২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮ মাঘ ১৪৩১, ২১ রজব ১৪৪৬
`

রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা নয়

-

(গত দিনের পর)
আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র রিজিকদাতা
রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কোনো রিজিকদাতা ছিল না, এখনো নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেছেন-‘নিশ্চয়ই আল্লাহ যিনি রিজিকদাতা, শক্তির আধার ও পরাক্রমশালী।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত-৫৮) ‘জমিনে বিচরণশীল এমন কোনো প্রাণীও নেই যার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই, তিনি জানেন কোথায় তাদের আবাসস্থল ও কোথায় সমাধিস্থল, সব কিছুই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে।’ (সূরা হুদ, আয়াত-৬) ‘জনপদগুলোর লোকেরা যদি ঈমান আনত আর তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান আর জমিনের কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম কিন্তু তারা (সত্যকে) প্রত্যাখ্যান করল। কাজেই তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদের পাকড়াও করলাম।’ (সূরা আরাফ, আয়াত-৯৬)
উল্লিøখিত আয়াতগুলোতে এ কথা স্পষ্ট, রিজিকদাতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনি ছাড়া আর কোনো রিজিকদাতা নেই। মানুষসহ সব প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব একমাত্র তাঁর জিম্মায়।
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা যদি প্রকৃতই আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা রাখতে তাহলে পাখিদের যেভাবে রিজিক দেয়া হয় সেভাবে তোমাদেরও রিজিক দেয়া হতো। পাখিরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে।’ (তিরমিজি-২৩৪৪, ইবন মাজাহ-৪১৬৪)
অনুসন্ধান করার শর্তে রিজিক নির্ধারিত : প্রত্যেক মানুষের রিজিক নির্ধারিত। একজন মানুষ যা কিছু প্রাপ্ত হন বা লাভ করেন, তা পূর্বনির্ধারিত ছিল বলে তিনি তা পেয়ে থাকেন। যা কিছু মানুষ প্রাপ্ত হন না বা লাভ করেন না, তা নির্ধারিত ছিল না বলেই তিনি তা পাননি বা লাভ করেননি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-‘আমি অবশ্যই জমিনে তোমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছি, আর তাতে রেখেছি তোমাদের জন্য জীবনোপকরণ। (অথচ) তোমরা অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।’ (সূরা আরাফ, আয়াত-১০)
রিজিক আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত হলেও তা অনুসন্ধান করা বান্দার কর্তব্য। আল্লাহ তায়ালা রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন বলেই বিষয়টি এমন নয় যে, সেই রিজিক আপনা-আপনি আমাদের কাছে এসে হাজির হবে।
বস্তুত আল্লাহ তায়ালা মানুষকে হালাল উপায়ে রিজিক অন্বেষণের নির্দেশ দিয়েছেন। ‘এরপর যখন নামাজ শেষ হয়ে যাবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমুয়াহ, আয়াত-১০)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘...যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য উত্তীর্ণের পথ বের করে দেবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত অবস্থান থেকে রিজিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। (তবে) নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ (সূরা তালাক, আয়াত : ২-৩)
হজরত মুত্তালিব ইবনে হানতাব রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই জিবরাইল আমার অন্তরে ওহি ঢেলে দিয়েছেন যে, অবশ্যই রিজিক শেষ হওয়ার আগে কারো মৃত্যু হয় না। সুতরাং তোমরা হারাম ছেড়ে হালাল পথে রিজিকের অনুসন্ধান করো।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-২৫৪)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘হালাল রিজিক অন্বেষণ করা দ্বীনের ফরজগুলোর মধ্যে অন্যতম।’ (সুনানুল কুবরা-বায়হাকি, খণ্ড-৬, হাদিস-১১৬৯৫)
হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো। কেননা, কোনো ব্যক্তিই তার জন্য নির্ধারিত রিজিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না, যদিও তার রিজিকপ্রাপ্তিতে কিছু বিলম্ব হয়। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো, যা হালাল তাই গ্রহণ করো, যা হারাম তা বর্জন করো।’ (ইবনে মাজাহ-২১৪৪)
ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, ‘যা কিছু তোমার জন্য লিখিত সেটি পাহাড়ের চূড়ায় থাকলেও তোমারই হবে। আর যা কিছু তোমার জন্য লেখা হয়নি, সেটি দুই ঠোঁটের মধ্যখানে থাকলেও তোমার হবে না।’
তাই আপনার জন্য নির্ধারিত রিজিক আপনার কাছে সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায়, সঠিক উৎস থেকে পৌঁছে যাবে আল্লাহর হুকুমে। তবে এ জন্য যে কাজটি করতে হবে, তা হলো আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে হালাল পথে যথাযথ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। বাকিটা আল্লাহর জিম্মায়।
যেসব কাজে মানুষের রিজিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়
১. পাপকাজে লিপ্ত হওয়া : হজরত সাওবান রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সৎকর্ম মানুষের আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে এবং দোয়া মানুষের তাকদির রদ (পরিবর্তন) করতে পারে। আর মানুষ তার পাপ কাজের কারণে প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ-৪০২২)
২. অকৃতজ্ঞ হওয়া : আল্লাহ-তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে মনে রেখো আমার শাস্তি বড়ই কঠোর।’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত-৭)
৩. মিথ্যা কসম খাওয়া ও ধোঁকা দেয়া : রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘বেচাকেনা করার সময় তোমরা অধিক কসম করা থেকে সাবধান থেকো। কারণ, মিথ্যা কসমের দ্বারা বিক্রি বেশি হয় কিন্তু বরকত ধ্বংস হয়ে যায়।’ (মুসলিম-১৬০৭) রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেছেন, ‘ক্রেতা ও বিক্রেতা যতক্ষণ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা কিংবা বাতিল করার সুযোগ রয়েছে। যদি তারা সত্য বলে এবং পণ্যের প্রকৃত অবস্থা ব্যক্ত করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি মিথ্যা বলে এবং পণ্যের দোষ গোপন করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত ধ্বংস হয়ে যাবে।’ (বুখারি-২০৭৯) (চলবে)


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাবিতে গাছ থেকে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার ইউক্রেন চুক্তি না হলে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে : ট্রাম্প জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন সারজিস ডার্কওয়েব সিল্ক রোডের উদ্ভাবক রস উলব্রিক্টকে ক্ষমা ট্রাম্পের বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকি, নিরাপদে অবতরণ লন্ডন ক্লিনিকে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসে’ চলবে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ট্রাম্পের শুল্কারোপের জবাব দেবে কানাডা ৫ ঘণ্টা পর দৌলতদিয়ায়-আরিচায় নৌযান চালাচল শুরু ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথম জয় মঠবাড়িয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যু সিলেট মহানগর বিএনপি সভাপতি ও সম্পাদককে শোকজ

সকল