০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

কুরআনের ইজাজ

-

মহান আল্লাহ প্রত্যেক নবী ও রাসূলকে অসংখ্য মুজিজা দান করেছেন। যেমন- হজরত মুসা আ:-কে দিয়েছেন লাঠিকে সাপ বানানো ও নিজ হস্তকে সুভ্রমণ্ডিত করার বিশেষ ক্ষমতা। হজরত ঈসা আ:-কে দিয়েছেন কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করা ও মৃতকে জীবিত করার মুজিজা। এমনিভাবে আরো অনেক নবী-রাসূলকে বিভিন্ন মুজিজা দিয়েছেন, যেগুলো ছিল শুধু তাদের জীবদ্দশায় কার্যকরী। ইন্তেকালের সাথে সাথে তাদের মুজিজা বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-কে এমন এক মহান মুজিজা দান করা হয়েছে, যা জীবন্ত এবং কিয়ামত পর্যন্ত কার্যকরী।
সূরা হাশরে আল্লাহ পবিত্র কুরআনের যে মুজিজা এবং মহত বর্ণনা করেছেন তা অত্যন্ত সাবলীল এবং জ্ঞানগর্ভ। আল্লাহপাক বলেন- ‘যদি আমি এই মহাগ্রন্থ আল কুরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহর ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের কাছে এ জন্য বর্ণনা করি যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে।’ (সূরা হাশর- ২১)
আল-আসওয়াদুল আনসি, ইবনে সাইয়াদ, মুসায়লামা থেকে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি পর্যন্ত ৩১ জন ভণ্ড নবীর তীব্র আক্রমণ সত্ত্বেও কুরআনের ভাবমর্যাদা তিলমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি; বরং এর একনিষ্ঠ অনুসারীদের নিরলস অধ্যবসায়ের কারণে কুরআনকেন্দ্রিক একটি সমৃদ্ধ ইজাজ শাস্ত্রের উৎপত্তি ঘটেছে।
মুহীউদ্দীন ইবনুল আরাবি ইসলামী বিশ্বে ‘শায়খুল আকবার’ বা শ্রেষ্ঠ সুফি নামে প্রসিদ্ধ। মুজিজা বা ইজাজ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত এ সুফিসাধক সুচিন্তিত মতামত প্রকাশ করেছেন। ইবনুল আরাবি বলেন, “মুজিজা হচ্ছে এমন একটি ‘খারেকে আদাত’ বা চ্যালেঞ্জ বিষয়ক অলৌকিক ঘটনা যা কারো মুকাবেলা থেকে চিরতরে সুরক্ষিত। এটি সাধারণত দু’প্রকার। দৈহিক কিংবা মানসিক। বনি ইসরাইলের প্রতিটি মুজিজাই ছিল দৈহিক অবয়বভিত্তিক। কারণ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারার পরিধি ছিল সঙ্কীর্ণ। তাদের মেধাও তত প্রখর ছিল না। পক্ষান্তরে আরবদের সামনে যে বিস্ময়কর মুজিজা তুলে ধরা হয়েছিল তা ছিল সম্পূর্ণ মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক। কারণ তাদের মেধা ছিল প্রখর এবং বুদ্ধি ছিল অত্যন্ত শাণিত। কুরআন কারিমের মুজিজা অমর এবং চিরস্থায়ী। রোজ কিয়ামত পর্যন্ত তা লয় হবে না।”
ইজাজ শাস্ত্র সম্পর্কে ইবনে খালদুন তার সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ মুকাদ্দিমায় বলেন, অলঙ্কার শিল্পের প্রধান বিশেষত্ব এই যে, তা কুরআনের ইজাজকে যথাযথরূপে উপলব্ধি করতে সহায়তা অনুপ্রেরণা দান করে। তাই কুরআনের ইজাজ সব সময় প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে বর্ণনার অনবদ্যতায় সমৃদ্ধ। অপূর্ব বাক্যশৈলী ও শব্দ যোজনায় ছন্দিত আল কুরআন আরবি সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ এবং কোটি কোটি মুসলিম নর-নারীর পবিত্র ধর্মপুস্তক। শব্দের গঠনবিন্যাস, সৌন্দর্য ও ভাব গাম্ভীর্যের দিক দিয়ে তা পূর্ণতার এক সমুচ্চ বিকশিত রূপ।’
আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি অভিমত পোষণ করেন, পবিত্র কুরআন ধর্ম, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং সর্বপ্রকার বিদ্যাবুদ্ধির আকর। তিনি এ কথাও তাযকিরাহ করেন, এর ভবিষ্যদ্বাণী এর মুজিজারই জ্বলন্ত প্রতীক। কারণ আরবরা শত চেষ্টা সাধনা করেও আগাম কোনো কিছু বর্ণনা করতে সক্ষম হননি। অনুরূপভাবে বিগত জামানার ঘটনাবলি সার্থক বর্ণনার মধ্যেও কুরআনের মুজিজা নিহিত আছে। কারণ এটিও ছিল তাদের আয়ত্তের বাইরে।’ তিনি বলেন- পবিত্র কুরআনের এটিও একটি মুজিজা যে, এর সীমিত সংখ্যক শব্দের মধ্যে এত অর্থ-ঐশ্বর্য নিহিত আছে যে, তা মানুষের অসম্পূর্ণ জ্ঞান কখনো উদ্ধার করতে পারে না। এই মৃত্যুময় জগতের কোনো উপকরণই তার পূর্ণতা বিকাশে নগণ্য ভূমিকাও পালন করতে পারে না। পবিত্র কুরআন বৃষ্টিধোয়া আকাশে পূর্ণিমা চাঁদের উজ্জ্বলতা; তুমি যেদিকে চোখ রাখ সে তোমার দৃষ্টিকে স্নিগ্ধ আলোকচ্ছটায় বিমোহিত করবে। কুরআন আকাশ প্রান্তরে হিরম্ময় সূর্যের জ্যোতি, যার গগনবিদারী আলো প্রাচ্য-প্রতিচ্যের সমস্ত জনপদকে প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল করে তোলে।’
আল খাত্তাবি বলেন : আমি কুরআনের ইজাজ সম্পর্কে এত কিছু বলে যাই কিন্তু মানুষ তার দিকে ততটা মনোনিবেশ করে না। অথচ মনের একান্ত নিভৃতে কুরআনের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি ছায়া ফেলতে পারে। কুরআন ছাড়া অন্য কোনো গ্রন্থের শব্দসম্ভার ও ভাষাশৈলী মানুষের অন্তরে এত আনন্দদায়ক আবেগ, সূক্ষ্ম অনুভূতি ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টি করতে অপারগ। সে ভাষা ও শব্দমালা কবিতার ছান্দিক সুষমার মাধ্যমে হোক, গদ্যের গুরুভার অনবদ্যতার তরঙ্গ হিল্লোলে।’
কুরআন এমন এক মুজিজা যা হজরত মুহাম্মদ সা:-এর ওফাতের পরও পুরাপুরি কার্যকর আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন- ‘আমি আমার বান্দার কাছে যা নাজিল করেছি তাতে যদি তোমাদের কোনো সন্দেহ হয় তাহলে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা তৈরি করে আনো। আর যদি না পারো আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সব সাহায্যকারীকে ডাকো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ তখন ইসলামের কট্টর শত্রু আরবের বিশ্ববরেণ্য কবি সম্রাটদের পক্ষেও আল্লাহর সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হয়নি- তা সম্ভব হয়নি পরবর্তীকালের কোনো কবি-সাহিত্যিকের পক্ষেও। অতএব পবিত্র কুরআন বিশ্ববাসীর সামনে চিরদিন একটি জীবন্ত মুজিজা হয়ে অক্ষুণ্ণœ থাকবে।
লেখক : কবি ও গল্পকার


আরো সংবাদ



premium cement
বিশ্বের ৩ সেরা খেলোয়াড়ের একজন হবেন সাইম আইয়ুব : ফখর সংস্কারের মাধ্যমে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে : ভিপি নুর টিম কম্বিনেশনের জন্য দলের বাইরে ছিলাম : রিশাদ দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ আশিকের লাশ উত্তোলন জুনে ব্রাজিলে প্রথমবারের মতো মেড ইন বাংলাদেশ প্রদর্শনী সিংড়ায় যুবলীগ নেতার বিচার দাবিতে মানববন্ধন গাড়ি চালিয়ে মাকে নিয়ে লন্ডন ক্লিনিকে তারেক রহমান সিরিয়ার উপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে ইইউ এইচএমপিভি ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই : আইইডিসিআর ঢাকা জেলা দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি পাভেল, সম্পাদক নিরব ধামরাইয়ে ৫টি অবৈধ ইটভাটাকে ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

সকল