১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

রজব মাসের মর্যাদা

-

আরবি চান্দ্রবর্ষের গণনা অনুযায়ী সম্মানিত মাস আশহুরুল হুরুম বা রজব মাস। এ মাসের পুরো নাম ‘আর রজব আল মুরাজ্জাব’। আরবি ১২ মাসের মধ্যে রজব একটি সম্মানিত মাস। রজব অর্থ- মহান, সম্ভ্রান্ত, প্রাচুর্যময়, সম্মানিত। চান্দ্রবর্ষের চারটি মাসকে হারাম মাস হিসেবে গণনা করা হয়। যথা- জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন- ‘নিশ্চয় আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই মহান আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা ১২টি। এর মধ্যে চারটি হচ্ছে সম্মানিত, এটিই প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং এর মধ্যে তারা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।’ (সূরা তওবা-৩৬) হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা: থেকে বর্ণিত- বিশ^নবী সা: বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আসমান-জমিন সৃষ্টি করার দিন থেকেই বছর হয় ১২ মাস। এর মধ্যে চারটি সম্মানিত, তিনটি একাধারে জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং চতুর্থটি হলো রজব মুদার, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী। (মুসলিম) বিশ্বনবী সা: রজব ও শাবান মাসে বেশি বেশি করে পড়তেন, ‘আল্লাহুমা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থ- হে আল্লাহ, রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন, রমজান মাস আমাদের জন্য নসিব করুন। (বুখারি ও মুসলিম) উম্মে সালমা রা: থেকে বর্ণিত- বিশ^নবী সা: রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন শাবান মাসে, এরপর রজব মাসে।’ উম্মে সালমা আরো বলেন, রাসূল সা: বলেন, ‘রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার (নবীজীর) মাস, রমজান হলো আমার ইবাদতের মাস।’ (তিরমিজি) যে ব্যক্তি রজব মাসে ক্ষেত চাষ দিলো না এবং শাবান মাসে ক্ষেত আগাছামুক্ত করল না, সে রমজান মাসে ফসল তুলতে পারবে না।’ (বায়হাকি) রজব মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা, অধিক নফল নামাজ পড়া। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, দোহা, আউয়াবিন, তাহিয়াতুল অজু, দুখুলিল মাসজিদ ইত্যাদি আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, শিক্ষা দেয়া। যারা জানেন তাদের জন্য সহিহ শুদ্ধ করা এবং অর্থসহ বুঝে পড়ার চেষ্টা করা। হজরত ওমর রা: থেকে বর্ণিত- হজরত রাসূল সা: বলেন, অতি মহান চারটি রাত হলো রজব মাসের প্রথম রাত, শাবান মাসের মধ্য দিবসের রাত, শাওয়াল মাসের প্রথম রাত ও জিলহজ মাসের দশম রাত। রজব ও শাবান হলো রমজান মাসের প্রস্তুতির মাস। প্রস্তুতি মানে শারীরিক, মানসিক, আর্থিকসহ সব দিক দিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
রজব ও শাবান মাস নেক আমল ও পাপকাজ বর্জনের মাস। তওবা-ইস্তিগফার ও পাপ বর্জনের সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করা। রজমান মাসে যেন ইবাদত-বন্দেগির পরিবেশ তৈরি হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা। দান খয়রাতের পরিমাণ বৃদ্ধি করা। এসব পরিকল্পনা রজব ও শাবান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা: বলেন, যখন রজব মাস আসত, তা আমরা নবীজি সা:-এর আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম। কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, নবী সা: রজব মাসে ১০টি রোজা রাখতেন, শাবান মাসে ২০টি রোজা রাখতেন, রমজান মাসে ৩০টি রোজা রাখতেন। (দারিমি)
রজব ও শাবান দু’টি জোড়া মাস। এ দু’মাসকে রজবান বা রাজাবাইন বলা হয়। তাই রজব ও শাবান মাসে বেশি বেশি ইবাদত ও বন্দেগি, দোয়া-ইস্তিগফার আমল করে নিজেদের প্রস্তুত করার উপযুক্ত সময়। রজব মাসজুড়ে বিশ^নবী সা: অত্যধিক আমল করতেন। রমজানের জন্য নিজেকে তৈরি করতেন, নিজের মন-মানসিকতাকে পরিচ্ছন্ন করতে এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত করতেন। রজব মাসে গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মাস। নবী সা: রজব মাসে বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে আকাশ পথে মিরাজে গমন করেন। মিরাজ ছিল বিশ^নবী সা:-এর জন্য বিস্ময়কর ঘটনা। রাসূল সা:-এর কাছে সর্বপ্রথম রজব মাসে ওহি আসে। পঞ্চম হিজরির রজব মাসে মুসলমানরা হাবশায় হিজরত করেন। নবম হিজরির রজব মাসে মুসলমানরা ত্যাগ, নিষ্ঠা ও কোরবানির পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছিলেন। চতুর্থ হিজরির এ মাসে সিরিয়ার রাজধানী বিজয় করেন। পঞ্চদশ হিজরির রজব মাসে ইয়ারমুকের মর্মান্তিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রজব মাসে নফল রোজা পালন করার অনেক ফজিলত রয়েছে। রজবের ২৭ তারিখে রোজা রাখা অনেক ফজিলত।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আরবি, গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement