০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ২ শাবান ১৪৪৬
`

কুরআন-হাদিসের আলোকে মিরাজ

-

(গত দিনের পর)
মিরাজের ফলাফল : আল্লাহ ও তার রাসূল সা:-এর প্রতি ঈমান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে মিরাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মিরাজের ঘটনায় ঈমানদারদের ঈমান আরো বেড়েছে। পক্ষান্তরে সন্দেহ পোষণকারীরা যুক্তির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে মুসলিমদের থেকে আলাদা হয়ে গেছে। বস্তুত আদর্শ ও নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসহীন একটি গোষ্ঠী দিয়ে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। আর এ জন্য মক্কি ও মাদানি জীবনের সন্ধিক্ষণে ওই কঠিন সামাজিক প্রেক্ষাপটে এ পরীক্ষাটি একান্ত দরকার ছিল। জাগতিক সব অবলম্বন হাতছাড়া হওয়ার পর নবী করিম সা: তার মহান প্রভুর সান্নিধ্যে গিয়ে ভালোবাসার এক অভাবনীয় শক্তি লাভ করলেন। আল্লাহর খেলাফত প্রতিষ্ঠার কঠিন কাজে মিরাজ নবী করিম সা:-কে সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে। প্রত্যক্ষ জ্ঞান এবং আল্লাহর পরম সান্নিধ্য তার মনে ‘প্রশান্তি’ দিয়েছিল। ফলে হিজরতের সময় সাওর গুহায় যখন তিনি ছিলেন দুজনের একজন, বদর প্রান্তরে যখন তিনি ৩১৩ জন সৈন্য নিয়ে কাফিরদের বিশাল বাহিনীর মোকাবেলা করেন, তাবুকে রোম পরাশক্তির বিরুদ্ধে যখন তিনি অগ্রসর হয়েছিলেন তখনো তিনি ছিলেন অনড়, অটল ও ভাবনাহীন। তার এ চারিত্রিক দৃঢ়তায় মিরাজের ভূমিকা অপরিসীম। তাই মিরাজ একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিস্ময়কর ঘটনা। মক্কি জীবনের শেষভাগের এ ঘটনার ফল ছিল সুদূরপ্রসারী।
মিরাজের শিক্ষা : মিরাজ আল্লাহ তায়ালার অপার মহিমা ও কুদরতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মিরাজ হজরত রাসূলুল্লাহ সা:-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও উচ্চতম মর্যাদার সাক্ষ্য বহন করে। উম্মতদরদী নবী সা: মিরাজের রাতেও আমাদের কল্যাণের কথা ভেবেছেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ সা:-এর উদারতা তার ভালোবাসায় আমাদের উজ্জীবিত করে। মিরাজ মহাকাশ গবেষণার নবদিগন্ত উন্মোচিত করে। মিরাজের ঘটনার বিবরণ সংবলিত সূরা বনি ইসরাইলের তৃতীয় ও চতুর্থ রুকুতে বর্ণিত ১৪ দফার শিক্ষা ও মিরাজ পরবর্তী সময়ে রাসূলুল্লাহ সা:-এর কর্মকৌশল আমাদের একটি আদর্শ কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রেরণা জোগায়। মিরাজের সর্বোৎকৃষ্ট দান হলো- দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। নামাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। নামাজের মাধ্যমে চরিত্র সংশোধিত হয় এবং যথাযথভাবে নামাজ কায়েমের মাধ্যমে একটি ইসলামী সমাজের ভিত্তি রচিত হয়। তাই নামাজের ব্যাপারে সব ধরনের উদাসীনতা ঝেড়ে ফেলে নামাজে নিষ্ঠাবান হওয়া মিরাজের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এ ছাড়া মিরাজের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো-
১. আল্লাহ তায়ালার অসীম ক্ষমতার ওপর নিঃশঙ্কচিত্তে বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে সব কিছু পারেন এবং তার ক্ষমতা অপরিসীম। এই চেতনা মাথায় রেখে আল্লাহর ভয়কে অন্তরে সদা জাগরুক রাখা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা।
২. হজরত রাসূলুল্লাহ সা:-এর মর্যাদাকে উপলব্ধি করে পরিপূর্ণভাবে তার অনুসরণ করা এবং তাকে পূর্ণাঙ্গভাবে জীবনের আদর্শ বানানো।
৩. আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব, জান্নাত-জাহান্নামের মতো বিষয়গুলো যা মানুষের চোখের সামনে দৃশ্যমান নয়, সেগুলোতে পরিপূর্ণভাবে ঈমান আনা এবং এতে কোনো প্রকার সন্দেহ না রাখা।
অন্য দিকে সূরা বনি ইসরাইলের ১৪টি মূলনীতি ইসলামী সমাজব্যবস্থার মূলনীতি হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মূলনীতিগুলোর মাধ্যমে যেসব বিষয় স্পষ্ট হয়েছে তা হলো-
* মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিনদের সাথে আচরণের বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা। বিশেষ করে তাদের অধিকারের বিষয়গুলো।
* আল্লাহ তায়ালার ইবাদত-বন্দেগি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করলে মুমিন জীবন বরবাদ হতে বাধ্য। তাই আল্লাহ ছাড়া অন্যসব সত্তার ইবাদতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
* সম্পদ ব্যবহারের সুষম নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে এবং অপচয় ও কৃপণতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
* ব্যভিচারের সাথে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের উপকরণ, পথ-পন্থা ও মাধ্যমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
* রিজিকের বিষয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা এবং রিজিকের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
* অনুমাননির্ভর কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে, যা সব ধরনের ভুলের সূত্রপাত করে।
* নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা চূড়ান্ত পর্যায়ের বিপর্যয় সৃষ্টি করে, তা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
* লেনদেন, বেচা-বিক্রির ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা, অনৈতিকতার সব পথ রুদ্ধ করে ওজনে কমবেশি করাকে হারাম করা হয়েছে।
* পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষা, সম্পর্কের হক আদায়ের অন্যতম মূল শর্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষার ওপর জোরালোভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
* অহঙ্কার সব ধরনের অরাজকতার মূল উৎস। দাম্ভিক মানুষ সর্বদা মানুষের সাথে ভুল আচরণ করে। তাই অহঙ্কার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
মিরাজের ঘটনা শুধু একটি অলৌকিক ঘটনা কিংবা কাহিনী নয়; বরং মুমিন জীবনের জন্য চরম শিক্ষণীয় একটি নিদর্শন। আল্লাহ তায়ালার চরম ক্ষমতার ছোট্ট একটি নিদর্শন থেকে শেখার রয়েছে অনেক কিছু। মিরাজের সময় রাসূল সা: জাহান্নামের এক একটি দলের অপরাধ ও শাস্তির যে ঘটনাগুলো চাক্ষুস করেন, শুধু সেগুলোও যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলে আল্লাহর শাস্তির ভয়েও সমাজ সংশোধিত হতে বাধ্য। কিন্তু মানুষ এ বিষয়ে উদাসীন।
এই রাতে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করা, আতশবাজি, আলোকসজ্জা ইত্যাদি সবই বিদয়াতের পর্যায়ভুক্ত বলে মত দেন উলামারা। আর প্রিয় নবী সা:-এর এ মিরাজ ছিল জাগ্রত অবস্থায় রূহ ও শরীরের উপস্থিতিতে। আর তা বাস্তবেই প্রমাণিত। প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য মিরাজ সংঘটিত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বাস স্থাপন করাও ঈমানের একান্ত দাবি। মানুষের জন্য আল্লাহর মিরাজের দরজা নামাজের মাধ্যমে খোলা রাখা হয়েছে। মুমিনের মিরাজ হলো নামাজ। এ নামাজেই মানুষ আল্লাহর দিদার লাভ করতে সক্ষম।
লেখক : ইসলাম বিষয়ক গবেষক ও কলাম লেখক


আরো সংবাদ



premium cement
কারিগরি শিক্ষাই আগামীর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে চেয়ারম্যান পদে যোগ দিলেন অনুপ কুমার চাকমা ফুলবাড়ীতে ট্রাক্টর ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩ আ.লীগ পুনর্বাসনে উঠে পড়ে লেগেছে মিডিয়া ও আমলারা : হাসনাত আব্দুল্লাহ স্ত্রী সন্তানসহ শাহজাহান খানের বিরূদ্ধে দুদকের ৩ মামলা সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকসহ ৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রায়গঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত লেবুর লাশ উত্তোলন স্বর্ণের ভরি কি ২ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে দুইজনের যাবজ্জীবন, সাবেক এমপিসহ ১০ জন খালাস বরেণ্য শিক্ষাবিদ আব্দুস ছাত্তার সরকারের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উত্থান দিয়ে সপ্তাহ শুরু পুঁজিবাজারে

সকল