সন্তানকে দ্বীনি জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার গুরুত্ব
- মুহাম্মাদ ওমর ফারুক আল উসমানী
- ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের জীবনকে সন্তান-সন্ততির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় করেছেন। প্রতিটি সন্তান তার মা-বাবার অমূল্য সম্পদ, আরাধ্য ধন, শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। পৃথিবীর প্রতিটি ঘরে প্রতিটি মানুষ সন্তান কামনা করে। নর-নারী বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর প্রতিটি দম্পতির এটিই আকাক্সক্ষা থাকে যে, তাদের কোলজুড়ে সন্তান আসবে। ফুটফুটে চেহারায় স্বচ্ছ-কোমল অন্তর নিয়ে হাসবে। সন্তানের উপস্থিতি যেমন মা-বাবার হৃদয়ে আনন্দ দান করে, তেমনি গৃহের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। পারিবারিক জীবনে যারা নিঃসন্তান তারাই বুঝেন সন্তান না থাকার যন্ত্রণা।
হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘প্রতিটি নবজাতক তার স্বভাবজাত দ্বীন-ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার মা-বাবা তাকে ইহুদি, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক হিসেবে গড়ে তোলে।’ (সহিহ বুখারি-১৩৫৮)
হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘দ্বীনী ইলম শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, পৃষ্ঠা-৩৪)
সুতরাং যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা সন্তান দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন, তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে এই নিয়ামতের যথাযথ কৃতজ্ঞতা আদায় করা। মা-বাবার জন্য বড় ব্যর্থতা হবে যদি সন্তানকে ইসলামী আদর্শে গড়ে তুলতে না পারেন। শিশুকে লালন-পালন ও বড় করে তোলার ক্ষেত্রে মা-বাবা পরস্পরে পরিপূরক ভূমিকা পালন করেন।
আল্লাহর হুকুম-আহকাম পালন করাই মানুষের প্রকৃত দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রতিটি মানুষের উপর যেমন রয়েছে স্রষ্টার অধিকার, তেমনি অপর দিকে রয়েছে সৃষ্টির অধিকার। স্রষ্টা ও সৃষ্টির অধিকার সুন্দররূপে আদায়ের জন্য সন্তানের উন্নত মন-মানসিকতা গঠনের ব্যাপারে মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি শিশুই আগামীর কর্ণধার। আজকের শিশু একদিন বড় হয়ে সমাজে নিজ নিজ অবস্থান দখল করবে। ওরাই একদিন হবে হাফেজ, আলেম, মুফতি ও দ্বীনের রাহবার। ওরাই একদিন হবে কবি, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক। ওরাই একদিন হবে চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও আইনজীবী। ওরাই একদিন হবে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও সমাজকর্মী। ওরাই একদিন হবে দেশ ও জাতির অতন্দ্র প্রহরী, সৈনিক ও বীর সেনাপতি। প্রত্যেক শিশুর মধ্যেই তার ভবিষ্যৎ জীবনের সম্ভাবনা সঙ্গোপণে লুকিয়ে থাকে। আপনার সন্তানকে আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে আপনার ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। এ জন্য আপনার করণীয় হলো, শিশুর ভেতরকার সুপ্ত মেধাশক্তিকে ইসলামের সুমহান আদর্শে বিকশিত করা। শিশুর কোমল মস্তিষ্কে ধর্মীয় ও জাগতিক উত্তম গুণাবলি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়া। শিশুর নরম হৃদয়ে মানবিকতা ও নৈতিকতার বীজ বপন করা। অপসংস্কৃতির সয়লাব থেকে বাঁচার জন্য তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করা। তাদের মধ্যে বীরত্ব-দৃঢ়তা সৃষ্টি করা এবং ভীরুতা-কাপুরুষতা পরিহারের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
সন্তানকে ধর্মবিমুখতার জন্য স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া সন্তান হত্যা করার মতোই অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন- ‘তোমরা দারিদ্র্যের কারণে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না।’ (সূরা আনআম, আয়াত-১৫১)
আয়াতে বর্ণিত সন্তান হত্যা যে অপরাধ ও কঠোর গুনাহ, তা বাহ্যিক হত্যা ও মেরে ফেলার অর্থে তো সুস্পষ্টই। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়, সন্তানকে ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষা না দেয়া এবং তার চরিত্র গঠন না করা, যদ্দরুন সে আল্লাহ, রাসূল ও পরকালের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে এবং চরিত্রহীন ও নির্লজ্জ কাজে জড়িত হয়ে পড়ে, এটিও সন্তান হত্যার চেয়ে কম মারাত্মক নয়। কুরআনের ভাষায় সে ব্যক্তি মৃত, যে আল্লাহকে চিনে না এবং তার আনুগত্য করে না। যারা সন্তানদের কাজকর্ম ও চরিত্র সংশোধনের প্রতি গুরুত্ব দেয় না, তাদেরকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয় কিংবা এমন ভ্রান্ত শিক্ষা দেয়, যার ফলে ইসলামী চরিত্র ধ্বংস হয়ে যায়, তারাও একদিক দিয়ে সন্তান হত্যার অপরাধে অপরাধী। বাহ্যিক হত্যার প্রভাবে তো শুধু ক্ষণস্থায়ী জাগতিক জীবন বিপর্যস্ত হয়, কিন্তু এই হত্যা মানুষের পারলৌকিক ও চিরস্থায়ী জীবনের মূলেও কুঠারাঘাত করে। কাজেই মা-বাবাকে সতর্ক থাকতে হবে, সন্তানকে তার স্বভাবজাত গুণ ইসলামী আদর্শে গড়ে তুলতে হবে।
হজরত উসমান রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে কুরআন মাজিদ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস-৪৬৬১)
কুরআন শিক্ষাকারী ব্যক্তিকে আল্লাহর রাসূল সা: সর্বোত্তম ব্যক্তি বলেছেন। এমন কোনো মা-বাবা খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে তার সন্তান সর্বোত্তম হোক এটি চায় না। তাই উত্তম হওয়ার যে মাপকাঠি তথা কুরআন শিক্ষা করা, তা না করে তো কেউই উত্তম হতে পারবে না। কুরআনের জ্ঞান না শিখে পৃথিবীর সব জ্ঞান-বিজ্ঞান শিখে নিলেও সেই ব্যক্তিকে সর্বোত্তম বলা যাবে না। তাই সবার আগে সন্তানকে কুরআনের জ্ঞান শিক্ষা দেয়া জরুরি। সন্তানকে যদি মা-বাবা কুরআনের জ্ঞান শিক্ষা দেন, তাহলে তারা পরকালে অশেষ মর্যাদার অধিকারী হবেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সন্তানদের দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
লেখক : ইমাম ও খতিব, বাইতুন নূর জামে মসজিদ, বরাইয়া, কালিগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা