১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

এক গ্রাম্য সাহাবির প্রতি নবীজির ভালোবাসা

-

সাহাবিরা রাসূল সা:-কে যেমন ভালোবেসেছেন তদ্রƒপ রাসূলও তাদের ভালোবেসেছেন বরং আরো বেশি। সে ভালোবাসার গণ্ডি থেকে বাদ যাননি একজন গ্রাম্য সাহাবিও।
জাহির নামে এক গ্রাম্য সাহাবি ছিল নবীজির। বড় দরিদ্র সাহাবি জাহির। রোগা কদাকার। তবু নবীজি বড় ভালোবাসতেন জাহির রা:-কে।
জাহির প্রায়ই গ্রাম থেকে মদিনায় আসতেন। গ্রামে উৎপাদিত খাদ্যশস্য মদিনার বাজারে বিক্রি করতেন। জাহির মদিনায় এসেছেন আর নবীজির সাথে দেখা করেননি, তা কখনো হয়নি।
তিনি যখনই নবীজির দরবারে আসতেন, গ্রামের সবজি-ফল-ফসল হাদিয়া আনতেন। জাহির যখন ফিরে যেতেন, নবীজি বড় দরদভরা কণ্ঠে বলতেন, জাহির আমাদের গ্রাম আমরা জাহিরের শহর।
প্রিয় এই সাহাবি একদিন মদিনার বাজারে পণ্য বিক্রি করছিলেন। নবীজির কী খেয়াল হলো, তিনি চুপিচুপি জাহিরের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর পেছন থেকে চেপে ধরলেন জাহিরের চোখ।
ভরা বাজারে কেনাবেচার সময় এই রকম রসিকতা কারই-বা ভালো লাগে! জাহির বিরক্ত হয়ে উঠলেন। চোখ ছাড়ানোর জন্য তিনি জালে আটকা পড়া চিতার মতো মোচড়া-মুচড়ি করতে লাগলেন এই ছাড়ো ছাড়ো!
ঠিক তখনই জাহিরের তনুমনে কাঁপন ধরিয়ে বেজে উঠল নবীজির কণ্ঠ কেউ কি আছ আমার এই গোলামটা কে ক্রয় করবে? নবীজির কণ্ঠ শুনে বুকের ভেতর ধড়াস করে উঠল জাহিরের। নিজের কানকে তিনি বিশ্বাস করতে পারলেন না। এই ব্যস্ত বাজারে তার মতো নাদান গ্রাম্যলোকের চোখ ধরেছেন নবীজি! কী অবিশ্বাস্য ঘটনা! এও কি হতে পারে! এই মুহূর্তে ঠিক কী করা যায়? কী করবেন জাহির? ভ্যাবাচ্যাকা জাহির আবেগে কতক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকলেন। হঠাৎ তার মস্তিষ্কে ঝিলিক দিয়ে উঠল এক অভিনব ভাবনা।
নবীজির পবিত্র বদনের সাথে তার কুৎসিত শরীর ছেঁায়ানোর এই তো অপূর্ব সুযোগ! এমন সুযোগ আর তো কোনো দিন আসবে না। জাহির আর দেরি করলেন না। তার হ্যাংলা শরীর নবীজির দিকে ঠেলতে লাগলেন। নবীজি তখনো ধরে আছেন শিষ্যের চোখ। একইভাবে বলছেন, আমার এই গোলামটাকে কে ক্রয় করবে?
নবীজির এই ঘোষণার ভেতরই জাহিরের পিঠ স্পর্শ করল ভালোবাসায় ভরা নবীজির পবিত্র বুকের জমিন। বন্ধ চোখে নবীশরীর স্পর্শের আনন্দটুকু তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে লাগলেন তিনি।
এভাবে কেটে গেল কতক্ষণ। একটু পর যখন ঘোর ভাঙল জাহিরের, বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি দরিদ্র, দেখতে কুৎসিত, শরীর বলহীন; এই ত্রুটিযুক্ত গোলাম বেচে আপনি কতইবা মূল্য পাবেন!
নবীজি তখন বললেন, মানুষের কাছে তোমার দাম না থাকতে পারে, জাহির! আল্লাহর কাছে তোমার মূল্য অনেক অনেক বেশি।
নবীজি ছিলেন ওহিপ্রাপ্ত মহামানব, মদিনা নগরীর মুকুটহীন সম্রাট। কিন্তু তার আচরণে নবী ও সম্রাটসুলভ কোনো ভাব-ভণিতা ছিল না। তিনি ছিলেন সহজ মানব। সবার সাথে যেমন সহজে মিশতেন, তেমনি মজাও করতেন প্রাণখুলে। চোখ বন্ধ করে জাহির রা:-এর সাথে ঘটে যাওয়া মদিনা বাজারের ওই দৃশ্যটা কল্পনা করুন। আপনি অশ্রম্নসংবরণ করতে পারবেন না।
জাহির রা: কি সারা জীবনে ভুলতে পেরেছিলেন এই মধুর স্মৃতি? ভুলতে পারেননি। এই ভালোবাসা ভোলা যায় না; বরং যার সাথেই তার দেখা হয়েছে, শিশুদের মতো খলবল করে তাকেই শুনিয়েছেন জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান স্মৃতির সুবাসটুকু।
এই ভালোবাসা তিনি বুকে আগলে নিয়ে পাড়ি জমান পরজীবনে। নবীজীর সঙ্গে যখন তার দেখা হবে জান্নাতে, তিনি বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলবেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার শরীরে এখনো আপনার আদর লেগে আছে।
লেখক : শিক্ষক জামিয়া আরাবিয়া কাসিমুল উলুম, মীরহাজীরবাগ, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement