১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৯ শাবান ১৪৪৬
`

সম্পর্কের সর্বোত্তম পন্থা হলো সালাম

-

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে একে অপরের সম্পর্ক ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই প্রয়োজন সামাজিক নিয়ম রীতি-নীতি সম্পর্কে জানা। একে অপরকে কিভাবে সালাম জানাতে হবে, সেটিও অবগত হওয়া। মানব জাতিকে ইসলাম এটি শিখিয়ে দিয়েছে, যার ভাষা আকর্ষণীয় এবং পদ্ধতিও চমৎকার। ইসলামের এই চমৎকার সালামের পদ্ধতি অপরিচিত মানুষের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেয়। পরস্পরের মধ্যে মনোমালিন্য দূর করে সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরি করে শত্রুতার পরিবর্তে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে মানুষ একে অপরের কাছে ভালোবাসার সৌরভ খুঁজে পায়। যে বাতাসে শত্রুতার গন্ধ নেই, আছে বন্ধুত্বের আবে হায়াত। যাতে হিংসার লেশমাত্র নেই, আছে পরোপকারের ভিত। ক্ষতির আশঙ্কা নেই, আছে সমূহ কল্যাণ। অহঙ্কারের ভাব নেই, আছে বিনয়ের সমারোহ। মনে কষ্ট দেয়ার কথা নেই, আছে মনজুড়ানোর বাণী। নিঃসন্দেহে সেই অভিবাদনটা হচ্ছে- ‘আস-সালা-মু আলাইকুম’ অর্থাৎ- আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। সব ক্ষেত্রে সালামের প্রচলন করা প্রয়োজন। সালাম আরবি শব্দ, এর অর্থ- শান্তি ও নিরাপত্তা। আস-সালা-মু আলাইকুম অর্থ- হলো আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের সময় যে বাক্য দ্বারা একে অপরের সাথে ভালোবাসা-বন্ধুত্ব, শান্তি-নিরাপত্তা, কল্যাণ ও দোয়া কামনা করে তারই নাম সালাম। ইসলামের আবির্ভাবের পর বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সা: পরস্পরকে আস-সালা-মু আলাইকুম বলে অভিবাদন জানাতে নির্দেশ দেন। সালাম মহান আল্লাহ স্বয়ং প্রবর্তন করেছেন। এ মর্মে নিম্নোক্ত হাদিসটি প্রতিধান যোগ্য। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আদম আ:-কে তার আকৃতিতেই সৃষ্টি করেছেন। তার উচ্চতা ছিল ৬০ হাত। আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করে বললেন, যাও অবস্থানরত ফেরেশতাদের ওই দলকে সালাম করো। আর মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো, তোমার দেয়া সালামের জবাবে তারা কী বলে। কেননা, এটিই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের অভিবাদনের পদ্ধতি। অতঃপর আদম আ: সেখানে গিয়ে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বললেন। জবাবে ফেরেশতারা বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ’ রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তারা ওয়ারাহমাতুল্লাহ অংশটি বৃদ্ধি করে বলেছেন’। সালাম শব্দটি সামাজিক জীবনে এক বিশাল স্থান দখল করে আছে। এর মধ্যে লুকিয়ে আছে এমন এক আকর্ষণীয় চুম্বক শক্তি যা মনের সব প্রকার দূরত্ব, মনের কালিমা ও অনৈক্য দূর করে সবাইকে কাছে এনে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার বন্ধন আবদ্ধ দৃঢ় করে দেয়। নবী করিম সা: শুধু নির্দেশই দেননি; বরং নিজেও বাস্তব জীবনে এর উপর আমল করে উম্মতের সামনে এক অনুস্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি সবাইকে আগেই সালাম দিতেন। তিনি এমন একজন বিশ্বনেতা ছিলেন, যার কথা ও কর্মে ছিল অপূর্ব মিল। তাই আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার মানুষকে লক্ষ্য করে বলেন- ‘রাসূলুল্লাহ-এর জীবনাচরণেই রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।’ (সূরা আহজাব-২১) আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘এক মুসলমানের উপর অন্য মুসলমানের ছয়টি অধিকার তথা কর্তব্য রয়েছে। জিজ্ঞেস করা হলো- হে রাসূল সা:! সেগুলো কী কী? তিনি বললেন- ১. যখন তুমি তার সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তাকে সালাম দেবে; ২. সে যখন তোমাকে দাওয়াত দেবে তখন তুমি তার দাওয়াত কবুল করবে; ৩. সে যখন তোমার কাছে পরামর্শ বা উপদেশ চাইবে, তুমি তাকে সৎপরামর্শ দেবে; ৪. সে হাঁচি দিয়ে যখন ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলবে তুমি তার হাঁচির জবাব দেবে; ৫. সে যখন অসুস্থ হবে তখন তাকে দেখতে যাবে; ৬. সে যখন মারা যাবে তখন তুমি তার সঙ্গী হবে।’ (জানাজা পড়বে ও দাফন করবে) সুতরাং বুঝা গেল, সালাম অপর মুসলমান ভাইয়ের একটি অধিকার।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা যখন বিশেষ শব্দে সালাম প্রাপ্ত হবে তখন তোমাদের প্রতি প্রদত্ত সালামের চাইতে উন্নত ভাষায় সালাম দেবে। অথবা ওই ভাষাতেই উত্তর দেবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি বিষয়ের হিসাব সংরক্ষণকারী।’ (সূরা নিসা-৮৬)
আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম থেকে বর্ণিত- নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন ঘটাও। ক্ষুধার্ত মানুষকে খাদ্য খাওয়াও। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করো। তুমি রাতে ছালাত আদায় করো, মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’
হাশরের ময়দানে বিচার-ফয়সালা হয়ে যাওয়ার পর ভালো কাজের জন্য একদল যাবে জান্নাতে আর মন্দ কাজের জন্য একদল যাবে জাহান্নামে। (সূরা হাক্কাহ) যারা অফুরন্ত নিয়ামত ভরা জান্নাতের অধিকারী হবে তাদেরকে ফেরেশতারা অভিবাদন জানিয়ে জান্নাতের দিকে নিতে নিতে বলবেন, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি-শান্তি’। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘অনন্তর ফেরেশতারা তাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রত্যেক দরজা দিয়ে আসবেন, আর বলবেন, (সালা-মুন আলাইকুম) আপনারা যে ধৈর্যধারণ করেছেন তার বিনিময়ে শান্তি পরকালের ঘর কতই না উত্তম।’ (সূরা রাদ : ২৩-২৪)
স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা জান্নাতবাসীদেরকে স্বাগত জানাবেন- ‘মহান দয়ালু রবের পক্ষ থেকে সালাম বলা হবে।’ (সূরা ইয়াসিন-৫৮)
‘তোমাদের প্রতি সালাম বা শান্তি। তোমরা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকো। অতঃপর তোমরা চিরস্থায়ী আবাস গ্রহণ করতঃ জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সূরা জুুমার-৭৩)
অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যার অন্তরে বিন্দুমাত্র অহঙ্কার থাকে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ সুতরাং এ অহঙ্কার নামক মারাত্মক ব্যাধি থেকে বাঁচতে চাইলে, আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে এবং জান্নাত লাভের বাসনা করলে সালামের ব্যাপক প্রচলন ঘটাতে হবে। প্রথমে সালাম প্রদানকারী গর্ব-অহঙ্কার থেকে যেমন মুক্ত থাকে তেমন বিনয়ীও হতে পারে। বিনয় আল্লাহর গজব থেকে রক্ষা করে তাঁর রহমতের অধিকারী বানায়। অহঙ্কার ব্যক্তিকে কলুষিত করে আর বিনয় মানুষের জীবনকে পবিত্র করে। অহঙ্কার শত্রুতা সৃষ্টি করে আর বিনয় শত্রুকেও পরম বন্ধুতে পরিণত করে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত অহঙ্কার নামক মারাত্মক ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য সালামের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া। আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম ব্যক্তি হতে হলে সালাম দেয়ার ব্যাপক প্রতিযোগিতা করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম যে প্রথমে সালাম দেবে।’ মানুষের সাথে পরিচয়ের সর্বোত্তম মাধ্যম হলো ‘সালাম’। বিনা কষ্টে, বিনামূল্যে অত্যন্ত ফলদায়ক অভিবাদনটির নাম (আস-সালা-মু আলাইকুম)। এটি কেবল একটি বাক্য নয়; বরং এক মহা চুম্বক শক্তির নাম। এর মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করা যায়। সুতরাং আপনি যাদের কাছে দাওয়াত দিচ্ছেন, তাদেরকে ব্যাপক সালাম দিয়ে তাদের কাছে পরিচিত হোন। তাহলেই আপনার দাওয়াত তাদের কাছে গ্রহণীয় হবে, গোটা সমাজে সাড়া জাগাবে।
আপনার সম্পর্ক বাড়বে ও দল ভারী হবে। কাফেলা এগিয়ে যাবে বিজয়ের লক্ষ্য পানে। সামাজিক শান্তি ও কল্যাণের জন্য প্রয়োজন ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা। আর সালামের মাধ্যমেই ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, শত্রুতা ও পরশ্রীকাতরতা দূর হয়। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা ঈমান আনয়ন করবে। আর তোমরা ঈমানদার হিসেবে গণ্য হবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন কথা বলে দেবো না, যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে? (আর তা হলো) তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার করবে।’ মা-বাবা, ভাইবোনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে গড়ে উঠে পরিবার। আর বহু পরিবার, হাট-বাজার, মসজিদ-মাদরাসা, স্কুল-কলেজ, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি নিয়ে গড়ে উঠে সমাজ। মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ একে অপরের সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারে না। (চলবে)


আরো সংবাদ



premium cement
কুয়েট ভিসির পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবি, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ হাসিনার সাবেক সামরিক সচিব মিয়াজী আটক উদ্বোধনী ম্যাচের আগে দর্শকের আনন্দ দেবে পাকিস্তান বিমানবাহিনী শনিবার ৬ ইসরাইলি পণবন্দীকে মুক্তি দেবে হামাস খালেদা জিয়ার নাইকো মামলার রায় আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর্দা উঠছে আজ, মুখোমুখি পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড হাসিনার কলরেকর্ড ট্রাইব্যুনালে প্রধান উপদেষ্টার সাথে ভুটানের রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ ভারতীয় পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে উত্তাল তিস্তা অববাহিকা বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা অগ্রাধিকার পাবে : তারেক রহমান গাজায় ২৬৬ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন ইসরাইলের

সকল