২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শাবান ১৪৪৬
`

দ্বীনের জন্য খাদিজা রা:-এর অবদান

-

হজরত খাদিজা রা: ছিলেন রাসূল সা:-এর প্রথম স্ত্রী, যিনি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর কাছ থেকে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য কোনো পুরুষের হয়নি। কারণ, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য দিয়েছিলেন হজরত খাদিজা রা:-কে। শুধু প্রথম ইসলাম গ্রহণই নয়; বরং হজরত খাদিজা রা: সর্বপ্রথম অজুু করেছিলেন, সালাত আদায় করেছিলেন, প্রথম দান করেছেন এমনকি তিনিই রাসূল সা:-এর একমাত্র স্ত্রী যিনি সন্তান জন্মদানের গৌরব অর্জন করেছিলেন। উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে দুনিয়াতে বেহেশতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন।
আল্লাহ তায়ালা খাদিজা রা:-কে পাঠিয়েছিলেন নিয়ামতস্বরূপ। কারণ, রাসূল সা:-এর সবচেয়ে কঠিন সময়ে তিনি সাহস জুগিয়েছিলেন। যখন মক্কার কাফেররা রাসূল সা:-এর ওপর চাপ প্রয়োগ করছিল, তখন খাদিজা রা:-এর কাছ থেকে দৃঢ় সমর্থন পেয়েছিলেন উপাসনা না করার জন্য। মুসনাদ ইবনে হাম্বলের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, খাদিজা রা: এক প্রতিবেশী এক রাতে হজরত মুহাম্মদ সা:-কে বলতে শুনলেন, ‘হে খাদিজা! আল্লাহর কসম, আমি কখনো লাত উজ্জার পূজা করব না, আল্লাহর কসম, কখনোই তাদের অর্চনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ তখন খাদিজা রা: বলেন, ‘দূর হোক লাত উজ্জা। লাত উজ্জার বিষয়ে আলোচনাই করবেন না’ (মুসনাদে আহমদ-১৭৪৮৭)।
প্রথম ওহি অবতীর্ণের আগে রাসূল সা: অস্বাভাবিক কিছু অভিজ্ঞতা লাভ করেন। বুখারিতে বর্ণিত আছে- ‘রাসূল সা: নবুয়ত লাভের আগে ছয় মাস সত্য স্বপ্ন দেখেছেন।’ এসব ঘটনা রাসূল সা: খাদিজা রা:-কে বর্ণনা করলে তিনি তাকে সমর্থন করেন এবং সাহস জোগান। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, ‘মাঝে মাঝে রাসূল সা: একটি আলো দেখতেন অথবা সালাম ধ্বনি শুনতেন।’ খাদিজা রা: রাসূল সা:-কে বলেন, ‘হে আবদুল্লাহর সন্তান! আল্লাহ তায়ালা কখনো আপনার অমঙ্গল করবেন না।’
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে- রাসূল সা: খাদিজা রা:-কে বললেন, ‘আমি যা স্বপ্নে দেখি তা সত্যে পরিণত হয়।’ খাদিজা রা: বলেন, ‘এটা ভালো সংবাদ, আপনার সাথে ভালো বৈ খারাপ কিছু ঘটতে পারে না।’ বিখ্যাত তাবেয়ি ইমাম যুহরি বলেন, ‘রুকাইয়ার জন্মের সময় থেকে মুহাম্মদ সা: নির্জনতা পছন্দ শুরু করেন, হেরাগুহায় যাওয়া শুরু করেন।’
অর্থাৎ সে সময় বিভিন্ন কারণে কোরাইশদের সঙ্গ তার পছন্দ হচ্ছিল না। সে সময় রাসূল সা: হেরা পর্বতের গুহায় বহু রাত কাটিয়েছেন। হজরত খাদিজা রা: রাসূল সা:-কে খাবার প্রস্তুত করে দিতেন। খাবার শেষ হলে তিনি মক্কায় ফিরে আসতেন, কাবা শরিফ তাওয়াফ করতেন অতঃপর খাদিজা রা:-এর ঘরে ফিরে যেতেন। হজরত খাদিজা রা: অনেক সময় খাবার নিয়ে হেরাগুহায় রাসূল সা:-এর কাছে যেতেন। কখনো কখনো তিনি হেরাগুহায় রাসূল সা:-এর সাথে অবস্থান করেছেন। হেরাগুহা থেকে খাদিজা রা:-এর বাড়ির দূরত্ব প্রায় দুই ঘণ্টার পথ। খাদিজা রা:-এর ঘর ছিল কাবার পাশে। সেখান থেকে তিনি হেরাগুহায় পৌঁছাতেন। রাসূল সা: এমন কঠিন মুহূর্তে হজরত খাদিজা রা:-কে তার পাশে পেয়েছেন। আর খাদিজা রা: রাসূল সা:-এর উপর আস্থা রেখেছেন,তাকে প্রেরণা দিয়েছেন। এটিই খাদিজা রা:-এর অনিন্দ বৈশিষ্ট্য। এছাড়া রাসূল সা:-এর ওপর যখন প্রথম ওহি নাজিল হয়, তিনি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে খাদিজা রা:-এর কাছে এলে তিনি তাকে চাদরাবৃত করেন। তাকে সাহস জোগান, যা আমরা সবাই অবগত।
হজরত খাদিজা রা: ছিলেন আরবের অন্যতম ধনাঢ্য মহিলা। সিরিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে তার বাণিজ্য চলত। তার সমুদয় সম্পত্তি ইসলাম প্রচারের জন্য রাসূল সা:-কে দিয়ে দেন। খাদিজা রা:-এর সমস্ত সম্পত্তি রাসূল সা: দান করে দিতে থাকেন। এতে খাদিজা রা: তাকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিলেন। নবুয়তের সপ্তম বছরে কুরাইশরা যখন রাসূল রা:-এর গোত্র বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিবকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করে শিয়াবে আবু তালিবে বন্দী করে তখন মক্কার এই সম্ভ্রান্ত মহিলা খাদিজা রা:ও সেখানে প্রায় তিন বছর বন্দী ছিলেন। তারা খাদ্যাভাবে অনেক সময় গাছের পাতা খেয়েও দিনাতিপাত করেন।
অর্থাৎ খাদিজা রা: ইসলামের পূর্ব থেকে রাসূল সা:-কে যেভাবে অভয়, অনুপ্রেরণা ও সাহায্য করে এসেছেন তা অতুলনীয়। তাই তো খাদিজা রা:-এর প্রতি রাসূল সা:-এর গভীর অনুভূতি প্রকাশ পায়। খাদিজা রা:-এর জীবদ্দশায় তিনি কোনো স্ত্রী গ্রহণ করেননি। তিনি অন্য উম্মুল মুমিনিনদের থেকে অধিক মর্যাদাবান। আর তাই স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা খাদিজা রা:-কে সালাম পাঠিয়েছেন এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
একজন সম্ভ্রান্ত নারী হয়েও তিনি দ্বীনের জন্য যতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা বিশ্বের প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য এক অতুলনীয় আদর্শ।
লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement