০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১, ৩ শাবান ১৪৪৬
`

রাজনীতির সাথে ইমলামের সস্পর্ক

-

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা: এমন এক মহান ব্যক্তিত্ব যার মধ্যে একাধারে আদর্শ শাসক, রাষ্ট্রনায়ক, সমাজবিদ, প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও অনুপম সংগঠকের গুণাবলি বিকশিত হয়েছে। কুরআনের বর্ণনায় রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম উদ্দেশ্য ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে দাউদ, আমি তোমাকে দুনিয়ায় খলিফা নিযুক্ত করেছি, অতএব তুমি লোকসমাজে ন্যায়বিচার করো এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না।’ (সূরা সোয়াদ-২৬) অন্য সূরায় বলা হয়েছে- ‘আর যারা সেই বিধান মোতাবেক ফয়সালা করবে না, যা আল্লাহ নাজিল করেছেন, তারাই জালিম।’ (সূরা মায়িদা-৪৫) রাসূল সা: বলেন, ‘তোমাদের আগে যারা অতিবাহিত হয়েছে, তারা ধ্বংস হয়েছে এ কারণে যে, তাদের মধ্য থেকে যখন কোনো বড়লোক চুরি করত, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত; আর যখন কোনো দুর্বল ব্যক্তি চুরি করত, তখন তারা তাকে শাস্তি দিত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মদের মেয়ে ফাতিমাও চুরি করে, তাহলে আমি অবশ্যই তার হাত কেটে দেবো।’ (বুখারি-৩৪৭৫)
সমাজ ও রাষ্ট্রে যদি জুলুম ও দুঃশাসনমুক্ত ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা রাজনীতির উদ্দেশ্য হয় তাহলে বলতে হবে, কুরআনের সাথে রাজনীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কেননা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনের ভাষায়- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ (সূরা নাহল-৯০) মহান আল্লাহ বলেন- ‘(হে নবী) নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব (আল কুরআন) নাজিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে শাসনকার্য পরিচালনা করো সে অনুযায়ী, যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন।’ (সূরা নিসা-১০৫) মুমিনরা রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে তাদের করণীয় কী, সে বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন-‘তারা এমন যাদের আমি পৃথিবীর বুকে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত আদায় করবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।’ (সূরা হজ-৪১)
প্রচলিত সমাজের নেতারা কোনোকালেই ইসলামের আহ্বান গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। কেননা, তাদের পার্থিব যাবতীয় স্বার্থপ্রতিষ্ঠিত সমাজব্যবস্থার মধ্যেই নিহিত ছিল। তবু নবীগণ ইসলামের দাওয়াত সর্বপ্রথম নেতাদের কাছেই পেশ করেছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা আরাফের অষ্টম রুকু থেকে একাধারে কয়েকটি আয়াতে আল্লাহ পাক হজরত নুহ আ:, হুদ আ:, সালেহ আ:, লুত আ:, শোয়াইব আ: ও মুসা আ:-এর ইসলামী রাষ্ট্রনীতির যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতেও দেখা যায়, প্রত্যেক রাসূলই সমাজের নেতৃস্থানীয়দের কাছে দাওয়াত পেশ করতে আদিষ্ট হয়েছেন। সেখানে এ কথাও প্রমাণিত হয়েছে, সমাজপতিরা প্রত্যেক রাসূলেরই বিরোধিতা করেছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘ইসলাম ও রাষ্ট্রব্যবস্থা দুই সহোদর ভাইয়ের মতো। তাদের একজন অপরজনকে ছাড়া সংশোধন ও পরিপূর্ণ হতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইসলাম হচ্ছে কোনো অট্টালিকার ভিত। আর রাষ্ট্রশক্তি তার পাহারাদার। যে অট্টালিকার ভিত নেই তা যেমন পড়ে যেতে বাধ্য, তেমনি যার পাহারাদার বা রক্ষক নেই তাও ধ্বংস হয়ে যেতে বাধ্য।’ (ইমাম দাইলামি, আল ফিরদাউস-১/১১৭, ইমাম সুয়ুতি, জামউল জাওয়ামি হা:-১০১২২, কানজুুল উম্মাল হা:-১৪১৬১৩) সুতরাং যারা বলে রাজনীতির সাথে কুরআনের কোনো সম্পর্ক নেই; ইসলাম বলে, তাদের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
স্বার্থপর ও আদর্শহীন রাজনীতি যেমন ইসলামবিরোধী, নবী-রাসূলদের অবলম্বিত রাজনীতি থেকে বিমুখ হওয়াও তেমনি অনৈসলামিক; বরং রাসূল সা: যে ধরনের রাষ্ট্রনীতি অবলম্বন করেছেন তা মুসলমানদের জন্য বাস্তবায়ন করা প্রধানতম ফরজ। আল্লাহ পাক তাঁর রাসূল সা:-কে কোন কর্তব্য দিয়ে পাঠিয়েছিলেন কুরআন মাজিদের বহু স্থানে বিভিন্নভাবে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তা সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন- ‘তিনিই এ সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও দ্বীনে হকসহ পাঠিয়েছেন, যাতে আর সব দ্বীনের ওপর একে (দ্বীনে হককে) বিজয়ী করে তোলেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়লার সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট।’ (সূরা আল ফাতহ-২৮) এখানে দ্বীন (ইসলাম) বিজয়ী করার উদ্দেশ্যই হলো ইসলামী রাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করা। সুতরাং ধর্মের সাথে রাজনীতির সম্পর্ক বিদ্যমান।
লেখক : প্রভাষক, গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, অভয়নগর, যশোর।


আরো সংবাদ



premium cement
অনির্দিষ্টকালের জন্য তিতুমীর কলেজ ‘শাটডাউন’ ঘোষণা একুশে বইমেলা নিয়ে করা ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে যা বললেন প্রেস সচিব সান্তাহারে ঘুরতে যেয়ে ট্রাকচাপায় ৩ বন্ধু নিহত মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের অবস্থান মজবুত করতে বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প-নেতানিয়াহু জামায়াত নেতারা গলায় ফাঁসির রশি পরেছে কিন্তু পালিয়ে যায়নি : শামসুল ইসলাম রমজানে তেল, চিনি, ছোলা ও খেজুরের কোনো সঙ্কট হবে না : বাণিজ্য উপদেষ্টা উড়ন্ত সালাহর জোড়া গোলে লিভারপুলের জয় সাঈদীবিহীন চট্টগ্রামেরদ ঐতিহাসিক তাফসীর মাহফিল যেমন ছিল চাঁদার দাবিতে কর্মকর্তাকে মারধর, ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশনের সভাপতি গ্রেফতার বসবাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না করেই জুনে শেষ হচ্ছে পূর্বাচল প্রকল্প বাজারে তেল, চিনি, ছোলা ও খেজুরের সঙ্কট নেই : বাণিজ্য উপদেষ্টা

সকল