আলেম-ওলামাদের মর্যাদা
- মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
আলেম-ওলামা দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তারা সাধারণ কোনো মানুষ নয়। তাদের সাথে সম্পর্ক সরাসরি সারা বিশ্বের প্রতিপালক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। কুরআন-হাদিসের ইলম অর্জনকারীই হলেন আলেম। আলেম-ওলামাদের সম্মান স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দিয়েছেন। আলেম-ওলামাদের মর্যাদা সর্বোচ্চ। তারা হলেন মাথার তাজ। তাদেরকে সম্মান করা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। তাদেরকে সম্মান করা মানে দ্বীন ইসলাম আর ধর্মকে সম্মান করা।
আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নির্দেশ মান্য করো, অনুসরণ করো রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বসম্পন্ন (ন্যায়পরায়ণ শাসক ও আলেম) তাদের।’ (সূরা নিসা-৫৯) অন্য সূরায় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘(হে নবী) আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’ (সূরা জুমার-৯) আল কুরআনে রয়েছে- ‘তোমাদের যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।’ (সূরা মুজাদালাহ-১১)
আলেম-ওলামারা হচ্ছেন পৃথিবীর বুকে হেদায়েতের বাতিস্বরূপ। এই হেদায়েতের বাতি যে দিন বন্ধ হয়ে যাবে, সে দিন পৃথিবী অজ্ঞতার আঁধারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে রাসূল সা: বলেছেন, ‘উলামাদের দৃষ্টান্ত ওইসব তারকার মতো যাদের দ্বারা স্থলে ও জলের অন্ধকারে পথের দিশা পাওয়া যায়। আর যখন তারকাগুলো আলোহীন হয়ে যায় তখন পথচারীর পথ হারানোর আশঙ্কা থাকে।’ (মুসনাদে আহমাদ-৩/১৫৭) আবু মুসা আশআরি রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘বৃদ্ধ মুসলমান, কুরআনের আদব রক্ষাকারী ও কুরআন অনুযায়ী আমলকারী হাফেজ এবং ন্যায়পরায়ণ বাদশার সম্মান করা মহান আল্লাহর সম্মান করার অন্তর্ভুক্ত।’ (সুনানে আবু দাউদ-৪০৫৩)
সহিহ হাদিসে এসেছে, ‘জমিনে আলেমদের অবস্থান আসমানের নক্ষত্রতুল্য। যখন মানুষ তা দেখে, পথ চলে। যখন তা অদৃশ্য হয়ে যায়, অস্থির হয়ে পড়ে।’ (বায়হাকি-১/৩৫৪)
হাসান বসরি রহ. আলেম-ওলামাদের মর্যাদা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘আলেমরা না থাকলে মানুষ গবাদিপশুর তুল্য হয়ে যেত।’
আলেম-ওলামারা আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার কাউকে ভয় করেন না। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল আলেমরাই আল্লাহকে ভয় করে।’ (সূরা ফাতির-২৮)
হাজারো বাধা বিপত্তি, জেল-জুলুম এমনকি ফাঁসির রশিকেও আলেম-ওলামা ও পীর মশায়েখরা তোয়াক্কা করেন না। তারা জালিমদের কাছে মাথা নত করেন না। যার প্রমাণ মিলেছে অতীত ও বর্তমানে।
আলেম-ওলামারা হচ্ছেন নবী-রাসূলদের উত্তরসূরি। আলেম-ওলামাদের কটাক্ষ করা এবং তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা মানে নবী-রাসূলদের অপমানিত করা। আলেম-ওলামা বিদ্বেষীদের পরিণাম অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সাথে দুশমনি করবে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম।’ (বুখারি-৬৫০২)
হজরত উবাদা ইবনে সামেত রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার আদর্শের ওপর নেই, যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের আলেমদের প্রাপ্য মর্যাদা দেয় না।’ (মুসনাদে আহমাদ-২২১৪৩)
ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রহ: বলেন, ‘আলেমেদের গোশত বিষাক্ত, যে তার ঘ্রাণ নেয় অসুস্থ হয়ে যায়, আর যে তা ভক্ষণ করে মরে যায়!’ (আল মুয়িদ ফি আদাবিল মুফিদ ওয়াল মুস্তাফিদ-৭১)
উম্মতের শ্রেষ্ঠ সম্প্রদায় উলামায়ে কেরামকে গালি দেয়া, ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা আরো জঘন্য কাজ। আফসোস! আমাদের দেশে কিছু নামধারী মুসলমান নাস্তিক মুরতাদরা প্রতিনিয়ত আলেম-ওলামার সাথে বিদ্বেষ পোষণ ও অবমাননা করে যাচ্ছে। আল্লামা জাইনুদ্দিন ইবনে নুজাইম মিসরি রহ. (৯৭০ হি.) বলেন, যদি কেউ কোনো আলেম বা ফকিহকে ব্যক্তিগত কোনো কারণ ছাড়া (আলেম হওয়ার কারণে) গালি দেয়, তাহলে সে কাফির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’ (আল-বাহরুর রায়েক-৫/১৩২)
ইমাম ইবনুল মুবারাক রহ: বলেন, ‘যে আলেমদের অবজ্ঞা করে তার আখিরাত বরবাদ হয়।’ (সিয়ারু আলামিন নুবালা-৪/৪০৮)
ইমাম ইবনে আসাকির আদ দামেশকি রহ. বলেন, ‘আলেমদের গোশত বিষাক্ত। যারা তাদের মর্যাদাহানি করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহর নীতি সুস্পষ্ট। যে ব্যক্তি উলামায়ে কিরামের বদনাম ও ছিদ্রান্বেষণে লিপ্ত হয়ে তাদের জবান চালায়, আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা তার মৃত্যুর আগেই তার কলবকে (অন্তর) মৃত করে শাস্তি দিয়ে থাকেন।’
ইমাম হাফেজ আবুল কাসেম ইবনে আসাকির রহ. বলেন, হে ভাই জেনে রাখো, উলামায়ে কেরামের দোষচর্চা করা বিষাক্ত জিনিস। আল্লাহ তায়ালার অভ্যাস হলো উলামায়ে কেরামের কুৎসা রটনাকারীকে তিনি লজ্জিত করেন (এটি কারো অজানা নয়)। যে ব্যক্তি উলামায়ে কেরামের সমালোচনা করবে আল্লাহ তার মৃত্যুর আগে তার অন্তরকে মৃত বানিয়ে দেবেন। (আত-তিবয়ান ফি আদাবে হামালাতিল কুরআন : ২৭-২৯)
ইমাম আহমদ ইবনু আল আযরায়ি রহ. বলেন, ‘আহলুল ইলম তথা আলেমদের-বিশেষ করে আকাবির আলেমদের কুৎসা রটনা করা, তাদের নামে আক্রমণাত্মক কিছু বলা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।’ (আর রাদ্দুল ওয়াফের-১৯৭)
কুরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, নবীদের পরই আলেমদের স্থান। সাধারণ মানুষের তুলনায় আলেমদের মর্যাদা অনেক ওপরে। সুতরাং আমরা যারা আলেম হতে পারিনি, আমাদের ঈমানি দায়িত্ব হলো আলেমদের যথাযথ সম্মান করা আর তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য থেকে বিরত থাকা। একই সাথে তাদের অন্তর থেকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা।
লেখক : সংগঠক ও কলামিস্ট
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা