২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা

-

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ দ্বীন। যে দ্বীন আল্লাহ তায়ালার কাছে অতিপ্রিয়। দুনিয়ার প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো দ্বীন বা ধর্মের অনুসারী হয়ে থাকে। আর এ পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই মানবজাতি এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার চরম প্রয়োজন অনুভব করে আসছিল, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য অর্জন করা যায়। বিশ্ব মানবের এ সম্মিলিত প্রয়োজন মেটানোর মহান লক্ষ্যেই আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন এ পৃথিবীতে। যাতে জগদ্বাসী সর্বোত্তম দ্বীনের অনুসারী হতে পারে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও অসংখ্য মানুষ নিজেদের সেই পুরনো গোমরাহীর ভয়াল সাগরেই নিমজ্জিত রাখল।
তারা নিজেদের মস্তিষ্কপ্রসূত বাতিল মতবাদকে সঠিক ধর্মের (ইসলামের) ওপর প্রাধান্য দিয়ে নানা উপায়ে দ্বীনের বিরোধিতা করতে লাগল। অথচ তারাও প্রথমে পারলৌকিক শান্তিপ্রাপ্তি ও মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে সঠিক দ্বীনের সন্ধান লাভের জন্য হৃদয়ে চরম ব্যাকুলতা অনুভব করেছিল।
আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নবী-রাসূলগণ যখন যে দ্বীনই নিয়ে এসেছেন, সবগুলোতেই এক দিকে যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সর্বোত্তম পন্থা বর্ণিত ছিল, ঠিক তেমনি অপর দিকে বর্ণিত ছিল খোদায়ি বিধান মতে এ দুনিয়াতে নিরাপদে বসবাসের যাবতীয় মূলনীতি। নবী-রাসূলদের এ পবিত্র আগমনী ধারার সর্বশেষ যাত্রী হলেন আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা:। তিনি এসে দ্বীনকে আবার নতুন করে ঢেলে সাজালেন। বিশ্ববাসীকে পুনঃ দ্বীনের দাওয়াত দিলেন। মানুষকে ইসলামের সাথে নতুন করে পরিচয় করালেন। মিথ্যা ছেড়ে সত্যের পথে আসার জন্য সবাইকে আহ্বান জানালেন। তার আনীত দ্বীন হচ্ছে একটি নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গ দ্বীন। তিনি এসেই একদিকে পার্থিব জীবনব্যবস্থাকে সংশোধনের ঐতিহাসিক ঘোষণা দিলেন। অপর দিকে, পারলৌকিক জীবনে অফুরন্ত সুখশান্তি প্রাপ্তির মূলনীতিগুলোও বাতলে দিলেন বিশ্বমানবকে।


তিনি নিজেও এই দ্বীনের মূলনীতি অনুসারে জীবনযাপন করেছেন আর সব ভুল মতবাদের মূলোৎপাটন করে সেখানে সত্য সুন্দর দ্বীনের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। দ্বীনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে। দুনিয়া থেকে সব প্রকার ফিতনা ফ্যাসাদ দূরীভূত করে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই ইসলামধর্মকে ‘সর্বোত্তম দ্বীন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং নিজের সব বান্দার জন্য তা পছন্দ ও মনোনয়ন করেছেন। বিশ্বমানবের একমাত্র এটিই শান্তি ও মুক্তির ধর্ম। এটিই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নতুন দ্বীন প্রবর্তনের অবকাশ নেই। অতএব, কিয়ামত পর্যন্ত দেশ-দেশান্তরে যুগ-যুগান্তরে বর্ণ ও গোত্র-বংশ নির্বিশেষে সবার কাছে এই সুমহান দ্বীনই অনুসৃত ও প্রতিপালিত হবে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘আমি আপনার প্রতি এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছি যার মধ্যে প্রতিটি বস্তুর স্পষ্ট বর্ণনা বিদ্যমান’ (সূরা নাহল-৮৯)।
এই আয়াত থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট বোঝা যায়, মানবজীবনের প্রয়োজনীয় সব দিকনির্দেশনা পবিত্র কুরআনে বিদ্যমান রয়েছে। মুজতাহিদ ও ইমামরা কুরআন-সুন্নাহ গবেষণা করে মানবজাতির জীবন-যাপন পদ্ধতির পরিপূর্ণ সমাধান তুলে ধরেছেন আমাদের সামনে। এই জীবনব্যবস্থায় কোনো অপূর্ণতার কথা চিন্তা করা যায় না। মানুষের ঈমান-আকিদা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক জীবনের মূলনীতিসমূহ বা নীতিমালা অথবা বিধানগুলো ইসলামে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে; যা প্রকৃতপক্ষেই পরিপূর্ণ এবং অতুলনীয়। সুন্দর ও কল্যাণকর। এতে নতুনভাবে কোনো কিছুর সংযোজন বা বিয়োজন করার কোনো অবকাশ নেই।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম (সূরা মায়িদা-৩)।
আল্লাহ তায়ালার কাছে একমাত্র ইসলামই সত্য-সঠিক ধর্ম হিসেবে মনোনীত। তাই তিনি বিশ্ববাসীকে সম্বোধন করে পবিত্র কুরআনের অন্যত্র ইরশাদ করেছেন- ‘তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না (সূরা আল-ইমরান-১০২)। ঘোষিত হচ্ছে- ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম’ (সূরা আল-ইমরান-১৯)।


রাসূলে কারিম সা: বলেন, ‘কুরআন হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। আর মুহাম্মদ সা: প্রবর্তিত দ্বীন ইসলামই হচ্ছে মানুষকে হিদায়াত দানে সহায়ক পথগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম পথ।’
ইসলাম হচ্ছে সব দ্বীন-ধর্মের মাঝে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। ইসলামই হচ্ছে আগেকার সব ধর্ম ও মতবাদকে রহিতকারী। কেননা, পবিত্র কুরআনে প্রিয় নবী সা:-কে খাতামুন নাবিয়িন বলা হয়েছে। অর্থাৎ- তিনি হলেন সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোনো নতুন নবীর আগমন ঘটবে না। আর তাঁর পরে যদি কোনো নতুন নবী-রাসূলের আগমন না ঘটে, তাহলে তাঁর আনীত দ্বীন-ইসলামই কিয়ামত পর্যন্ত একমাত্র মনোনীত ধর্ম হিসেবে চালু থাকবে।
কেননা, নবী-রাসূলরা তো আসলে সত্য ধর্ম নিয়েই আসেন। অন্যান্য ধর্মকে ইসলাম রহিত করে দিয়েছে। এমনকি তাওরাত-ইঞ্জিলে ইহুদি-নাসারাদের সম্বোধন করে বলা হয়েছে, ‘তোমরা হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি ঈমান আনো। ইসলামের পরে কেউ যদি কোনো নতুন ধর্মকে খাঁটি বিশুদ্ধ ধর্ম বলে দাবি করে, তবে তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না।’
ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম ধর্ম হওয়ার কারণ, ইসলাম দুনিয়ার সব প্রকার বাতিল মতবাদের মূলোৎপাটন করে তদস্থলে সঠিক মূলনীতির ভিত্তি স্থাপন করেছে। তা ছাড়া ইসলাম সাম্য মৈত্রীর যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, অন্য সব ধর্ম তা বিকাশে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। মুনিব-গোলাম একই আরোহণে চড়ে পাশাপাশি বসে ঘুরে বেড়ানো কিংবা উভয়ে একই সাথে বসে একই দস্তরখানায় খানা খাওয়ার ‘আদর্শ বিধান’ একমাত্র ইসলামই সমর্থন করে। পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্মে এ ধরনের সাম্য-মৈত্রীর নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না।


ইসলাম পূর্বযুগে নারীরা তাদের সব অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। তাদের শুধু দাসী-বাঁদি ও ভোগ্যবস্তু মনে করা হতো। ইসলাম এসে নারীকে সন্তানের মা ও গৃহের রানী হওয়ার মর্যাদা দান করেছে। শুধু তাই নয়, বরং তাদের সব প্রকার হৃত অধিকারকে পুনরুদ্ধার করেছে। বিশ্বমানবতাকে সর্বশীর্ষে সমাসীন করেছে। দুনিয়ার সব ভুল মতবাদকে (যেগুলো মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল) চিরতরে ধ্বংস করে অপূর্ব সুখ-শান্তির প্রতিশ্রুত, সত্য ও ন্যায়ের মূলনীতি বাস্তবায়ন করেছে। ফলে জগতের সর্বত্র শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পৃথিবীর মানুষ মূর্খতার অতল গহ্বরে হাবুডুবু খাচ্ছিল, ইসলাম এসে তাদের সেই বিভীষিকাময় মিথ্যা ও মূর্খতার দুর্গন্ধময় গর্ত থেকে উদ্ধার করে একটি আলোময় জনপদে দাঁড় করিয়েছে। শহরবাসীর মতো তাদের সুশিক্ষিত ও সুসভ্য জাতিতে পরিণত করেছে।
সারমর্ম হচ্ছে- ইসলাম হলো একটি সহজ-সরল, সর্বজনীন, বিশ্বজনীন ও চিরন্তন পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলাম হচ্ছে শান্তি ও মুক্তির ধর্ম। ইহলৌকিক শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তি অর্জনের মহান লক্ষ্যে সব প্রকার ভ্রান্ত মতবাদ চিরতরে পরিহার করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করা।
লেখক: কলাম লেখক, মজলিশপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া


আরো সংবাদ



premium cement