিষ্ক থেকে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। এসব রাসায়নিক উপাদান চিত্ত প্রফুল্ল করে এবং শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি চেহারায় লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এটি শরীরে প্রফুল্লতা সৃষ্টি করে। অলসতা, ক্লান্তি অপসারণ করে। নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম কর্মস্পৃহা বাড়ায়। শরীর চর্চার ফলে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে অতিরিক্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ হয়। ফলে আমাদের হৃদযন্ত্র এবং রক্তনালী সচল থাকে। এতে করে পুরো শরীরে একটি সুস্থ প্রাণস্পন্দন ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। নিয়মিত শরীর চর্চা সুনিদ্রা আনয়ন করে। যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য শরীর চর্চা অত্যন্ত উপকারী। শরীর চর্চা অনিদ্রা দূর করে। এর মাধ্যমে শরীরের রোগ দূরীভূত হয়। ফলে শরীর শক্তিশালী ও সুস্থ হয়ে ওঠে।
আধুনিক জীবনে শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ কমে গেছে। আর বদলে গেছে আমাদের খাদ্যাভ্যাসও। ফলে দিনে দিনে ‘ক্রনিক’ রোগব্যাধি, যেমন- হৃদরাগ, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, অস্থিক্ষয় ও ক্যান্সার ইত্যাদির প্রকোপ বহুগুণে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস সমিতি ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করেন না এবং উন্নত বিশ্বে এ হার অনেক বেশি। শুধু শারীরিক নিষ্ক্রিয়তাজনিত কারণে প্রতি বছর পৃথিবীতে ১৯ লাখ মানুষ মারা যায়। শারীরিক নিষ্ক্রিয়তাজনিত কারণে ১০-১৬ শতাংশ ডায়াবেটিস হয়ে থাক। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে যাদের শারীরিক ফিটনেস বা যোগ্যতা কম অথবা মাঝামাঝি, তাদের শারীরিকভাবে যোগ্যদের তুলনায় ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ছয় গুণ বেশি। কোনো ডায়াবেটিক রোগী যদি দৈনিক দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে হাঁটেন, তবে তার ডায়াবেটিসজনিত মৃত্যুর আশঙ্কা ৩৯ শতাংশ এবং হৃদরোগজনিত মৃত্যুর আশঙ্কা ৩৪ শতাংশ কমে যায়।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি ধরনের শারীরিক পরিশ্রম শরীরে ইনসুলিনের সহনশীলতা বাড়ায়। শরীর চর্চার ফলে শরীর বেশ শক্তিশালী হয়। শারীরিক শক্তি মহান আল্লাহর দেয়া বিশেষ নিয়ামত। হাদিসে এসেছে- আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘দুর্বল মুমিন অপেক্ষা সবল মুমিন শ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়’ (সহিহ মুসলিম)।
শরীর চর্চার বেশ কিছু শর্তাবলি রয়েছে। এর মাঝে রয়েছে খাওয়ার আগে ও পরে তৎক্ষণাৎ না হওয়া। ব্যায়ামের আগে ও পরপরই পানি পান না করা। প্রথমত ধীরে ধীরে ব্যায়াম করা। অর্থাৎ নিম্নস্তর হতে ওপরের স্তরের দিকে যাওয়া, যেন শরীরের ক্ষতি না হয়। আর নাকে শ্বাস নিয়ে তা আরামে মুখ দিয়ে বের করে দেয়া।
ইসলাম শারীরিক ব্যায়ামের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। রাসূল সা: এ ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। আমাদের উচিত শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রত্যেহ শরীর চর্চা করা।
লেখক : শিক্ষার্থী ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement