দুনিয়া, আখিরাতের শস্যক্ষেত্র
- ডা: মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
- ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পরকালের চিন্তা মানুষের পার্থিব জীবনকে সুশৃঙ্খল করে এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে। এ জন্য পবিত্র কুরআনের একাধিক স্থানে আল্লাহ ধর্মীয় দায়িত্ব ও পরকালীন জীবনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে- ‘আর আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্তগুলো পেশ করেন, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত-২৫)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা প্রাধান্য দাও চিরস্থায়ী জীবনকে ক্ষণস্থায়ী জীবনের ওপর। আর মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো আখিরাত বা পরকাল।’ দুনিয়া হচ্ছে পরকালের জন্য আমলের সঞ্চয় জমানোর স্থান। এ স্থানে মানুষ সুনির্দিষ্ট সময় অবস্থান করে উত্তম আমল ও আখলাকের মাধ্যমে চিরস্থায়ী জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করে।
দুনিয়া মহব্বত ততটুকু করতে হবে; যতটুকু করলে পরকালের পাথেয় সংগ্রহে যথেষ্ট হবে। কারণ দুনিয়া হলো মানুষের প্রয়োজন পূরণের স্থান। আর রাসূলে আকরাম সা:-এর ঘোষণায় তা হলো পরকালে আবাদ ভূমি। তিনি বলেছেন, ‘দুনিয়া আখিরাতের শস্যক্ষেত্র’।
আখিরাতের সম্বল সংগ্রহে মানুষকে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে একটা সময় বেঁধে দিয়েছেন। কর্মের স্বাধীনতা দিয়েছেন। ভালো-মন্দ সংমিশ্রণ করে বিবেক বা জ্ঞানের পরীক্ষায় ফেলেছেন। দুনিয়ায় কাজ-কারবার, স্ত্রী-পুত্র, বন্ধু-বান্ধব, ধন-সম্পদ, রং-তামাশা ও সংসার দিয়েছেন।
আবার এ জীবন-সংসারকে সুন্দর ও সুচারুরূপে পরিচালনা করার জন্য বিধান দিয়েছেন। অন্তরে দুনিয়ার প্রেম-মহব্বত খুব বেশি দিয়েছেন। এ সবই মানুষের জন্য পরীক্ষা।
দুনিয়ার এ পরীক্ষাগারে মানুষের জীবনাচারই প্রকৃত উদ্দেশ্য নয়; বরং মানবজীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো আখিরাত বা পরকাল। যেখানে জীবনের শুরু আছে শেষ নেই। তাই দুনিয়ার এ নির্ধারিত ক্ষণস্থায়ী জীবনের মোহে পড়ে পরকালের পাথেয় সংগ্রহ থেকে উদাসীন হওয়া যাবে না।
দুনিয়ার জীবনের প্রেম-মোহ যেন মানুষকে অমনোযোগী করে না ফেলে এ জন্য আল্লাহ তায়ালা কুরআনে পাকে সুস্পষ্ট ভাষায় সতর্কবার্তা তুলে ধরেছেন- “তোমরা জেনে রেখো, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক গর্বপ্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এর উপমা হলো ‘বৃষ্টি’, যার দ্বারা উৎপন্ন শস্যভাণ্ডার কৃষকদের চমৎকৃত করে, তারপর তা শুকিয়ে যায়। ফলে তুমি তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। অবশেষে তা খড়কুটায় পরিণত হয়। পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। দুনিয়ার জীবন ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছুই নয়।” (সূরা হাদিদ, আয়াত-২০)
আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রকৃত বন্ধু ও অভিভাবক। তিনিই মানুষকে অতি ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। যে কারণে আল্লাহ দুনিয়ার এ পরীক্ষাগারে কোনো মানুষকেই রিজিক, আলো-বাতাসসহ তাঁর প্রদত্ত কোনো নিয়ামত থেকেই বঞ্চিত করেননি। ভালো-মন্দের চূড়ান্ত ফয়সালা যা হওয়ার; তা হবে পরকালে।
সুতরাং কুরআনের সতর্কবার্তার পর প্রিয়নবী সা:-এর সতর্কবার্তাও মানুষের সঠিক পথে চলার পাথেয়। তিনি বলেছেন, ‘সাবধান! দুনিয়া অভিশপ্ত তবে আল্লাহর স্মরণ (বিধি-বিধান পালন) তাঁর প্রিয় আমল। আর আলেম ও মুতাআল্লিম (জ্ঞানী ও জ্ঞান অন্বেষণকারী) ছাড়া পৃথিবীতে যত কিছু আছে সবই অভিশপ্ত।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। জীবন থেকে সময় একবার অতিক্রান্ত হলে তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। তাই মানবজীবনকে প্রবহমান নদীর সাথে তুলনা করা হয়। স্মরণযোগ্য কথা হলো, দুনিয়া ও পরকাল পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থানের জায়গা। যার একটিকে প্রাধান্য দিতে গেলে অন্যটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই দুনিয়াকে পরকালের পাথেয় সংগ্রহের স্থান মনে করে সঠিক পথে চলতে হবে।
দুনিয়াকে আমলের স্থান হিসেবে মর্যাদা দিয়ে আল্লাহর বিধানের হক আদায় করতে হবে। আর পরকালকে চূড়ান্ত জীবনকাল মনে করে দুনিয়ার নিয়ামতগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। তবেই আসবে সফলতা। তবেই সার্থক হবে প্রিয়নবীর ঘোষণা, ‘দুনিয়া পরকালের শস্যক্ষেত্র’।
তাই সঠিক পথে চলার জন্য প্রিয়নবী সা:-এর অমীয় বাণীকে অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াকে মহব্বত করল সে তার পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করল। আর যে ব্যক্তি পরকালকে মহব্বত করল সে তার দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করল। সুতরাং তোমরা অস্থায়ী বস্তুর ওপর চিরস্থায়ী বস্তুকে প্রাধান্য দাও।’ (মুসনাদে আহমাদ, বায়হাকি, মিশকাত)
মানুষকে পরকালের পাথেয় সংগ্রহের নসিহত প্রদান করে অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘দুনিয়া পেছনের দিকে চলে যাচ্ছে। আর পরকাল সামনে চলে আসছে। (মানুষের অন্তরে) এ দু’টির প্রতিটিরই রয়েছে (প্রবল) আসক্তি। সুতরাং তোমরা পরকালের প্রতি আসক্ত হও। দুনিয়ায় আসক্ত হইও না। কারণ এখন (দুনিয়া) আমলের সময়; কিন্তু (কোনো) হিসাব নেই। আর আগামীকাল (পরকাল) হবে হিসাবের; সেখানে আমল করার (কোনো) সুযোগ নেই।’ (বুখারি)
লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা