২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শাবান ১৪৪৬
`

জুমার দিন ফজিলতপূর্ণ যে কারণে

-

হাদিসের ভাষ্য মতে জুমা মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। মুসলমানরা এ দিনে সমস্ত কাজ থেকে বিরত হয়ে মসজিদের উদ্দেশে রওনা হয়। পরিচিত অপরিচিত অনেকের সাথেই দেখা-সাক্ষাৎ ও কথা-বার্তা হয়। মুসলমানদের সাপ্তাহিক এ মিলন অন্যরকম এক আনন্দ নিয়ে আসে। তবে এ আনন্দ ছাড়া আরো অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো এ দিনের মর্যাদা বৃদ্ধি করে যেমন- হাদিসে এ দিনটিকে সমস্ত দিনের সর্দার বলা হয়েছে। আবু লুবাবা রা: থেকে বর্ণিত- ‘নিশ্চয় জুমার দিন হলো সমস্ত দিনের সর্দার। জুমার দিন আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে মহান দিবস। আবু হুরায়রা রা:-এর হাদিসেও উল্লিখিত হয়েছে যে, সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। বিষয়টি আরো একাধিক হাদিসে বিবৃত হয়েছে। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে এসেছে, আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘সূর্য যে সব দিন উদিত হয় অর্থাৎ দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম দিন হলো জুমার দিন। এই দিন আদম আ:-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। ওই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। কিয়ামতও সংঘটিত হবে এ দিনেই’ (মুসলিম-৮৫৪)।
এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, জুমার দিনই বেশি ফজিলতপূর্ণ। তাছাড়া এ দিনেই আল্লাহ তায়ালার দরবারে বান্দার আমল পেশ করা হয়। আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলে কারিম সা: বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অর্থাৎ জুমার রাতে আদম সন্তানের আমল (আল্লাহর সামনে) পেশ করা হয়। তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের আমল কবুল করা হয় না’ (মুসনাদে আহমাদ-১০২৭২)।
হাদিস গবেষণা করে এ দিনের একটি বিশেষ নাম সম্পর্কে জানা যায় সেটি হলো ‘ইয়াউমুল মাজিদ’। জুমার দিনের একটি বিশেষ ফজিলত হলো- জান্নাতবাসীদের জন্য এ দিনটি মহা আনন্দ ও বিশেষ প্রাপ্তির। জান্নাতে প্রতি জুমার দিন বিপুল আনন্দ ও প্রাপ্তির সমাহার ঘটবে। আল্লাহ তায়ালার বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নবী-রাসূল, নেককার বান্দাদের মিলন-উৎসব হবে। সর্বোপরি জান্নাতিরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দিদার লাভে ধন্য হবে, যা হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ নিয়ামত। তাই ফেরেশতারা জুমার দিনকে স্মরণ করেন ‘ইয়াউমুল মাজিদ’ তথা অনন্য প্রাপ্তিদিবস নামে।
আনাস ইবনে মালেক রা: বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘জিবরাইল আ: আমার কাছে এসেছেন শুভ্র আয়নার মতো একটি জিনিস নিয়ে। আয়নাটিতে একটি কালো দাগ। আমি বললাম, এটা কী? জিবরাইল আ: বললেন, এটি হলো জুমার দিন। এ দিনকে আল্লাহ তায়ালা আপনার এবং আপনার উম্মতের জন্য ঈদের দিন বানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আপনারা ইহুদি ও নাসারা থেকে অগ্রগামী। (তাদের বিশেষ ইবাদতের দিন যথাক্রমে শনিবার ও রোববার, যা জুমার দিনের পরে আসে) এই দিনে একটা সময় আছে, যে সময় বান্দা আল্লাহর কাছে যে কল্যাণই প্রার্থনা করে আল্লাহ তাকে তা দান করেন। নবীজী সা: বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করলাম, জুমার দিনকে কালো দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা হলো কেন? জিবরাইল আ: জবাব দিয়েছেন, এই যে কিয়ামত দিবস তা এ দিনেই সংঘটিত হবে। আখিরাতে জুমার দিনকে আমরা ‘ইয়াউমুল মাজিদ’ নামে স্মরণ করব। নবীজী সা: বলেন, ‘আমি প্রশ্ন করলাম, ইয়াউমুল মাজিদ কী?
জিবরাইল আ: উত্তর দেন, জান্নাতে আল্লাহ তায়ালা প্রশস্ত ও সুগন্ধময় একটি উপত্যকা বানিয়েছেন এবং এতে তিনি শুভ্র মেশকের একাধিক টিলা স্থাপন করেছেন। জুমার দিন এলে আল্লাহ তায়ালা এ উপত্যকায় অবতরণ করবেন। তখন সেখানে নবীদের জন্য স্বর্ণের মিম্বরসমূহ রাখা হবে, শহীদদের জন্য মুক্তার অনেক চেয়ার পাতা হবে এবং জান্নাতি হুরেরা আপন আপন কক্ষ থেকে অবতরণ করবে। এরপর সবাই মিলে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও মাহাত্ম্যের স্তুতি গাইতে থাকবে।
জিবরাইল আলাইহিস সালাম আরো বলেন, এরপর আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করবেন, (হে ফেরেশতারা!) আমার বান্দাদের (বিশেষ পোশাক) পরিধান করাও। সে অনুযায়ী তাদের সজ্জিত করা হবে। তখন আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দেবেন, আমার বান্দাদের জন্য (বিশেষ) খাদ্য পরিবেশন করো। আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক তাদের জন্যই বিশেষ ভোজনের ব্যবস্থা করা হবে’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস-৪২২৮)।
জুমার দিন গুনাহগারদের জন্যও এক বিশেষ দিন। কেননা, এ দিনে আল্লাহ তায়ালা এক সপ্তাহের গোনাহ মাফ করে দেন। আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘এক জুমা থেকে আরেক জুমা মধ্যবর্তী সময়ের (গোনাহের) জন্য কাফফারা (পাপমোচনকারী), যদি কবিরা গোনাহ না করা হয়’ (মুসলিম-২৩৩)।
আরেক হাদিসে এসেছে- পেছনের ১০ দিনের গোনাহ মাফ হয়ে যায়। আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘জুমার দিন যে ব্যক্তি মাথা ধুয়ে গোসল করে, এরপর উত্তম আতর ব্যবহার করে এবং তার জামাগুলো থেকে ভালো জামাটি পরিধান করে, তারপর নামাজের উদ্দেশে বের হয়, (মসজিদে গিয়ে এক সাথে থাকা) দু’জনের মধ্যে গিয়ে বসে না, অতঃপর মনোযোগের সাথে ইমামের খুতবা শোনে, ওই ব্যক্তির এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়’ (ইবনে খুজাইমা, হাদিস-১৪০৩)।
লেখক : মুদাররিস, জামিয়া মাহমুদিয়া সিকদারবাগ মাদরাসা, সাভার, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement