০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

সীমান্ত নিরাপত্তার ইসলামী দৃষ্টিকোণ

-

সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি রাষ্ট্রের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তবে ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী সীমান্ত পাহারা দেয়া রাষ্ট্রীয় কাজের পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমলও বটে। এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে সুস্পষ্টভাবে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলতের কথা স্বয়ং রাসূলে কারিম সা: তুলে ধরেছেন। পরকালীন পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে এ মহান কাজে নিয়োজিতদের জন্য। দেশের নাগরিকদের রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রকে ভালোবাসা এবং সীমান্তের নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা। সেই সাথে দেশ, জনপদ ও সীমান্তের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে বিশ্বাসীগণ! ধৈর্য ধারণ করো, প্রতিরোধে দৃঢ়তা প্রদর্শন করো এবং (সীমান্ত) পাহারায় স্থিত থাকো। আর আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সূরা আলে ইমরান-২০০)
সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তি মৃত্যুর পরও সওয়াব পেতে থাকে। হজরত সালমান রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর রাহে একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত পাহারা একমাস রোজা পালন এবং ইবাদতে রাত জাগরণের চেয়েও উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সওয়াব জারি থাকবে। আর তাকে (জান্নাত হতে) রিজিক বরাদ্দ দেয়া হবে, আর সেসব ফিতনা (বিপদ ও সমস্যা) হতে সুরক্ষিত থাকবে। (মুসলিম-৪৭৮৫)
যারা দেশকে ভালোবাসে, যারা দেশের সীমানা রক্ষার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে তাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘এক দিন ও এক রাতের সীমান্ত পাহারা ধারাবাহিকভাবে এক মাসের সিয়াম সাধনা ও সারা রাত নফল ইবাদতে কাটানো অপেক্ষা উত্তম। (মুসলিম-১৯১৩)। অন্যত্র রাসূল সা: থেকে বর্ণিত আছে- ‘আল্লাহর পথে এক দিন সীমান্ত পাহারা দেয়া দুনিয়া ও এর মধ্যকার সব কিছু থেকে উত্তম।’ (বুখারি-২৮৯২)
নবী কারিম সা: বলেন, ‘আমি কি তোমাদের কদরের রাতের থেকেও শ্রেষ্ঠ রাতের কথা জানাব না? সে ওই পাহারাদারের রাত, যে ভয়সঙ্কুল স্থানে পাহারা দেয়। তার আশঙ্কা হয় যে, সে হয়তো তার পরিবারে জীবিত ফিরতে পারবে না।’ (মুসতাদরাকে হাকিম-২৪২৪) তিনি আরো বলেন- ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ; যে ব্যক্তি তার দ্বীন রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ; যে ব্যক্তি তার জীবন রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ; যে ব্যক্তি তার স্বজন রক্ষার্থে নিহত হয়, সেও শহীদ।’ (তিরমিজি-১৪২১)
হাদিসে আরো বর্ণিত হয়েছে, ‘দু’টি চোখে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। একটি হলো ওই চোখ, যা আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে, আরেকটি হলো ওই চোখ, যা সীমান্ত পাহারায় বিনিদ্র রজনী যাপন করে।’ (তিরমিজি-৪/১৭৫)
উল্লিখিত আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মুসলমানদের কাছে সীমান্ত পাহারা ও দেশ রক্ষা একটি পবিত্র দায়িত্ব। অতএব, মাতৃভূমির প্রতি ইঞ্চি মাটির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।
লেখক : খতিব, ঐতিহ্যবাহী মেইন বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদ, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ


আরো সংবাদ



premium cement