২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ মাঘ ১৪৩১, ২২ রজব ১৪৪৬
`

জীবনের জন্য অপরিহার্য কুরআন

-


জ্ঞানগর্ভ ও উপদেশে ভরা কুরআন জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি গাইড বই। মানুষ কোথায় কখন কী করবে, কেন করবে, কিভাবে করবে সব বিস্তারিত বলে দেয়া হয়েছে কুরআনে। কুরআন তথা আল্লাহ প্রদত্ত আসমানি কিতাবের হেদায়াতের বাইরে কোনো জীবনদর্শন নেই, কোনো ধর্মদর্শন নেই, কোনো মুক্তির পথ নেই। মানবজাতির সূচনালগ্নেই এ কথাটি জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বাবা আদম ও মা হাওয়া আ:কে আল্লাহ যখন পৃথিবীতে বিচরণের জন্য পাঠিয়েছেন তখন আল্লাহ জনিয়ে দিয়েছেন- ‘আমি তাদের বলেছিলাম, তোমরা সবাই এখান থেকে দুনিয়ায় যাও। তারপর তোমাদের মঙ্গলের জন্য আমি অবশ্যই যুগে যুগে সত্যপথের দিকনির্দেশনা প্রেরণ করব। তখন যারা এই দিকনির্দেশনা অর্থাৎ কিতাবের বিধিবিধান অনুসরণ করবে, তাদের কোনো ভয় বা দুঃখ থাকবে না। আর যারা এই কিতাবের নৈতিক বিধিবিধান অস্বীকার করবে, তারাই জাহান্নামের আগুনে পুড়বে। সেখানেই থাকবে তারা চিরকাল।’ (সূরা বাকারাহ : ৩৮-৩৯)

তার মানে দুনিয়ার জীবনে শান্তি আর আখেরাতের জীবনে মুক্তির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যুগে যুগে হেদায়াত এসেছে। সে হেদায়াত যারা মেনে চলবে তাদের কোনো ভয় নেই। আর যারা অস্বীকার করবে তাদের কোনো রক্ষা নেই। উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য সর্বশেষ আসমানি হেদায়াতের নাম আল কুরআন। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জীবনে ন্যায়-ইনসাফ-শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কুরআনের বিকল্প নেই। একইভাবে আখেরাতের মুক্তির লক্ষ্যে মানুষের জন্য কুরআন এক অপরিহার্য গ্রন্থ। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! এ কুরআন অনুসরণ যিনি তোমার ওপর ফরজ করেছেন, তিনি অবশ্যই তোমাকে চূড়ান্ত গন্তব্যে ফিরিয়ে আনবেন। যারা সত্য অস্বীকার করছে তাদের বলো, ‘আমার প্রতিপালক খুব ভালো করে জানেন, কে সত্যধর্ম নিয়ে এসেছে আর কে সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে লিপ্ত।’ (সূরা কাসাস : ৮৫)

কুরআন অনুসরণ শুধু আল্লাহ ফরজই করেননি; বরং এ ফরজ কে কতটুকু আন্তরিকতার সাথে পালন করেছে সেটিও কেয়ামতের দিন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন। এর পরই ফয়সালা হবে তার জন্য জান্নাত না জাহান্নাম অপেক্ষা করছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমার ওপর যে ওহি নাজিল হয়েছে, তা অনুসরণে অটল থাকো। তুমি সাফল্যের সরল পথেই আছো। নিঃসন্দেহে এই কুরআন তোমার ও তোমার অনুসারীদের জন্য অত্যন্ত সম্মানের বিষয়। কিন্তু সময় হলে তোমাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এই কুরআন নিয়ে তোমরা কী করেছ?’ (সূরা জুখরুফ : ৪৩-৪৪) ‘তুমি তাদের মতোই আল্লাহর রাসূল, যাদের ওপর আমি কিতাব নাজিল করেছিলাম। কিন্তু পরে তাদের অনুসারীরা একে টুকরো টুকরো করেছে এবং ওরাই এখন এই কুরআনকে মিথ্যা বলছে! কিন্তু তোমার প্রতিপালকের শপথ! মহাবিচার দিবসে আমি ওদের সবাইকে এ কুরআন সম্পর্কে প্রশ্ন করব।’ (সূরা হিজর : ৯০-৯৩)

মানুষ অজ্ঞ। সে নিজের পরিচয়ই জানে না। মানুষ অন্ধ। সে নিজের স্রষ্টাকেই চেনে না। কুরআন মানুষের চোখ খুলে দেয়। তাকে জানিয়ে দেয় তার পরিচয়। জানিয়ে দেয় প্রভুর পরিচয়। তার গলায় পরিয়ে দেয় ঈমানের মালা। যুগে যুগে রাসূলদের দাওয়াতি মিশন ছিল এটাই। আল্লাহকে চেনানো। কুরআনে আল্লাহ বলেন- রাসূলরা বলল, ‘আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্বের বিষয়ে কি কোনো সন্দেহ থাকতে পারে? যিনি মহাকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা? তিনি তোমাদেরকে ডাকছেন, যাতে করে তিনি তোমাদের অতীতের সব পাপ মোচন করতে পারেন এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ভালো কাজ করার সুযোগ দিতে পারেন।’ (সূরা ইবরাহিম : ১০)

কুরআনের দাওয়াত খুব জটিল কোনো বিষয় নয়; বরং মানুষ যেন মানুষ হতে পারে, তার জীবনে যেন কোনো বিকৃতি না আসে অথবা যে বিকৃতি এসেছে সেটি যেন সংশোধন হয়ে যায়, এটাই কুরআনের উদ্দেশ্য। ফলে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের জন্যও কুরআন অপরিহার্য। আল্লাহ বলেন, ‘আসলে বিবেক প্রয়োগ করে সত্য না জানার কারণে সীমালঙ্ঘনকারীরা নিজেদের কামনা-বাসনার অনুসরণ করে। এ কারণে আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট হতে দেন, কে তাকে সৎপথ দেখাবে? ওরা কারো সাহায্যও পাবে না। অতএব হে বিশ্বাসীরা! তোমরা সব মিথ্যা পরিত্যাগ করে একনিষ্ঠভাবে ধর্মের ওপর নিজেদের কায়েম রাখো। আল্লাহ যে প্রকৃতিতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, সেই সৎ প্রকৃতির অনুসরণ করো। আল্লাহর সৃষ্ট এই প্রকৃতিকে দূষিত-বিকৃত করো না। এটাই সত্যধর্ম-সর্বোচ্চ ধর্মবিধান। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না।’ (সূরা রুম : ২৯-৩০)

কুরআনের প্রথম আয়াত নাজিল হয় ৬১০ সালে আর শেষ আয়াত ৬৩২ সালে। ধাপে ধাপে খণ্ডে খণ্ডে দীর্ঘ ২৩ বছরে পরিপূর্ণতা পায় কুরআন। প্রথম আয়াত নাজিল হওয়ার পরই স্পষ্ট হয়ে ওঠে এর আকর্ষণী ক্ষমতা। জাহেলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষগুলো আলোর সন্ধান পায়। সেই আলোয় বদলাতে শুরু করে তারা। পিতৃপুরুষের হাজার বছরের কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার বৃত্ত ভেঙে তারা লাভ করে মুক্ত বিশ্বাস ও সঠিক জীবনদৃষ্টি। এরপর নিজের মুক্তির জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য কোনো ত্যাগ স্বীকারেই পিছপা হয়নি তারা। হিংসা সন্ত্রাস রক্তপাত শোষণ জুলুম আর নারীনির্যাতনে নিমজ্জিত মানুষই পরিণত হয় সত্য ও ন্যায়ের মূর্ত প্রতীকে। দলীয়, গোত্রীয় ও উপজাতীয় হানাহানিতে লিপ্ত বিক্ষিপ্ত সম্প্রদায়গুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিণত হয় এক দুর্দমনীয় আদর্শিক জাতিসত্তায়। এটাই ছিল নবীর মিশন। কুরআনের ভিশন।
(বাকি অংশ আগামী দিন)

 

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement