২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ শাবান ১৪৪৬
`

প্রেমময় এক ইবাদত

-

আল্লাহ তায়ালা বড় চমৎকার করে এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। নানা রকম সৌন্দর্যময় আর নয়নাভিরাম বস্তু দিয়ে এই পৃথিবী সাজিয়েছেন। আপন রহমত এবং দয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে সুন্দর এই পৃথিবীতে তিনি মানুষকে পাঠিয়েছেন। নিজের ‘খলিফা’ (প্রতিনিধি) হিসেবে। যারা আপন রবের ইবাদত করবে, তার সন্তুষ্টি মোতাবেক জীবন পরিচালনা করবে। ইরশাদ হয়েছে-‘আমি মানুষ ও জিনকে কেবল এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে।’ (সূরা জারিআত-৫৬)
আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি মানুষ প্রতিনিয়ত আল্লাহ তায়ালার রহমত ও দয়ার মুখাপেক্ষী। শুধু মানুষ নয়, প্রতিটি বস্তুই আল্লাহ তায়ালার করুণা ভিখারী। আল্লাহর রহমত, দয়া ও করুণা ছাড়া কারো জন্য এই পৃথিবীতে এক মুহূর্তও টিকে থাকা সম্ভব নয়।
আল্লাহ তায়ালার রহমত, দয়া ও করুণা লাভের কী উপায়? কোনো পন্থা অবলম্বন করলে আল্লাহর রহমতের সাগরে অবগাহন করা যাবে? কোন সে আমল যার বরকতে মানুষের জীবন রহমতের স্নিগ্ধ জলধারায় সিক্ত হয়?
হ্যাঁ, আজ আমরা এমন একটি বরকতময় রহমতে ভরা আমল নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ, যে আমলটি অফুরন্ত বরকত ও রহমতের আধার। যে আমল মানুষের জীবনকে আলোয় ভরে দেয়। একরাশ স্নিগ্ধতা তার জীবনজুড়ে বিরাজ করে। একপশলা রহমের বৃষ্টি তার হৃদয় ভূমিকে সিক্ত করে রাখে।
কি সেই বরকতময় আমল? দরুদ শরিফ। আরবিতে যাকে বলে আসসালাত আলান নাবিয়ি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ রাসূল, আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা নিবেদন করে দরুদ প্রেরণ করা।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর প্রতি দরুদ প্রেরণ করা আল্লাহ তায়ালার কাছে খুবই প্রিয় একটি আমল। এতে করে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর প্রতি দরুদ প্রেরণ করা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ। ইরশাদ হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ পাঠান। হে মুমিনগণ! তোমরাও তার প্রতি দরুদ পাঠাও এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও।’ (সূরা আহজাব-৫৬)
আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে সুস্পষ্টভাবে মুমিনদেরকে রাসূলুল্লাহ সা:-এর প্রতি দরুদ প্রেরণের নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই প্রত্যেক মুমিনের জন্য অবশ্য পালনীয় হচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ সা:-এর প্রতি হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দরুদ প্রেরণ করা। দরুদ প্রেরণ করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। দরুদ প্রেরণকারীর ওপর তিনি রহমত বর্ষণ করেন।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত- তিনি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছেন, নবীজি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত নাজিল করেন।’ (মুসলিম-১/৩০৬)
দরুদ প্রেরণের মাধ্যমে কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য অর্জিত হবে।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটে থাকবে, যে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ প্রেরণ করে।’ (তিরমিজি-২/২৮৪, ইমাম তিরমিজি রহ. হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন)
জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ প্রেরণ করা উচিত। এটি রাসূলুল্লাহ সা:-এর পবিত্র নির্দেশনা। হজরত আউস ইবনে আউস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে জুমার দিন। এ দিন তোমরা বেশি বেশি করে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করো।’ (আবু দাউদ-১/১০৪৮)
রাসূলুল্লাহ সা:-এর পবিত্র নাম উচ্চারিত হলে দরুদ শরিফ পড়া প্রতিটি মুমিনের প্রতি ভালোবাসার দাবি। একজন মুমিন তার প্রেমাস্পদ রাসূলুল্লাহ সা:-এর নাম শুনলেই একবুক ভালোবাসা নিয়ে নবীজির ওপর দরুদ পাঠ করবে- এমনটিই কাম্য। কিন্তু এরপরও যারা প্রেমাস্পদের নাম শুনে দরুদ পড়ে না তিনি তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। তাদেরকে ‘কৃপণ’ বলে অভিহিত করেন।
হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক (ধ্বংস হয়ে যাক) যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হয় অথচ আমার উপর দরুদ পাঠ করে না।’ (তিরমিজি-৫/৩৫৪৫, ইমাম তিরমিজি রহ. হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন)
হজরত আলী রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘ওই ব্যক্তি কৃপণ যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হয় অথচ সে আমার উপর দরুদ পাঠ করে না।’ (তিরমিজি-৫/৩৫৪৬, ইমাম তিরমিজি রহ. হাদিসটিকে ‘হাসান সহিহ’ বলে সাব্যস্ত করেছেন)
রাসূলুল্লাহ সা: প্রত্যেক মুসলমানের কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তানাদি এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও বেশি প্রিয়। নবীজিকে সর্বোচ্চ ভালোবাসা উপহার দেয়া ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সে ভালোবাসার দাবি হচ্ছে- প্রিয় মানুষটির বরকতময় পবিত্র নামটি যেখানেই শুনতে পাবে হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ও ভালোবাসা উজাড় করে দরুদ শরিফ পাঠ করবে। এতে নবীজি সা:-এর প্রতি তার ভালোবাসার মাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকবে। তার প্রতি আল্লাহ পাকের রহমত-বরকত অঝোর ধারায় বইতে থাকবে। তার জীবনবৃক্ষটি ফলে ফুলে সুশোভিত হয়ে উঠবে। সর্বোপরি আল্লাহর রহমতে চিরসাফল্যের ঠিকানা জান্নাতের সুনির্মল পথে এগিয়ে যাওয়া তার জন্য সহজ হবে।
লেখক : খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর।


আরো সংবাদ



premium cement