০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১, ৫ শাবান ১৪৪৬
`

কুরআন-হাদিসে ইহকাল-পরকাল

-


পৃথিবীতে চাকচিক্যময়, চিত্তাকর্ষক বস্তু-সামগ্রীর ইয়ত্তা নেই। পার্থিব সম্পদ-সম্ভার একটি অপরটি থেকে ভালো বা মন্দ, সুন্দর বা অসুন্দর, বেশি দামি বা কম দামি হতে পারে। কিন্তু পরকালের বিপরীতে পুরো পৃথিবীটাই নিকৃষ্ট...

আমাদের ইহকালীন জীবনটা অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। পক্ষান্তরে পরকালীন জীবন অনন্ত-অসীম। যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। পরকালীন জীবনের তুলনায় ইহকালীন জীবনের পরিধি পরিমাপ করা এমন কি অনুমান করাও সম্ভব নয়। কারণ নিঃশেষিত কোনো বস্তুকে অসীমের সাথে তুলনা করা যায় না। অসীমের বিপরীতে সীমিতের অস্তিত্ব কিছুই না। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন-‘বরং তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও। অথচ পরকালের জীবনটাই উত্তম এবং স্থায়ী।’ (সূরা আলা : ১৬-১৭) আরো ইরশাদ হয়েছে-‘আপনি বলে দিন, পার্থিব ভোগ সামগ্রী খুবই সামান্য। পক্ষান্তরে পরকাল খোদাভীরুদের জন্য উত্তম। আর তোমাদের উপর সুতা পরিমাণও অবিচার করা হবে না।’ (সূরা নিসা-৭৭) মহানবী সা: একটি উপমার মাধ্যমে ইহকাল ও পরকালের পার্থক্য উপস্থাপন করেছেন। হজরত মুসতাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর কসম! পরকালের তুলনায় ইহকালের দৃষ্টান্ত হলো- যেমন তোমাদের কেউ তার একটি আঙুল সমুদ্রের মাঝে ডুবিয়ে দিয়ে তুলে আনল। তারপর সে লক্ষ করে দেখুক, তার সে আঙুলটা কতটুকু পানি নিয়ে এলো? (তিরমিজি-২৩২৩) পার্থিব সময়ের হিসেবে মানুষের গড় আয়ু ৬০ থেকে ৭০ বছর, যা হাদিসের বিবরণ থেকে জানা যায়। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, এক হাসিদে বলা হয়- আমার উম্মতের আয়ু ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে হবে। (জামে আত-তিরমিজি-২৩৩১) হজরত আবু হুরায়রা বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আমার উম্মতের বয়সসীমা ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। আর এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম হবে, যারা ওই বয়সসীমা অতিক্রম করে যাবে।’ (সুনানুল কুবরা-৬৫২২, ইবনে হিব্বান-২৯৮০)

পৃথিবী নিকৃষ্ট-পরকাল উত্তম : পৃথিবীতে চাকচিক্যময়, চিত্তাকর্ষক বস্তু-সামগ্রীর ইয়ত্তা নেই। পার্থিব সম্পদ-সম্ভার একটি অপরটি থেকে ভালো বা মন্দ, সুন্দর বা অসুন্দর, বেশি দামি বা কম দামি হতে পারে। কিন্তু পরকালের বিপরীতে পুরো পৃথিবীটাই নিকৃষ্ট। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন-‘তোমরা জেনে রেখো, পার্থিব জীবন তো খেল-তামাশা, জাঁকজমক, পারিপার্শ্বিক গৌরব-অহঙ্কার এবং সন্তান ও সম্পদের প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা ছাড়া অন্য কিছু নয়। এর দৃষ্টান্ত বৃষ্টির মতো, যার দ্বারা উৎপন্ন শস্য কৃষককে চমৎকৃত করে। এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। অবশেষে তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন তো প্রতারণার ক্ষণস্থায়ী সামগ্রী ছাড়া অন্য কিছু নয়।’ (সূরা আল-হাদিদ-২০) আরো ইরশাদ হয়েছে-‘আর এই পৃথিবীর জীবনটা খেল-তামাশা ছাড়া অন্য কিছু নয়। পক্ষান্তরে পরকালের জীবনই আসল জীবন। যদি তারা তা জানত।’ (সূরা আল-আনকাবুত-৬৪) উদ্ধৃত আয়াতগুলোতে পার্থিব জীবন ও সম্পদের নিকৃষ্টতা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা: এক হাদিসে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করেছেন। হজরত সাহাল ইবনে সাদ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যদি পুরো পৃথিবীর মূল্য মহান আল্লাহর কাছে একটা মশার ডানার সমানও হতো, তাহলে আল্লাহ কোনো কাফিরকে এক ঢোক পানিও পান করতে দিতেন না।’ (জামে আত-তিরমিজি-২৩২০, মেশকাতুল মাসাবিহ-৫১৭৭) হজরত জাবের রা: থেকে একবার রাসূলুল্লাহ সা: একটি কানকাটা মৃত বকরির বাচ্চার কাছ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছে যে, এক দিরহামের বিনিময়ে এটি গ্রহণ করতে রাজি আছে? সাহাবায়ে কেরাম রা: উত্তরে বললেন, কোনো কিছুর বিনিময়েই আমরা এটি গ্রহণ করতে রাজি নই। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের কাছে এটি যত নিকৃষ্ট আল্লাহর কাছে পুরো পৃথিবীটা তার চেয়েও নিকৃষ্ট।’ (মুসলিম-৫১৫৭)

পৃথিবীর মোহ পরকালীন জীবন ধ্বংস করে ফেলে : পার্থিব জীবনের প্রতিটি মূহূর্ত, প্রত্যেকটি কাজ পরকালীন জীবনের পাথেয় সংগ্রহের জন্য, সুখের সামান তৈরির জন্যে পরিচালিত হবে- এটিই মুমিনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে, পরকালকে ভুলে ইহকালের জীবন ও সম্ভোগের প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে পড়লে পরকালীন জীবনটাই ধ্বংস হয়ে যায়। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন- ‘হে ঈমানদারগণ! কী হলো তোমাদের যে, তোমাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহর রাস্তায় অভিযানে বেরিয়ে পড়ো, তখন তোমরা পৃথিবীর প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ো? তোমরা কি পরকালীন জীবনের পরিবর্তে পার্থিব জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট হয়ে পড়েছ? অথচ পার্থিব ভোগের সামগ্রী পরকালের তুলনায় খুবই সামান্য।’ (সূরা আত-তাওবাহ-৩৮) হজরত আমর ইবনে আওফ রা: থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের উপর দারিদ্র্যের আশঙ্কা করি না। কিন্তু এটি ভয় করি যে, তোমাদের দুনিয়াকে বিস্তৃত করে দেয়া হবে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের বিস্তৃত করে দেয়া হয়েছিল। আর তোমরা তা আয়ত্ত করার জন্য তেমনি প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়বে যেমন প্রতিযোগিতায় তারা লিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ফলে তারা যেভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল তোমরাও সেভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে।’ (বুখারি-৬১৭৭, মুসলিম-২৯৭১) অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘দুইটা ক্ষুধার্ত বাঘকে বকরির পালের মধ্যে ছেড়ে দিলে এত ক্ষতি করতে পারে না যত বেশি ক্ষতি করে পার্থিব সম্পদ ও সম্মানের প্রতি মানুষের মোহ তার দ্বীনের।’ (জামে আত-তিরমিজি-২৩৭৬, মেশকাতুল মাসাবিহ-৫২৮১)

পৃথিবীর প্রতি অনাসক্তি আল্লাহর নৈকট্য এনে দেয় : হজরত ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: তিলাওয়াত করলেন, ‘আল্লাহ যাকে হিদায়াত করতে চান, তার অন্তরকে ইসলামের জন্য খুলে দেন’ এরপর রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘হিদায়াতের নূর যখন অন্তরে প্রবেশ করে তখন সেটি উন্মুক্ত হয়ে যায়। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! ওই অবস্থা বুঝার কি কোনো নিদর্শন আছে? তিনি বললেন হ্যাঁ, প্রতারণার ঘর অর্থাৎ দুনিয়া থেকে পৃথক হয়ে চিরস্থায়ী ঘর আখিরাতের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া এবং মৃত্যু আসার আগে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ-৫১৭৯, মুসনাদে আহমাদ-১৯৬৮৭) অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যখন তোমরা কোনো বান্দাকে দেখবে যে, সে পৃথিবীর প্রতি অনাসক্ত ও স্বল্পভাষী, তখন তোমরা তার সাহচর্য অবলম্বন করবে। কেননা, তাকে হিকমত দান করা হয়েছে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ-৫২২৯)
লেখক : পেশ ইমাম ও খতিব, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ

 


আরো সংবাদ



premium cement
বরিশালে জামায়াতের শহীদ স্মারক মোড়ক উন্মোচন আড়াইহাজারে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিকআপ খাদে, নিহত ১ আহতদের চিকিৎসায় আগত বিদেশী চিকিৎসকদের ভ্যাট অব্যাহতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে দুই সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা ‘আ’লীগকে কয়দিন রাজপথে পুলিশ দিয়ে ঠেকাবেন?’ গণহত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার শুরু করা না হলে আন্দোলনের হুমকি ফিলিস্তিনিদের গাজায় থাকার ইচ্ছাকে বিশ্ব নেতাদের সম্মান করা উচিত : জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি দূত বকশীগঞ্জে ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১ বিমানের এক টিকিটে আরেকটি ফ্রি দিচ্ছে ফার্স্টট্রিপ গাজায় ইসরাইলের তিন প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করলেন নেতানিয়াহু তাপমাত্রা বাড়তে পারে

সকল