মহানবী সা:-এর প্রতি কটূক্তিতে আল্লাহর জবাব
- মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
- ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মহানবী সা:-কে আল্লাহ তায়ালা প্রেরণ করেছেন দাওয়াত ও প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য। তাঁর এ দাওয়াতে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় আপন চাচা আবু লাহাব। এরপর যখন দাওয়াতসংক্রান্ত প্রথম আয়াত নাজিল হয় আর আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে জাহান্নামের ভয় দেখান (সূূরা শুয়ারা-২১৪) মহানবী সা: তখন প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী সাফা পাহাড়ে উঠে বংশের লোকদের ইয়া সাবাহ! হায় সবার বিপদ বলে ডাকাডাকি করতে থাকেন। এরপর বংশের লোকেরা একত্রিত হয়ে বলতে থাকে কী বিপদ হয়েছে তোমার? মহানবী সা: বলেন- আপনারা কি মনে করেন! আমি যদি বলি এই পাহাড়ের অপরপ্রান্তে একদল শত্রু অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আপনাদের আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে, আপনারা কি আমার কথা বিশ্বাস করবেন? তারা বলল অবশ্যই করব। কারণ তুমি তো কখনো মিথ্যা বলো না। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন- আমি এর চেয়ে ভীষণ আজাব সম্পর্র্কে আপনাদের সতর্ক করছি।
মহানবী সা:-এর কথা শুনে আবু লাহাব বলে ওঠে তুমি ধ্বংস হও, এ জন্যই কি আমাদের একত্রিত করেছ? এরপর সে রাসূলুল্লাহ সা:-কে পাথর মারতে উদ্যত হলো। আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রত্যুত্তরে সূরা লাহাব নাজিল করে বলেন, আবু লাহাবের হাত ধ্বংস হোক এবং নিজেও ধ্বংস হোক। মক্কার কাফেররা কখনো কখনো মহানবী সা:-কে মাতাল বলত। আল্লাহ তায়ালা তাদের জবাবে বলেছেন তোমাদের সাথী মাতাল নয় (সূরা আততাকবির-২২)। কাফিররা ক্রুদ্ধভাবে রাসূল সা:-এর দিকে তাকাত এবং বলত সে তো পাগল। কখনো কখনো মহানবী সা:-কে জাদুকর ও মিথ্যাবাদী বলে কটাক্ষ করত। যেমন আল্লাহ তায়ালার বাণী আর কাফিরা বলে, এত এক জাদুকর, মিথ্যাবাদী (সূরা সাদ-৪)। পৌত্তলিকরা মহানবী সা:-কে ঠাট্টা করত, আল্লাহ তায়ালা তাদের জবাবে বলেন, আল্লাহ কি কৃতজ্ঞশীল লোকদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত নন? (সূরা আনয়াম-৫৩)। মহানবী সা:-এর পুত্র ইবরাহিম যখন ইন্তিকাল করেন তখন কাফিররা বলতে থাকে মুহাম্মদ নির্বংশ হয়ে গেছে।
তখনই আল্লাহ তায়ালা তাদের জবাবে বলেন, আপনার শত্রুরাই নির্বংশ হবে। তাদের অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে মুছে যাবে। কাফিরা মহানবী সা:-কে কখনো কখনো জাদুকর বলত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, কাফিররা বলতে লাগল, নিঃসন্দেহে এ লোক প্রকাশ্য জাদুকর। কখনো তারা মহানবী সা:-কে কবি বলত। আল্লাহ তায়ালা উত্তরে বলেন, আমি রাসূলকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তা তার জন্য শোভনীয়ও নয় (সূরা ইয়াসিন-৬৯)। কখনো তারা রাসূলুল্লাহ সা:-কে এবং কুরআনকে গণকের কথা বলত। আল্লাহ তায়ালা তাদের উত্তরে বলেন, আর এটা কোনো অতীন্দ্রিয়বাদীর কথা নয়। মহানবী সা:-এর কয়েক দিন অহী আসা বন্ধ থাকলে আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিল বিনতে হারব বলতে থাকে, হে মুহাম্মদ! তোমার সাথীকে তো দেখছি না। সে তোমাকে ছেড়ে গেছে এবং তোমাকে অপছন্দ করে। তখন আল্লাহ তায়ালা সূরা দোহা নাজিল করেন- শপথ পূর্বাহ্নের এবং শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয়, আপনার প্রভু আপনাকে ত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি অসন্তুষ্টও হননি (সূরা দোহা ১-৩)
নযর ইবন হারেসের উক্তি : হজরত মুহাম্মদ সা:-কে নিয়ে কুরাইশদের হাসি-ঠাট্টা, বিদ্রুপ, উপহাস এবং জুলুম নির্যাতন ও অত্যাচারের সীমা যখন ছাড়িয়ে যায়, তখন প্রবীণ ব্যক্তিত্ব, জ্ঞানতাপস ও অশীতিপর বৃদ্ধ নযর ইবন হারেস একদিন কোরইশদের বলল, হে কোরাইশরা! আল্লাহর শপথ, তোমাদের উপর এমন আপদ এসে পড়েছে যে, তোমরা এখনো তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার কোনো উপায় বের করতে পারোনি। মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে বড় হয়েছেন, তোমাদের সবচেয়ে পছন্দনীয় মানুষ ছিলেন, সবার চেয়ে বেশি সত্যবাদী এবং সবচেয়ে বড় আমানতদ্বারও ছিলেন। আর যখন তাঁর কানের কাছে চুল সাদা হয়েছে, তখন সে তোমাদের কাছে কিছু কথা নিয়ে এসেছে। তোমরা বলছ সে জাদুকর। আল্লাহর শপথ সে জাদুকর নয়। আমি জাদুকর দেখেছি এবং তাদের জাদু টোনাও দেখেছি। তোমরা বলছ সে জ্যোতিষী, সে জ্যোতিষীও নয়। আমি জ্যোতিষীও দেখেছি। তাদের আজেবাজে কথাও শুনেছি। তোমরা বলছ, সে কবি, আল্লাহর শপথ সে কবিও নয়। আমি কবিদের দেখেছি এবং তাদের কবিতাও শুনেছি। তোমরা বলছ সে মাতাল। আল্লাহর শপথ সে মাতাল নয়। আমি মাতালের মাতলামি দেখেছি। তাঁর মধ্যে মাতলামির কিছুই নেই। হে কোরাইশগণ! ভেবে দেখো কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে (আর রাহিকুল মাখতুম)।
লেখক : প্রধান ফকিহ্, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা, ফেনী
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা