১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

মহামারীতে মুমিনদের করণীয় আমলসমূহ

-

প্রত্যেক ভাইরাসও আমাদের গুনাহ ও অন্যায়ের ফসল। আর এই সময়ে মুমিনদের সবর বা ধৈর্য ধারণ করতে হবে। সবর বা ধৈর্য একটি মহান গুণ। এই গুণটি ছাড়া মানুষ দুনিয়া-আখেরাতে সফলতা লাভ করতে পারে না। যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তিকে কাবুর মধ্যে রাখতে পারে তার জন্য রয়েছে বিশাল সুসংবাদ। কুরআন কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ধারণ করো এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন করো।’ (সূরা আলে ইমরান : ২০০) এই সবর তিনটি মুহূর্তে করতে হয়। একটি মুহূর্ত তো হলো, যখন বিপদাপদ আসে। কোনো প্রিয়জন মারা গেল, ধনসম্পদের কোনো ক্ষতি হলো বা নিজের কোনো সমস্যা হলো এ সময় ভেঙে না পড়ে ধৈর্য ধরতে হবে। আর দ্বিতীয় মুহূর্ত হলো, যখন গোনাহ করার জন্য অন্তর অস্থির হয়ে ওঠে, মন চাইতে থাকে তখন নিজেকে সবরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা। যেমন কোনো পরনারীর দিকে দৃষ্টি দিতে অথবা গিবত ইত্যাদি করতে মন খুব চাচ্ছে। এই মুহূর্তে নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হলো সবরের দ্বিতীয় মুহূর্ত। এই মুহূর্তে সবর করা হয় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য। সবর না করলে আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়ে যাবে। তাই আমাদের আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সা: যখনই কোনো কঠিন সমস্যা বা বিপদের সম্মুখীন হতেন, তখনই আল্লাহর কাছে একান্তভাবে প্রার্থনা করতেন। বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, এমন অনেক দোয়া পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। দোয়াগুলো ছোট, সহজে মুখস্থও করা যায়। দেহ সজীব ও প্রাণবন্ত রাখার জন্য যেমন খাবার বা আহারের প্রয়োজন, তেমনি কলব বা রুহকে জীবিত রাখার জন্যও খাবারের প্রয়োজন হয়। আর রুহ বা কলবের সেই খাবার হলো আল্লাহর জিকির করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং তোমরা আমাকেই স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৫২)। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে এই দোয়াটি পাঠ করলে কোনো কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মায়া ইসমিহি শাইয়ুন ফিল আরদি, ওয়ালা ফিস-সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।’ অর্থ : ‘আল্লাহর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ) হজরত আবু মুসা আশআরি রা: থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা: যখন কোনো সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফি নুহুরিহিম, ওয়া নাউজুবিকা মিন শুরুরিহিম। অর্থ, ‘হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখি করছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।’ (আবু দাউদ ও নাসাই) হজরত উম্মে সালমা রা: থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে বলতে শুনেছি, মানুষের ওপর কোনো বিপদ এলে যেন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা দোয়া পাঠ করে, তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে তার বিপদ দূর করে দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে, তার বদলে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।’ রাসূলুল্লাহ সা: বিপদের সময় পাঠ করতেন- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আজিমুল হালিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি-ওয়া রাব্বুল আরশিল কারিম।’ অর্থ, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি পরম সহিষ্ণু ও মহাজ্ঞানী। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি মহান আরশের প্রভু। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি আকাশমণ্ডলী, জমিন ও মহাসম্মানিত আরশের প্রভু।’ (সহিহ্ বুখারি ও মুসলিম) বিপদের সময় মহানবী সা: দোয়াগুলো উম্মতদেরও পাঠ করতে বলেছেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।’ (দোয়া ইউনূস) অর্থ, ‘একমাত্র তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই আমি সীমালঙ্ঘনকারী।’ (তিরমিজি : ৩৫০০) নবীজি সা: বলেন, ‘আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু সাহলান, ওয়া আনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা।’ অর্থ, ‘হে আল্লাহ, কোনো বিষয় সহজ নয়। হ্যাঁ, যাকে আপনি সহজ করে দেন। যখন আপনি চান তখন আপনি মুশকিলকে সহজ করে দিন।’ (ইবনে হিব্বান : ৯৭৪) মুসলমান হিসেবে আমরা কমবেশি সবাই দোয়া করি। তবে দোয়া করার সময় বেশ কয়েকটি বিষয়ের প্রতি গভীরভাবে খেয়াল রাখা দরকার। এগুলোকে আলেমরা দোয়া কবুলের শর্ত ও আদব বলে অভিহিত করেছেন।
পবিত্রতা অর্জন : পবিত্রতা অর্জনের পর দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা সেই দোয়া কবুল করবেন। বিনয়ের সাথে দোয়া করা, মিনতিভরা কণ্ঠে দোয়া করা, মিনতি ও নম্রতার সাথে দোয়া করলে তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। দোয়া সব ইবাদতের মজ্জা ও সারাংশ। আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরিফসহ দোয়া করা, ইসমে আজমসহ দোয়া করা উত্তম। ওয়া ইলাহুকুম ইলাহুন ওয়াহিদুন লা ইলাহা ইল্লা হুয়ার রাহমানুর রাহিম। (সূরা বাকারা : ১৬৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো এলাকায় মহামারী (সংক্রামক ব্যাধি) ছড়িয়ে পড়ে তখন যদি তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। আর যদি তোমরা বাইরে থাকো তাহলে তোমরা আক্রান্ত এলাকায় যাবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম) নবী করিম সা: বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া হলো ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। আরো পড়তে পারেন সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার।
পরিশেষে বলতে চাই, নতুন ভাইরাস এইচএমপিভি, মহামারীর আতঙ্ক এ মহাবিপদে যারা অধৈর্য না হয়ে, অস্থিরতা প্রকাশ না করে ধৈর্য ধরবে তারা এ ধৈর্যের অগণিত প্রতিদান ও বদলা আল্লাহর কাছে পাবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘ধৈর্যশীলদের অগণিত প্রতিদান দেয়া হবে।’ (সূরা জুমার : ১০) আর আল্লাহ তায়ালার কাছে তাওফিক প্রার্থনা করে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ইনশাআল্লাহ সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement
রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ইউক্রেন জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বিমান হামলায় ৬ জন নিহত : ফিলিস্তিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গৌরনদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ ফিল্ড ট্যুর নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নোবিপ্রবির ফিমস বিভাগের ২ শিক্ষক অপরাধ-বিতর্কিত ভূমিকায় জড়িত কর্মকর্তাদের ধরা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চীনের আরো ৩৭ কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার শেষ মুহূর্তে বিক্ষোভের মুখে বাইডেন, ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে স্লোগান পারিশ্রমিক নিয়ে টালবাহানা, রাজশাহীর ক্রিকেটারদের অনুশীলন বয়কট গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ রয়েছে : কাতার গলাচিপায় ‘তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালা

সকল