শীতে কষ্ট পাচ্ছে অসহায় মানুষ
- মো: লোকমান হেকিম
- ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শীতে কাঁপছে দেশ। দরিদ্র ও ছিন্নমূল অসহায় মানুষের জন্য শীতকাল বড় কষ্টের। শীতকাল এলেই দরিদ্র অসহায় মানুষ শীতে জবুথবু হয়ে যায়। খাবারের চেয়েও তাদের শীত নিবারণ অতীব প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শৈত্যপ্রবাহের রুক্ষতা থেকে রক্ষা পাওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থাপনাও তাদের থাকে না। ফলে অসহায় ও হতদরিদ্রদের কষ্ট কেবল বেড়েই যায়। বৃদ্ধ, শিশু ও ফুটপাথের গরিব মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে মারাও যায়। হাড় কাঁপানো শীতের কবল থেকে তাদের রক্ষা করা এবং সামর্থ্যরে ভিত্তিতে সাহায্য সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা প্রত্যেক মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব। এটি অন্যতম একটি ইবাদতও বটে। হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে, দিন দিন শীতের তীব্রতা বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই এর তীব্রতা আরো বাড়বে। তাই এখনই দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং সৎ চেষ্টা। তীব্র শীতে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের রোগব্যাধি। সর্দি-কাশি, জ্বর, বমি বমি ভাব, হাঁপানি, ডায়রিয়া প্রভৃতি রোগ নিয়ে আসছেন হাসপাতালে। প্রাইভেট চিকিৎসকদের কাছেও আসছে একই ধরনের রোগে। শীত গরিব মানুষের জীবনকে অসহনীয় অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। একজন মানুষ হয়ে আর একজন অসহায় কর্মে অক্ষম মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে- ‘তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা জারিয়াত-১৯) একই বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন- ‘তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দীদের খাদ্য দান করে।’ (সূরা দাহর-৮) হজরত আবু সাঈদ রা: বলেন, হুজুর সা: বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে বস্ত্রহীনতায় ঢাকাতে কাপড় দিলে আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতে এর সবুজ কাপড় পরাবেন।’ (তিরমিজি) রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নাও, বস্ত্রহীন লোকদের বস্ত্র দাও এবং বন্দীকে মুক্ত করে দাও।’ (বুখারি) রাসূল সা: বলেন, ‘হে বনি আদম! যদি অর্থ দান করো, তাহলে ভালো হবে আর আটকে রাখলে ক্ষতি হবে।’ (আবু দাউদ) রাসূল সা: বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততক্ষণ বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন।’ (মুসলিম) প্রিয়নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘যে মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন। খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ (আবু দাউদ শরিফ) রাসূল সা: আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অপরের একটি জরুরত মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ হাজত পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’ (মুসলিম শরিফ) প্রিয়নবী সা: বলেছেন, ‘প্রতিটি সৎ কর্মই সদকা বা দান। হাসিমুখে কথা বলা সদকা। ভালো কাজে উৎসাহিত করা সদকা। খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট হওয়া সদকা। পথহারা মানুষকে পথ দেখানো সদকা। অসুস্থকে দেখতে যাওয়া সদকা। কাউকে পানি ঢেলে খাওয়ানো সদকা।’ (তিরমিজি) মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। মানুষ কি পেতে পারে না একটু সহানুভূতি। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজে সেই মানুষেরই একটি অংশ গরিব দুস্থ। তারা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলো তাদেরও ন্যায্যপ্রাপ্য। তাই এই তীব্র শীত আমাদের জন্য অনেক আনন্দদায়ক কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছেন? এই শীতে অসহায় গরিব বস্ত্রহীন কমের্ অক্ষম মানুষ কীভাবে রাত কাটাচ্ছে। প্রিয়নবী সা: বলেছেন, ‘শেষ বিচারের দিন আল্লাহ বলবেন- হে মানুষ! আমি অসুস্থ ছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাকে দেখোনি। আমি অভুক্ত ছিলাম, কিন্তু তোমরা খাবার দাওনি। মানুষ বলবে- তুমি তো রোগ ও ক্ষুধা থেকে মুক্ত। আল্লাহ বলবেন- অমুক অসুস্থ ছিল কিন্তু তোমরা তাকে দেখোনি। অমুক অভুক্ত ছিল কিন্তু তোমরা তাকে খাবার দাওনি।’ ( মুসলিম) এই শীতে আমাদের দেশে দরিদ্র ও ছিন্নমূল অসহায় মানুষের করুণ অবস্থা। তারা আমাদের মতো দামি গরম পোশাক তো দূরে থাক, সামান্য কাপড়টুকুই নেই। ছোট ছোট শিশুরা এই তীব্র শীতে কত কষ্টে আছে। তাই সবার প্রতি আহ্বান- আসুন, আমরা যে যা পারি তাই দিয়েই শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই।
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা