মন ভালো করার উপায়
- নাজমুল হুদা মজনু
- ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ক্ষণস্থায়ী এই রঙিন দুনিয়ায় মানুষ কত কিছু চায় কিন্তু কতটুকু পাওয়া যায়? আর না পাওয়ার এই বেদনা থেকেই মূলত মানুষের মন খারাপ হয়। তখন মানুষ বেকারার হয়ে এ থেকে পরিত্রাণ খোঁজে। মানুষের এই অস্থিরতা কেবল কষ্টই বাড়ায়। তবে মন ভালো করার উপায় আল্লাহ তায়ালার পবিত্র কালাম কুরআনুল কারিম ও প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। মন নিয়ে মনকাড়া, মনে দাগকাটা দারুণ সব শব্দচয়ন মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বিদ্যমান। হৃদয়-মন-অন্তর সম্পর্কে মানুষের উদাসীনতা ও অকৃতজ্ঞতার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তিরস্কার করেছেন।
‘(হে নবী,) তুমি (এদের) বলে দাও (হ্যাঁ), তিনিই তোমাদের পয়দা করেছেন, তিনি তোমাদের (শোনার ও দেখার জন্য) কান এবং চোখ দিয়েছেন, আরো দিয়েছেন (চিন্তা করার মতো) একটি অন্তর কিন্তু তোমরা খুব কমই (এসব দানের) কৃতজ্ঞতা আদায় করো।’ (সূরা মুলক-২৩) রাহমাতুল্লিল আলামিন রাসূলুল্লাহ সা: কোনো ব্যাপারে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে রাহমানির রাহিম আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শরণাপন্ন হতেন; কাকুতি-মিনতি করে দয়াময় দাতা মহীয়ান গরিয়ান আল্লাহ তায়ালার দরবারে একনিষ্ঠভাবে মুনাজাতে নিমগ্ন হতেন। এ ব্যাপারে অনেক হাদিস রয়েছে।
আনাস ইবনে মালিক রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা: আবু তালহাকে বলেন, ‘তোমাদের ছেলেদের মধ্য থেকে একটি ছেলে খুঁজে আনো, যে আমার খেদমত করতে পারে। এমনকি তাকে আমি খায়বারেও নিয়ে যেতে পারি। এরপর আবু তালহা রা: আমাকে তার সাওয়ারির পেছনে বসিয়ে নিয়ে চললেন। আমি তখন প্রায় সাবালক। আমি আল্লাহর রাসূল সা:-এর খেদমত করতে লাগলাম। তিনি যখন অবতরণ করতেন, তখন প্রায়ই তাকে এই দোয়া পড়তে শুনতাম : হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে পানাহ চাচ্ছি।’ (বুখারি-২৮৯৩) মনে রাখতে হবে- দুনিয়ার জীবনে মানুষের চলার পথ সবসময় কুসুমাস্তীর্ণ নয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে বলেন- ‘আমি মানুষকে এক কঠোর পরিশ্রমের মাঝে পয়দা করেছি।’ (সূরা আল-বালাদ-৪)
উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- জীবন মানেই পরিশ্রম : আর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মুহূর্ত থেকে শুরু হয়ে যায় তার কঠিন জীবন সংগ্রাম, যা প্রতি পদে পদে যন্ত্রণাদায়ক? সর্বপ্রথম শুরু হয় এমন এক পরিবেশে ভ্রুণটির শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার সংগ্রাম, যা তার কাছে সম্পূর্ণ নতুন ও অপরিচিত এবং এ কাজটি তার জন্য একেবারেই নতুন এক অভিজ্ঞতা। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সর্বপ্রথম সে চিৎকার দিয়ে মুখ খোলে এবং ফুসফুস যন্ত্রকে সম্প্রসারিত করে দিয়ে সজোরে দম বের করে জানায়, দুনিয়ায় তার বেঁচে থাকাটা অত্যন্ত কষ্টকর ব্যাপার এবং কোনোভাবেই তা সহজ নয়। আরো জানা যায়, এখন থেকে শুরু হয়ে গেল তার বাঁচার জন্য কষ্টকর সংগ্রাম। এ সময় থেকেই শুরু হয়ে যায় তার হজম শক্তিকে কাজে লাগানো এবং রক্ত সঞ্চালন ক্রিয়াজনিত অস্বাভাবিক অজানা এক পদ্ধতি। শিশু যখন হামাগুড়ি দেয়া শুরু করে এবং যখন দাঁড়াতে শেখে এ অবস্থা যেই দেখে, সে বুঝতে পারবে তার তুচ্ছ ও প্রাথমিক এ কাজগুলো কত কঠিন। দাঁত ওঠার সময় কিছু কষ্ট হয়। যখন দাঁড়াতে শেখে তখনো কষ্ট হয়। যখন হাঁটতে শেখে তখনো হয় এ রকম কষ্ট। যখন লেখাপড়া শেখে, তখন হয় আরেক ধরনের কষ্ট।
যখন বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা লাগে, তখনো হয় অন্য আর এক প্রকারের কষ্ট। এভাবে প্রতিটি নতুন অভিজ্ঞতার সময় পৃথক পৃথক ধরনের চিন্তা ও দুর্ভোগ আসে। যেমন হামাগুড়ি দেয়ার সময় এক রকম কষ্ট আবার চলতে শুরু করলেও হয় প্রায় ওই একই রকমের পেরেশানি। তারপর জীবনের পথ বিভিন্ন হয়ে যায় এবং চেষ্টা-সংগ্রামও বিভিন্ন রূপ নেয়। কেউ কেউ সংগ্রাম করে পেশিশক্তি দিয়ে, কেউ সংগ্রাম করে মানসিক শক্তি বা চিন্তাশক্তি দিয়ে, আবার কেউ সংগ্রাম করে আত্মশক্তি দিয়ে। কেউ সংগ্রাম করে ভাত-কাপড়ের জন্য, জীবনে বেঁচে থাকার তাগিদে, আবার কেউ চেষ্টা-সংগ্রাম করে হাজার থেকে লাখ টাকা বৃদ্ধি করে পুঁজির পাহাড় গড়তে? কেউ নিজেকে পেরেশানিতে ফেলে পদমর্যাদা অথবা ক্ষমতার মোহে, আবার কেউ আল্লাহর পথে টিকে থাকার জন্য চেষ্টা-সংগ্রাম করে। (তাফসির ফি জিলাল কুরআন)
কুরআন-হাদিসের আলোকে জীবন পরিচালনা করার চেষ্টা-প্রচেষ্টা করলে হৃদয়-মন-চিত্ত ভালো হয়ে যায়, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের বাতায়ন উন্মোচন হয় এবং অন্তর প্রশান্তি লাভ করে; এটি পরীক্ষিত। আরেকটি চিরন্তন সত্য হচ্ছে- মৃত্যু অবধারিত। তাই এই অনিবার্য অবস্থায় আল্লাহমুখী হয়ে তাঁর মধুমাখা নামের জিকিরের বিকল্প নেই। আর এ হচ্ছে মন ভালো করার শ্রেষ্ঠ উপায়।
কুরআন মাজিদে সাবধান করা হয়েছে-‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর আমি ভালো ও মন্দ অবস্থার মধ্যে ফেলে তোমাদের সবাইকে পরীক্ষা করছি, শেষ পর্যন্ত তোমাদের আমার দিকে ফিরে আসতে হবে।’ (সূরা আম্বিয়া-৩৫)
ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অশান্ত দুনিয়ায় শান্তি পেতে হলে সবাইকে আল্লাহর স্মরণে মগ্ন হতে হবে। কেননা, আল্লাহ তায়ালার আমিয় বাণী অন্তরে অঙ্কিত করা প্রত্যেকের জন্য অবশ্যকরণীয় কর্তব্য। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-‘যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে এবং আল্লাহর জিকিরে তাদের অন্তঃকরণ প্রশান্ত হয়, জেনে রেখো, আল্লাহর জিকির অন্তরসমূহ প্রশান্ত করে; যারা ঈমান আনে এবং নেককাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে যাবতীয় সুখ ও শুভ পরিণাম।’ (সূরা আর-রাদ : ২৮-২৯)
জীবন সায়াহ্নের ব্যাপারে মহা দয়াবান ও মহামহিম প্রতিপালক আল্লাহ জাল্লা শানুহু কুরআনুল কারিমে তার প্রিয় বান্দাদের উদ্দেশে বর্ণনা করেছেন- ‘(নেককার বান্দাদের বলা হবে,) হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমার মালিকের কাছে ফিরে যাও সন্তুষ্টচিত্তে ও তাঁর প্রিয়ভাজন হয়ে, এপর তুমি আমার প্রিয় বান্দাদের দলে শামিল হয়ে যাও। (আর) আমার (অনন্ত) জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সূরা আল-ফজর : ২৭-৩০)
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা