১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৫ শাবান ১৪৪৬
`

নবুওয়াতের দোলনা আশ-শাম

-


আশ-শাম হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম ও ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। আজকের চারটি আরব রাষ্ট্র-সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, ফিলিস্তিন বিশ্বের ক্যান্সার হিসেবে খ্যাত একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র, দখলদার ইসরাইল রাষ্ট্র ও মিসরের সিনাই উপত্যকা নিয়ে আশ-শাম গঠিত। পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল মক্কা থেকে এটি উত্তর দিকে অবস্থিত। এর পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণ জাজিরাতুল আরবের মরুভূমি ও লোহিত সাগর, পূর্বে ইরাকের সবুজ ছায়াসমৃদ্ধ এলাকা, দক্ষিণ-পশ্চিমে সমৃদ্ধ ইতিহাসের অধিকারী মিসর ও উত্তরে অটোমান সাম্রাজ্যের পিতৃভূমি তুরস্কের আনাতোলিয়া মালভূমি অবস্থিত। আজকে আলোচনা করব ইসলাম ও পৃথিবীর সভ্যতার ইতিহাসে প্রাচীনতম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ভূখণ্ড এবং নবুওয়াত ও কিতাব নাজিলের স্থান হিসেবে গুরুত্ব নিয়ে।

আশ-শামের সাথে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের সম্পর্ক : পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের সাথে আশ-শাম ভূমির সম্পর্ক ছিল অবিচ্ছিন্ন, অবিচ্ছেদ্য ও গভীর। পৃথিবীতে প্রেরিত নবী-রাসূলদের বিশাল অংশের জন্মস্থান, পিতৃভূমি নবুওয়াত লাভ ও ইসলাম প্রচারের মারকাজ হসুবাদে আশ-শাম বরাবরই মুসলিমদের কাছে নবুওয়াতের দোলনা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
এটি বহুসংখ্যক আসমানি কিতাব নাজিলের স্থান হিসেবে সুপরিচিত। হজরত ইবরাহিম আ: এখানে জীবনের বেশির ভাগ সময় অবস্থান করেছেন। তাঁর পরিবারের সদস্য এবং দুই ছেলে হজরত ইসমাইল ও ইসহাক আ: ফিলিস্তিনে জন্মগ্রহণ করেন। হজরত ইসহাক আ:-এর ছেলে হজরত ইয়াকুব আ: এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। হজরত ইবরাহিম আ:-এর ভাগিনা ও কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর আরেক নবী হজরত লুত আ: ছিলেন আমুরা ও সাদুম এলাকার নবী।

এখানকার অন্তর্গত সিনাই উপত্যকার ‘তুর’ পাহাড়ে হজরত মুসা আ: নবুওয়াত ও ‘তাওরাত’ কিতাব লাভ করেন। হজরত হারুন আ:-কে তাঁর সহকারী নিযুক্ত করা হয় এবং নবুওয়াত দেয়া হয়। সারা পৃথিবীর প্রথম শাসনকর্তা হজরত দাউদ আ:-এর শাসনের কেন্দ্রস্থল ছিল আশ-শামের ফিলিস্তিন অংশ। তাঁকে ‘জাবুর’ কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাঁর ছেলে হজরত সুলাইমান আ:-কে আল্লাহ তায়ালা বিশ্বজোড়া রাজত্ব ও প্রভাব প্রতিপত্তি দান করেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘সে (হজরত সুলাইমান আ:) বলল, হে আমার প্রভু, আমাকে ক্ষমা করুন এবং এমন রাজত্ব দান করুন, যা লাভ করা আমার পর আর কারো পক্ষে সম্ভব হবে না, নিশ্চয় আপনি দাতা।’ (সূরা সোয়াদ-৩৫)
এ অঞ্চলের অন্য নবীদের মধ্যে রয়েছে হজরত ইলিয়াস আ:, আল ইয়াসা আ: এবং আল খিদর আ: প্রমুখ।
হজরত ইমরান আ:-এর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত দুই নবী ও রাসূল হজরত ঈসা আ: ও হজরত ইয়াহইয়া আ: এখানেই জন্মগ্রহণ করেন, নবুওয়াত ও কিতাব লাভ করেন এবং তাঁদের দ্বীন প্রচারের মারকাজ হিসেবে নির্ধারণ করেন। কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন রেওয়ায়েত থেকে জানা যায়, হজরত ইসা আ:-কে আল্লাহ তায়ালা এখানকার প্রধান শহর দামেস্ক থেকে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছিলেন।

কুরআনুল কারিমের সূরা ইয়াসিনে বর্ণিত তিনজন নবীর মারকাজ ছিল সিরিয়ার ইনতাকিয়া অঞ্চলে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর (হে নবী) আপনি তাদের কাছে সেই জনপদের বাসিন্দাদের উদাহরণ পেশ করুন, যখন তাদের কাছে রাসূলগণ (প্রেরিত নবীগণ) এসেছিলেন।’ (সূরা ইয়াসিন-১৩) এদের বাইরেও কয়েকজন ব্যতীত বাকিরা সবাই এখানকার কোনো না কোনো অঞ্চলের সাথে সম্পর্কিত রয়েছেন।
হজরত মুহাম্মদ সা: ও আশ-শাম : হজরত মুহাম্মদ সা: নবুওয়াতপূর্ব জীবনে বাণিজ্য উপলক্ষে বহুবার আশ-শাম অঞ্চলে এসেছেন। তিনি তাঁর চাচা আবু তালিবের সাথে কৈশোরকালে বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায় করতে এসেছিলেন। যৌবনকালে আরবের শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যবসায়ী এবং তাঁর প্রথমা স্ত্রী সাইয়েদা খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ রা:-এর বাণিজ্যবহর নিয়ে সিরিয়ায় যেতেন। আর নবুওয়াতের পর ইসরা ও মিরাজের রাতে এখান থেকেই একমাত্র মানব হিসেবে সাত আসমানের উপরে আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রথম মানব হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণ করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তিনি পবিত্র সত্তা (আল্লাহ), যিনি তাঁর বান্দাকে মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত এক রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন, যে সময়কে আমি বরকতময় করেছি, যেন আমি আমার নিদর্শনগুলো প্রদর্শন করি। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ (সূরা বনি ইসরাইল-১) এ ভূমিতেই ইসলামের ইতিহাসের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। সেগুলো হচ্ছে- মুতা, তাবুক, ইয়ারমুক, আজনাদিন, ক্রুসেড ও আইনেজালুতের যুদ্ধ।
লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
যুদ্ধবিরতি চুক্তি এগিয়ে নেয়ার আহ্বান সদ্য মুক্তি পাওয়া ৩ ইসরাইলির কুমিল্লায় উদ্ধার হওয়া মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করল সেনাবাহিনী কারওয়ান বাজারে ইটিভি ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় জনতার ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই : মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ভিউজ বাংলাদেশ’র প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কুষ্টিয়ায় নৌকা ছিদ্র করাকে ঘিরে সংঘর্ষে আহত ১৫ খুলনায় আ’লীগের ৬ নেতাকে রিমান্ড শেষে জেলহাজতে প্রেরণ গাজীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে স্ত্রীরও মৃত্যু আওয়ামী লীগের বিচারে কেউ হস্তক্ষেপ করলে আবার প্রতিবাদে নামব : সারজিস কারওয়ান বাজারে ইটিভি ভবনে আগুন সেলফি তুলতে গিয়ে নদীতে নিখোঁজ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

সকল