ইসলামের একজন আলোকিত চিন্তাবিদ মরিয়াম জামিলা
- মারজিয়া তাবাসসুম
- ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ইতিহাসে এমন বহু মানুষের জন্ম হয়েছিল যারা প্রাথমিকভাবে ভিন্ন ধর্মের হলেও ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে ইসলাম ধর্মে নিবিড় পরিচর্যায় ইসলামের ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন বীরত্বের সাথে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মরিয়াম জামিলা।
মরিয়াম জামিলা পূর্বে মার্গারেট মার্কস নামে পরিচিত ছিলেন। একজন ইহুদি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নারী যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে ওঠেন। তার জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৩ মে, নিউ ইয়র্কের একটি সচ্ছল ইহুদি পরিবারে। তার শৈশব কাটে একটি ধর্মীয় কিন্তু মুক্তচিন্তার পরিবেশে। তিনি ছোটবেলায় নানা মানসিক ও শারীরিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, যা তার আত্মিক জগতকে প্রভাবিত করে।
মরিয়াম জামিলা ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং অধ্যবসায়ী। যদিও তিনি নিউ ইয়র্কের সেরা স্কুলগুলোতে পড়াশোনা করেছিলেন, কিন্তু প্রথাগত শিক্ষা তাকে আত্মতৃপ্তি দিতে পারেনি। তিনি মানসিক চাপ এবং অসুস্থতায় ভুগতে থাকেন, যা তাকে জীবনের গভীর অর্থ খোঁজার দিকে ধাবিত করে।
কলেজ জীবনে তিনি ইতিহাস, দর্শন এবং ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন এবং একটি সময়ে তিনি ইসলাম নিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন।
১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি মরিয়াম জামিলার গভীর সহানুভূতি তৈরি হয়। তিনি ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের কষ্ট দেখে ব্যথিত হন এবং পশ্চিমা মিডিয়ার পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদনে হতাশা প্রকাশ করেন।
ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ তাকে প্রচণ্ড ব্যথিত করেছিল। মরিয়াম জামিলা মাত্র ১২ বছর বয়সে ‘আহমদ খলিল : একজন ফিলিস্তিনি আরব শরণার্থীর জীবনী’ শিরোনামে একটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এই গল্পে তিনি একজন ফিলিস্তিনি শরণার্থী ও তার পরিবারের জীবনের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি নিজেই পেনসিল স্কেচ ও রঙিন অঙ্কনের মাধ্যমে বইটি অলঙ্কৃত করেছিলেন।
মরিয়াম জামিলা তার কৈশোরে বিভিন্ন ধর্ম ও দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং সত্য অনুসন্ধানের জন্য ব্যাপক গবেষণা শুরু করেন। তিনি ইহুদি, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। কিন্তু তিনি কেবল ইসলাম ধর্মেই শান্তি খুঁজে পান এবং সেখান থেকেই ইসলামের প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হয়। তিনি কুরআনের ইংরেজি অনুবাদ পড়েন। এ ছাড়াও তিনি মুহাম্মদ আসাদের ‘দ্যা রোড টু মক্কা’ পড়েও ইসলাম ধর্মের প্রতি অনুপ্রাণিত হন। তিনি দেখতে পান, ইসলামই তার আত্মিক অশান্তি দূর করতে পারে। তিনি মাওলানা আবুল আলা মওদূদীর লেখা থেকে গভীরভাবে প্রভাবিত হন এবং তার সাথে চিঠিপত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করেন।
১৯৬১ সালে, ২৭ বছর বয়সে, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মরিয়াম জামিলা নাম গ্রহণ করেন। এর পরের বছর তিনি মাওলানা মওদূদীর আমন্ত্রণে পাকিস্তানে যান এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
পাকিস্তানে আসার পর মরিয়াম জামিলা মাওলানা মওদূদীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুহাম্মদ ইউসুফ খান নামে একজন ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। তাদের দাম্পত্য জীবন ছিল শান্তিপূর্ণ এবং তারা একসাথে ইসলামের সেবা করে গেছেন। তাদের পাঁচটি সন্তান ছিল, যারা সবাই ইসলামী শিক্ষা ও আদর্শে বড় হয়েছে (যদিও একটি সন্তান ছোট্ট অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন)।
মরিয়াম জামিলা ছিলেন একজন গভীর চিন্তাশীল এবং সাহসী লেখক। তার ৩০টিরও বেশি গ্রন্থ ইসলামের মৌলিক দর্শন, পশ্চিমা সভ্যতার সমালোচনা এবং আধুনিক বিশ্বে ইসলামের প্রাসঙ্গিকতার ওপর আলোকপাত করে। তার উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো :
1. Islam and Modernism
2. Why I Embraced Islam
3. Islam Versus the West
4. Western Civilization : Condemned by Itself
এ ছাড়াও তার বইগুলো বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়। যেমন- আরবি, ফারসি, ইন্দোনেশীয়, তুর্কি, ইংরেজি ও বাংলা প্রভৃতি।
তার যাবতীয় রচনা, বক্তব্য, ভিডিও ক্যাসেট, চিত্রকর্ম বর্তমানে নিউ ইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে।
তিনি পশ্চিমা সভ্যতার নৈতিক অবক্ষয়ের সমালোচনা করেন এবং দেখান যে ইসলামী জীবনব্যবস্থা কিভাবে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে পারে।
তিনি একটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন। তার নিজ পরিবার এবং সমাজের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি ইসলামের পথে অবিচল ছিলেন। তার রচনায় গভীর জ্ঞান ও যুক্তির প্রতিফলন ঘটে। তিনি পারিবারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইসলামী চিন্তাধারার প্রচারে নিবেদিত ছিলেন।
মরিয়াম জামিলার জীবন আমাদের শেখায় সত্যের পথে অবিচল থাকা এবং ইসলামী জীবনব্যবস্থার প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস রাখার গুরুত্ব। তার চিন্তা ও কর্ম থেকে আমরা শিখতে পারি, জীবনের প্রকৃত অর্থ অনুসন্ধান।
ইসলামের আদর্শকে আধুনিক জীবনযাত্রার সাথে সামঞ্জস্য করা এবং জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে আত্মিক উন্নতি সাধন।
মরিয়াম জামিলা ২০১২ সালের ৩১ অক্টোবর, পাকিস্তানের লাহোরে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে ইসলামী জগৎ এক বিশিষ্ট চিন্তাবিদকে হারায়।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা