ইকরামুল মুসলিমিনের ফজিলত
- হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ আজিজুল হক
- ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ইকরামুল মুসলিমিনের সওয়াব অপরিসীম। হজরত আনাস বিন মালিক রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো ব্যথিত ব্যক্তির একটি প্রয়োজন পূর্ণ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার ৭৩টি হাজত পূরণ করবেন, একটি দিয়ে তার দুনিয়া সুন্দর করা হবে। বাকি ৭২টি আখিরাতের জন্য অবশিষ্ট রাখা হবে (জামেউল আহাদিস, হাদিস ২১৩৭৭)
আরেকটি হাদিস হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত তা হচ্ছে, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য চলে, আল্লাহ পাক তার জন্য ৭৫ হাজার ফেরেশতাকে নিয়োগ করেন, যারা ওই ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে থাকেন। আর সেই কাজটি সম্পন্ন করা পর্যন্ত তার ওপর রহমতের ছায়া বিস্তৃত থাকে। যখন সে প্রয়োজনটি পূর্ণ করে ফেলে তখন তার জন্য একটি হজ ও একটি উমরার সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয় (আলমুজামুল আওসাত, হাদিস ৪৩৯৬)। একজন মুসলমানের মর্যাদা আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক। তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয় একজন মুমিন গোলাম একজন আযাদ মুশরিক পুরুষ হতে অনেক উত্তম। যদিও মুশরিক পুরুষ তোমাদের কাছে কতই না ভালো মনে হয় (সূরা : বাকারা : ২২১) হজরত আয়েশা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের আদেশ করেছেন যে, আমরা যেন মানুষের সাথে তাদের মর্যাদার প্রতি লক্ষ রেখে আচরণ করি। (মুসলিম) মুসলমানের দাম এতই বেশি যে, তার সাহায্য করলে এবং কল্যাণ কামনা করলে ইতেকাফের মতো অশেষ সওয়াবের ভাগিদার হওয়া যায়। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো ভাইয়ের কাজের জন্য হেঁটে যায়, তার এই কাজ ১০ বছরের ইতেকাফ হতে উত্তম। যে ব্যক্তি একদিনের ইতেকাফও আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য করে আল্লাহ তায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক আড় করে দেন। প্রতি খন্দক আসমান ও জমিনের দূরত্ব হতে বেশি। (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ২৪০১৯) হজরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান ভাইয়ের সাহায্য করা থেকে এমন সময় বিরত হয় যখন তার ইজ্জতের ওপর হামলা করা হচ্ছে এবং তার সম্মানের ক্ষতি করা হচ্ছে। তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন সময় নিজের সাহায্য থেকে বঞ্চিত রাখবেন যখন সে আল্লাহ তায়ালার সাহায্যের অতি মুখাপেক্ষী হবে। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান ভাইয়ের এমন বিপদে তার সাহায্য ও সহানুভূতি করে যখন তার ইজ্জত আব্রুর ওপর হামলা করা হচ্ছে এবং তার সম্মান নষ্ট করা হচ্ছে, তখন আল্লাহ পাক তাকে ওই সময় সাহায্য করবে যখন সে আল্লাহ তায়ালার সাহায্যের আগ্রহী হবে (আবু দাউদ)।
রাসূলের ভাষ্যমতে, প্রত্যেক মুসলমানের সদকা করা উচিত। আর সদকার রয়েছে বিভিন্ন তবকা। হজরত আবু জর রা: বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তোমার আপন মুসলমান ভাইয়ের সাথে মুচকি হাসি দেয়া সদকাস্বরূপ। কাউকে নেক কাজের হুকুম করা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা সদকাস্বরূপ। কোনো পথহারাকে রাস্তা বলে দেয়া সদকাস্বরূপ। দুর্বল দৃষ্টি সম্পন্ন লোককে রাস্তা দেখানো সদকাস্বরূপ। পাথর, কাঁটা, হাড্ডি ইত্যাদি রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলা সদকাস্বরূপ। এমনকি নিজের বালতি থেকে অপর মুসলমান ভাইয়ের বালতিতে পানি ঢেলে দেয়াও সদকাস্বরূপ। (তিরমিজি)
করজে হাসানার মাধ্যমেও ইকরাম করা যায়। করজে হাসানা মানে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সওয়াবের আশায় কাউকে বিনিময় ছাড়া নিঃশর্তে ঋণ দেয়া। ইকরামুল মুসলিমিন একটি সহজ আমল। এই আমলের জন্য আলাদা মেহনতের প্রয়োজন হয় না, বরং ছোটখাটো এসব কাজ সহিহ নিয়তের সাথে করলেই অশেষ সওয়াব লাভ করা যায়। জীবনের চলার পথে এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজে আমরা দয়া ও মহত্বের পরিচয় দিতে পারি। অর্জন করতে পারি সুবর্ণ মুদ্রার মতোই মূল্যবান ও উজ্জ্বল খাঁটি সোনা। পার্থিব ধন-সম্পদ তো মৃত্যুর সাথে সাথেই হাতছাড়া হবে। কিন্তু জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এই মহৎ কাজগুলোই হবে আমাদের পরকালের পাথেয়। তাই প্রসন্নচিত্তে জান্নাতে যাওয়ার সহজ আমল হলো ইকরামুল মুসলিমিন।
লেখক : শিক্ষক একশিং হাফেজিয়া মাদ্রাসা, সিংড়া, নাটোর
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা