সিয়াম বা রোজার ফজিলত ও তাৎপর্য
- মাওলানা এম এ হালিম গজনবী এফসিএ
- ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
রমজান মাস আগত। রমজান মাসে ‘রোজা’ বা ‘সিয়াম’ বা ‘সাওম’ নামক ইবাদত ফরজ। প্রমাণ আল্লাহর বাণী- অর্থ : ‘হে মু’মিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়াম বা রোজার বিধান দেয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেয়া হয়েছিল, যাতে করে তোমরা মুত্তাকি বা আল্লাহভীরু হতে সক্ষম হও’ (সূরা : আল-বাকারা : ১৮৩)। প্রত্যেক মু’মিন-মুসলিম, নারী-পুরুষের ওপর রোজা বা সাওম নামক ইবাদত ফরজ। রমজান মাস সর্বোত্তম মাস। এ মাসে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ থাকে ও জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা থাকে। রোজার মাসে ২০ রাকাত সালাতুত তারাবিহ বা তারাবিহ নামাজ ইশা সালাতের পরে আদায় করা হয়, এমনকি ৩০ পারা কুরআন খতমের মাধ্যমে অধিকাংশ জামে মসজিদে। এ সালাত শেষে একটি ব্যতিক্রমধর্মী দোয়া আল্লাহর কাছে পেশ করা হয় যথা- ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান নারি ইয়া খালিকাল জান্নাতি ওয়ান্নারি বি রাহ’মাতিকা ইয়া আজিজু ইয়া গাফ্ফার ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার ইয়া রাহিমু ইয়া জাব্বার ইয়া খালিকু ইয়া র্বারু। আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান্নার বি রাহমাতিকা ইয়া মুজিরু ইয়া মুজিরু ইয়া মুজিরু ইয়া আর হা’মার রাহি’মিন’। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমরা ভিক্ষা চাই জান্নাত এবং আপনার (হে জান্নাত এবং জাহান্নামের স্রষ্টার) কাছে সদয় ভিক্ষা চাই জাহান্নামের শাস্তি হতে। হে পরাক্রমশালী! হে ক্ষমাকারী! হে সুমহান দাতা! হে অপরাধ বা দোষ গোপনকারী! হে দয়ালু! হে অপরাজেয়! হে স্রষ্টা! হে পরম উপকারী। হে আল্লাহ! আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে দয়া করে মুক্তি দাও হে দয়ালু, হে মুক্তিদাতা! হে মুক্তিদাতা! হে মুক্তিদাতা’। আমীন।
উপরোক্ত দোয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং করা হয় অতুলনীয় গুরুত্বপূর্ণ সুসময়ে। তাই আসুন আমরা এই দোয়াটি মুখস্থ করে সর্বান্তকরণে, সবিনয়ে, সজল নয়নে মহান আল্লাহর কাছে পেশ করি। তিনি দয়া করে আমাদের এই দোয়াটি যদি কবুল করেন তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা চিরশান্তিময় জান্নাতবাসী এবং অগ্নিদগ্ধ অবর্ণনীয় কঠিন শাস্তিময় জাহান্নাম থেকে মুক্ত। দোয়া কবুল সম্পর্কে দয়ালু আল্লাহ তায়ালার বাণীটি প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, অর্থ : ‘হে গোলামগণ! আমাকে ডাকো বা দোয়া করো, (নিশ্চিত থাকো) আমি (ক্ষমাশীল ও দয়ালু আল্লাহ) তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো অর্থাৎ তোমাদের দোয়া কবুল করব’ (সূরা : আল-মু’মিন : ৬০)। কী চমৎকার আশ্বাস বাণী! অসীম দয়ালু আল্লাহর তার সৃষ্ট গোলামদের জন্য। সত্যিই পরিতাপের বিষয় আমরা গোলামদের অধিকাংশই অসীম দয়ালু আল্লাহকে চিনতে, জানতে বা অনুধাবন করতে পারলাম না যদিও সীমাহীন শক্তিধর আল্লাহর অসংখ্য-অগণিত অত্যাশ্চর্য নিদর্শন (আশীর্বাদ এবং অভিশাপের) সর্বকালে সর্বত্র বিরাজমান।
রোজা তাৎপর্যপূর্ণ ফজিলতের ইবাদত, প্রমাণ রাসূল সা:-এর বাণী- অর্থ : ‘যিনি রোজা নামক ইবাদত যথাযথভাবে পালন করেন তার জন্য রয়েছে দু’টি মহানন্দের সুসংবাদ। প্রথমত, মহানন্দ সারাদিন অভুক্ত থাকার পর সূর্যাস্তের পর যখন ইফতার বা পানাহার করেন এবং দ্বিতীয়ত, মহানন্দ যখন পরকালে আল্লাহর সাক্ষাৎ পাবেন। আল্লাহর সাক্ষাৎ পাওয়ার ওপর কোনো মহাআনন্দ বা সুসংবাদ আছে কি? নিশ্চয়ই নয়। আল্লাহর সাক্ষাৎ পাওয়ার উপলক্ষে যে মহানন্দ তার ওপর কি কোনো মহানন্দ আছে? নিশ্চয়ই নয়। এমনকি জান্নাতে প্রবেশ লাভেও অনুরূপ মহানন্দ নেই বলে আমি মনে করি। আল্লাহর দর্শন লাভ সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ আমাদের জ্ঞাত করেছেন। আল্লাহর বাণী- অর্থ : ‘যে আরজু বা কামনা-বাসনা করে তার প্রভুর সাক্ষাৎ বা দর্শন লাভ করার সে যেন অনবরত সৎ কাজ করে এবং আমার (আল্লাহর) দাসত্বে বা ইবাদতে আদৌ কাউকে শরিক বা ‘শিরক’ না করে’ (সূরা : আল-কাহফ : ১১০)। লক্ষণীয়, আল্লাহর দর্শন লাভ সর্বোচ্চ মহানন্দ ও সর্বোচ্চ মহাসফলতা যা অর্জন করেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী আমাদের প্রিয়তম রাসূল সা: মিরাজে তার জীবদ্দশায়। ইনশাআল্লাহ আমরা রোজা পালনকারীরা আল্লাহর দর্শন অর্জন করব জান্নাতে আমাদের মৃত্যুর পর। তা ছাড়া রোজা নামক ইবাদত পালনকারী ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবেন ‘মুত্তাকি’ বা সর্বোত্তম আল্লাহভীরু আল্লাহর উপরোক্ত ঘোষণা মতে।
যেকোনো মানুষের জন্য ‘তাকওয়া’ বা আল্লাহভীরুতা সর্বশ্রেষ্ঠ সৎগুণ, প্রমাণ আল্লাহর বাণী- অর্থ : ‘এ কিতাব বা কুরআনে কোনোই সন্দেহ নেই। এ কিতাব হিদায়েত দান করেন বা সঠিক পথ বা জান্নাতের পথ প্রদর্শন করেন ‘মুত্তাকিগণকে’ যাদের বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহ ও অদৃশ্য বিষয়কে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা, সালাত কায়েম বা আদায় করা এবং জাকাত পরিশোধ করা। তাছাড়া যারা বিশ্বাস করবে যা আপনার (রাসূল সা:) ওপর এবং পূর্ববর্তী রাসূলগণের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে, যথা : কুরআন, তাওরাত, ইঞ্জিল, জাবুর ইত্যাদি, সর্বোপরি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে পরকাল। এই গুণাবলিসম্পন্ন লোকেরা হিদায়েত বা সঠিক পথ প্রাপ্ত তাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে এবং পরিণামে হবে সর্বোচ্চ সফল অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশ’ (সূরা : আল-বাকারা : ২-৫)। বিশেষভাবে লক্ষণীয়, এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু ৩০ পারা বিশিষ্ট কুরআনের প্রথম পারার শুরুতেই উল্লেখিত। আমাদের অবশ্যই স্মরণীয় এবং করণীয়- রোজা বা সিয়াম সাধনা হচ্ছে তাকওয়া লাভের উৎস এবং তাকওয়া হচ্ছে জান্নাত লাভের উৎস।
সম্মানিত মু’মিন ভাই ও বোনেরা! আসুন আমরা পবিত্র রমজান মাসে রোজা বা সিয়াম নামক ইবাদতটি অবশ্যই নিয়মিত ও সঠিকভাবে পালন করি এবং ইনশাআল্লাহ পরিণত হই মুত্তাকি হিসেবে, অনুভব করতে থাকি দুটো মহানন্দ প্রথমটি- পার্থিব জীবনে সূর্যাস্তের পর ইফতার বা পানাহার করে এবং দ্বিতীয়টি- পরকালে জান্নাতে আল্লাহর দর্শন পাওয়ার মহানন্দ অর্জন করে।
হে সীমাহীন দয়ালু আল্লাহ! দয়া করে বিশ্বের সব সক্ষম মু’মিন মুসলিমগণকে তাওফিক দান করুন তারা যেন পবিত্রতম রমজান মাসে নিয়মিত ও সঠিকভাবে সিয়াম সাধনা করতে পারে সত্যিকার মুত্তাকি হওয়ার স্বার্থে এবং মহাসৌভাগ্যবান হতে পারে আপনার দর্শন যথাসময়ে প্রাপ্ত হয়ে। আমীন।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা