২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৫ রজব ১৪৪৬
`

মুমিনের জীবনে নতুন বছর

-

সময় ফুরিয়ে যায়। দিন শেষে রাত আসে। রাত শেষে আবার দিন। বছর ফুরিয়ে আবার নতুন বছর শুরু হয়। এভাবেই একসময় জীবন ফুরিয়ে যায়। আমরা এক পা এক পা করে ধাবিত হই জীবনের সমাপ্তির দিকে।
নতুন বছর মানেই ব্যর্থ অতীতের আবর্জনা পুড়িয়ে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হওয়া। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সাজানো সুদূর আগামী। একজন মুমিনের জন্য বছরের পালাবদলে রয়েছে চিন্তার খোরাক। দেয়ালে ঝুলন্ত ক্যালেন্ডারটি সরিয়ে নতুন ক্যালেন্ডারটি লাগিয়ে দিলেই করণীয় শেষ নয়। নতুন বছরে আমাদের অপরিহার্য করণীয় হলো আত্মসমালোচনা। চোখ বুলানো দরকার চলে যাওয়া বছরটির সফলতা-ব্যর্থতার খতিয়ানে। বিদায়ী বছরে কী কী ব্যর্থতা ছিল, সফলতার পাল্লাই বা কতটুকু ভারী, তা চিন্তা করা। নিজেকে দাঁড় করিয়ে দেয়া বিবেকের আদালতের কাঠগড়ায়। নয়তো আমাদের জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন আসবে না।
একজন মুসলমান হিসেবে চিন্তা করা উচিত মহান আল্লাহর হুকুমগুলো পালন করেছি কি-না। হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব( রা:) একদিন তার ভাষণে বিশাল জনতাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে মানুষ, তোমরা হিসাব চাওয়ার আগে নিজের হিসাব খতিয়ে দেখ। দাঁড়িপাল্লায় তোমার আমল ওজন করার আগে নিজের আমল ওজন করে দেখ। আল্লাহর দরবারে চূড়ান্তভাবে নিজেকে পেশ করার প্রস্তুতি গ্রহণ কর।(তিরমিযি)
জীবনের ডায়েরিতে ধরাপড়া ভুলগুলোর জন্য মহান প্রভুর খাস দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করাই নববর্ষে আমাদের পয়লা কাজ। নববর্ষের দ্বিতীয় কাজ হলো নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা। আগামী বছরের সময়টুকুর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই প্রয়োজন পরিকল্পনা। মুমিন প্রতিদিন তার আমলের হিসাব নেয় এবং গতকালের চেয়ে আগামীকালকে বেশী উপকারী ও ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করে।
বছরের বিদায় সন্ধিক্ষণে প্রতিটি মুমিনের অনুভূতি হওয়া উচিত যে দিনগুলো আমার জীবন থেকে ফুরিয়ে গেল তা আমার জীবনেরই একটি মূল্যবান অংশ। একটি বছর শেষ হওয়ার সরল ও সহজ অর্থ হলো, আমার জীবনের মালা থেকে ৩৬৫ দিনের ৩৬৫টি পুষ্প ঝরে পড়েছে। আমার জীবন আরো সংকুচিত হয়ে এসেছে। মৃত্যু আমার আরো কাছে চলে এসেছে। আনন্দ ও উল্লাসে ফেটে পড়ার মতো কিছুই নেই, বরং হিসাব-নিকাশ করে জীবনের হালখাতা করা উচিত।
বছর শেষে প্রকৃত মুসলমানের অনুভূতি শুধু আনন্দ-উচ্ছ্বাসের নয়, বরং এর সাথে মিশে আছে রাশি রাশি বেদনার স্ফুলিঙ্গ। কাজেই বছরের বিদায় মুহূর্তে দাঁড়িয়ে মুমিনের এ কথা ভেবে চিন্তামগ্ন হওয়া উচিত যে, একটি বছর তো আমি সমাপ্ত করেছি কিন্তু মহান আল্লাহ যে মহান উদ্দেশ্যে আমাকে সৃষ্টি করলেন, সে উদ্দেশ্য আমি কতটুকু বাস্তবায়ন করেছি? পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, মানুষের হিসাবের সময় ঘনিয়ে এসেছে অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে আছে। (সূরা আম্বিয়া-০১) তাই নতুন বছরে পরিশুদ্ধ আমল ও ইবাদতের নিষ্ঠা বিধৌত প্রতিশ্রুতি এবং জীবনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দৃপ্ত অঙ্গীকার হওয়া উচিত।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ ফেলে আসা দিনগুলোর কথা ভেবে চিন্তিত হয় না। আপসোস করে না। উল্টো এক শ্রেণীর মানুষ বছরের শুরুর দিনগুলোতে আনন্দে বল্গাহীন হয়ে যায়। অনেকে দিশা হারিয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলো অপ্রীতিকর কর্মে নষ্ট করে। চৈতন্য হারিয়ে তারা দিনগুলোকে কলুষিত করে। তাদের মতো আমরাও ভুলে যাই নববর্ষে একটি বছরের সূচনা আনন্দের সাথে আরেকটি বছর হারানোর বেদনাও জড়িয়ে আছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের মতোই এখানেও আমরা অতীতকে ভুলে যাই। অথচ আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের জন্য প্রয়োজন ছিল আত্মসমালোচনা ও অত্যধিক অনুশোচনা। রাসূল সা: বলেছেন, বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে নিজের হিসাব ও মৃত্যুপরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। (তিরমিযি)
কাজেই প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হলো, অতীতের পাপের মার্জনা চেয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, ভবিষ্যৎ দিনগুলো যাতে সুন্দর ও পুণ্যময় হয় সে জন্য দোয়া করা এবং নিজেকে শুধরে নেয়ার অঙ্গীকার করা।
লেখক : শিক্ষক, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement