ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা-বিপদাপদ
- মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
- ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মুমিন বলা হয় যিনি মনে-প্রাণে আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসূলগণ, ফেরেশতাগণ, আসমানী কিতাবসমূহ, পরকাল, তাকদিরের ভালোমন্দ ও পুনরুত্থানকে বিশ্বাস করেন। ফলে মুমিন কঠিন বিপদেও অধৈর্য হয় না, ভেঙে পড়ে না এবং দুর্বল হয় না। আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসূলদেরও বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেছেন।
বিপদাপদে মুমিনের ঈমান বাড়ে : একশ্রেণীর মানুষ বিপদাপদে ঈমানহারা হয়। তারা বলে এই কারণে বিপদ এসেছে, অমুক বিপদ সৃষ্টি করেছে, অমুকের অন্যায়ের কারণে বিপদ এসেছে, অমুকের পাপের কারণে এই মুসিবত এসেছে। ভালো-মন্দ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করেন। বিপদাপদ এলে মুমিন আল্লাহ তায়ালাকে অধিক পরিমাণে ডাকে, তাঁর কাছে দোয়া করে, শেষ রাতে উঠে নামাজ পড়ে, কান্নাকাটি করে। মুমিন মনে করে এ বিপদ থেকে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই মুক্তি দিতে পারেন। এতে মুমিনের মর্যাদা অনেক বেড়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সিজদা করো এবং আমার নিকটবর্তী হও। (সূরা আলাক : ১৯) মুমিন অধিক পরিমাণে ইবাদত করার ফলে আল্লাহর কাছে চলে যায় এবং তাঁর প্রিয়ভাজন হয়ে যায়। আর বিপদাপদ থেকেও মুক্তি লাভ করে।
বিপদাপদ আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে : পৃথিবীর কোনো কাজ আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া হয় না। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, কোনো পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোনো শস্যকণা মৃত্তিকার অন্ধকারে পতিত হয় না এবং কোনো আর্দ্র ও শুষ্ক দ্রব্য পতিত হয় না, কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে। (সূরা আন আনয়াম : ৫৯)। আরো ইরশাদ করেন, যে শহর উৎকৃষ্ট তার ফসল তার প্রতিপালকের নির্দেশে উৎপন্ন হয়। (সূরা আরাফ : ৫৮) আরো ইরশাদ করেন, আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে কারো উপর কোনো বিপদ আসে না এবং সে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে, আল্লাহ তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। (সূরা তাগাবুন : ১১)
বিপদাপদ পূর্ব নির্ধারিত : বিপদাপদ পূর্ব থেকেই নির্ধারিত। সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগেই কার কী ঘটবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপদাপদ আসে, তা সবই আমি কিতাবে তথা লওহে মাহফুজে জগত সৃষ্টির (৫০ হাজার বছর) আগে লিখে রেখেছি। (সূরা আল হাদীদ : ২২) অতএব দুনিয়ার বিপদাপদ, রোগব্যাধি, দুঃখ-কষ্ট সবই পূর্বের লিখন অনুযায়ী সঙ্ঘটিত হয়। ফলে মুমিন বিপদাপদে অধৈর্য হয় না, বরং আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখে।
বিপদাপদ হস্ত অর্জিত কর্মের ফল : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তোমাদের ওপর যেসব বিপদাপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (সূরা আশশুরা : ৩০) হজরত হাসান থেকে বর্ণিত আছে যে, এ আয়াত নাজিল হওয়ার পর মহানবী সা: বলেছেন, সে সত্তার কসম, যার নিয়ন্ত্রণে আমার প্রাণ, যে ব্যক্তির গায়ে কোনো কাঠের আঁচড় লাগে, অথবা কোনো শিরা ধড়ফড় করে অথবা পা পিছলে যায়, তা সবাই তার গুনাহের কারণে হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক গুনাহের শাস্তি দেন না, বরং যেসব গুনাহের শাস্তি দেন না সেগুলোর সংখ্যাই বেশি। (তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন)
ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা : মুমিনের বিপদাপদ পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি, ফল ও ফসলের বিনষ্টের মধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের, যখন তারা বিপদে পতিত হয় তখন বলে, অবশ্যই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। (সূরা আল বাকারা : ১৫৫-১৫৬)
বিপদাপদে করণীয় : বিপদাপদে মুমিনের করণীয় হলো-
১. ধৈর্যধারণ করা : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজ দ্বারা সাহায্য প্রার্থনা করো। অবশ্যই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা বাকারা : ১৫৪) বিপদে অবৈধ হয়ে কোনো লাভ নেই। বিপদ থেকে উত্তরণ ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্যও চাই ধৈর্য। আর এজন্য চাই মজবুত ঈমান, বলিষ্ঠ মনোবল, নিষ্ঠার সাথে আমল এবং আল্লাহর ওপর চরম আস্থা।
২. সাহায্য প্রার্থনা করা : নামাজ হলো মুমিনের মিরাজ এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ- সিজদা করুন এবং আমার নৈকট্য অর্জন করুন। (সূরা আলাক : ১৯) মহানবী সা: বলেন, বান্দাহ যখন নামাজে ইয়্যাকা নাসতাইন (আমরা আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি) বলে, তখন আল্লাহ জবাব দেন, আমার বান্দাহ যা চায় আমি তা দান করি। (সহিহ মুসলিম) মহানবী সা: যে কোনো বিপদাপদের সময় নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। মুমিনরা বিপদাপদে অধিক নামাজ পড়েন এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করেন।
৩. আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা : মুমিন মনে করে বিপদ আল্লাহর ইচ্ছায় এসেছে। তাই সে উচ্চারণ করে- ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ এর মর্মার্থ হলো আমাদের জান, মাল, শান্তি, সুখ, আরাম-আয়েশ, সমৃদ্ধি, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তিসহ যা কিছু আছে সব কিছুর মালিক আল্লাহ। তিনিই বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। তাই মুমিন আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
৪. দুনিয়াপ্রীতি বর্জন করা : দুনিয়াপ্রীতি বর্জন করতে পারলে পার্থিব বিপদাপদ তুচ্ছ মনে হবে। হজরত ওহাব ইবন মুনাব্বিহ রা: বলেন, হজরত ঈসা আ: তাঁর অনুসারীদের বলতেন, আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে যার দুনিয়াপ্রীতি বেশি, বিপদ-মুসিবত নিয়ে তারই দুশ্চিন্তা বেশি।
লেখক : প্রধান ফকিহ্, আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা