রাসূল সা:-এর আদর্শ মা-শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা
- অধ্যাপক আসাদুজ্জামান আসাদ
- ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
হজরত রাসূল সা: মানব জাতির মুক্তির দিশারী। ব্যক্তি, পরিবার সমাজ, রাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, সমরনীতি, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যনীতি, শিক্ষানীতিসহ সব ক্ষেত্রে ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী। মানব জীবনে তার আর্দশ অনুসরণীয় বটে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আর্দশ।’ (সূরা আহজাব) আরো বলেন- ‘আমি তোমাকে বিশ^বাসীর জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। রাসূল সা: বলেন, ‘প্রত্যেক শিশু নিজ ফিতরাতে জন্মগ্রহণ করে।’ সে হিসেবে সুস্থ, সবল ও সাহসী জাতি গঠনের সুস্থ শিশুর কোনো বিকল্প নেই। শিশুর জন্মের পর একজন মা-ই শিশুকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। এ কারণে সুস্থ মায়ের পাশাপাশি, সুস্থ শিশুর প্রয়োজন। বিশ^ নবী সা:-এর আদর্শই হচ্ছে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা করা। তাদের সুস্থ রাখার জন্য রাসূল সা: বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে নিয়ে সততাপূূর্ণ ও সুখময় জীবন উপভোগ করো।’ (সূরা নিসা-১৯) তাই পরবর্তী বংশ ধারা বিস্তারে ইসলাম বিয়ে বন্ধনের সুব্যবস্থা রয়েছে। দাম্পত্য জীবন, মহাসুখের জীবন। স্বামী-স্ত্রীর সুখের মিলনে শিশুসন্তান মায়ের গর্ভে আসে। সময়ের ব্যবধানে প্রসব লাভ করে। স্বামী সবসময় স্ত্রীর ভালোবাসায় উদগ্রীব থাকে। একজন নেককার স্ত্রী, মায়ার বাঁধনে স্বামীকে বুকে জড়িয়ে রাখে। নিজেকে স্বামীর জন্য উজাড় করে দেয়। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসাময় সংসারেরই প্রকৃত সুখ। এ সুখ অর্থের বিনিময়ে সম্ভব না। ইরশাদ হচ্ছে- ‘স্ত্রীর ওপর স্বামীর যেমন অধিকার রয়েছে, সততা ও ন্যায়ানুগভাবে, স্বামীর ওপরও স্ত্রীর তেমন অধিকার রয়েছে।’ (সূরা বাকারা-২২৮) এ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, সর্ব অবস্থায় স্বামীর প্রতি স্ত্রীর, স্ত্রীর প্রতি স্বামী অধিকার রয়েছে। এ অধিকারে স্ত্রীর স্বাস্থ্যসেবা সংরক্ষিত রয়েছে। বিশ^নবী সা: বলেন, ‘স্ত্রীদের ক্ষেত্রে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা তো আল্লাহর আমানত রূপে তাদেরকে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর বাণী সূত্রে তাদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করে নিয়েছ।’ (মুসলিম) পিতার সার্থকতা পিতৃত্বে, মায়ের সার্থকতা মাতৃত্বে। পিতা-মাতার পরিপূর্ণতাই হলো সন্তান। শিশুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। সে হিসেবে মায়ের গর্ভে আগত শিশুকে স্বাস্থ্যবান রাখা, পিতা-মাতা উভয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সন্তান মায়ের গর্ভে আসার আগে আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে হবে, আল্লাহ যেন স্বাস্থ্যবান সন্তান দান করেন। ইরশাদ হচ্ছে- ‘ওহে প্রভু! আমাকে নিঃসন্তান রেখে দেবেন না, আপনি তো সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী প্রদানকারী।’ (সূরা আম্বিয়া-৮৯) বিশ^নবী সা: বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তান থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখুন এবং আমাদেরকে যে সন্তান দেবেন তাকেও শয়তান থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখুন।’ (বুখারি) মাতৃগর্ভে শিশুরা মায়ের মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে। তাই মাকে সুস্থ রাখা জরুরি। ইরশাদ হচ্ছে- ‘সামর্থ্যবান তার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে। যার জীবিকায় অসচ্ছলতা রয়েছে সে আল্লাহ তাকে যতটুকু দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করবে।’ (সূরা তালাক)
ইসলাম শান্তির ধর্ম, সাম্যের ধর্ম। এ ধর্ম কারো প্রতি অবিচার করে না। মা যখন গর্ভ ধারণ করেন, তখন গর্ভস্থিত ও দুগ্ধপোষ্য শিশুর জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষায় মাকে তাৎক্ষণিকভাবে রোজা পালনের বাধ্যবাধ্যকতা নেই। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যে স্তন্যপান পূর্ণ করতে চায় তার জন্য মায়েরা তাদের সন্তানকে পূর্ণ দুই বছর স্তন্য পান করাবে। পিতার কর্তব্য যথার্থভাবে তাদের ভরণপোষণ করা। কাউকে তার সাধ্যতীত কার্যভার দেয়া হয় না। কোনো মাকে তার সন্তানের জন্য এবং কোনো পিতাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।’ (সূরা বাকারা-২৩৩)। বিশ^নবী সা: বলেন, ‘মুসাফিরের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা অর্ধেক নামাজ মওকুফ করে দিয়েছেন আর মুসাফির, গর্ভ ও দুগ্ধদানকারী মহিলার জন্য রোজা স্থগিত করেছেন। (তারিখে কবির) বিশে^র মহামানব রাসূল সা:-এর জীবন হচ্ছে উম্মতের জন্য আদর্শ। সেই নীতিমালা আমাদের জন্য যথাযথভাবে পালন করা সুন্নাত। যখন একটি শিশু মায়ের দুগ্ধ পান করে, তখন মা পূর্ণ গর্ভবতী হলে ওই মায়ের জন্য স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি হয়। ইসলাম ধর্ম এ ধরনের গর্ভ ধারণকে নিরুৎসাহিত করে।
বিশ^নবী সা: বলেন, ‘তোমরা পরোক্ষভাবে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। কারণ গায়লান তথা দুধ পানকালীন নতুন গর্ভ ধারণ অশ^ারোহণযোগ্য সন্তানের ওপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং তাকে ঘোড়ার পিঠ থেকে ফেলে দেয়। অর্থাৎ দুধ পানকারী শিশুকে দুর্বল ও শক্তিহীন করে দেয়।’ (আবু দাউদ) আকিকা দেয়া নবী সা:-এর সুন্নাত। বিশ^নবী সা: বলেন, ‘প্রত্যেক নবজাতক তার আকিকা না দেয়া পর্যন্ত দায়বদ্ধ থাকে। জন্মের সাত দিনে আকিকার পশু জবাই দেয়া, মাথা মুণ্ডন করা এবং নাম রাখা সমীচীন।’ (ইবনে মাজাহ)
আমরা মুসলিম। ইসলামী সংস্কৃতির ধারক-বাহক। সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে প্রত্যেক শিশুসন্তানকে সামর্থ্য অনুয়ায়ী খেলনাসামগ্রী কিনে দেয়া উচিত। খেলনা কিনে দেয়া পিতা-মাতার কর্তব্য। একদা বিশ^নবী সা: হজরত আয়শা রা:-এর কাছে গিয়ে দেখতে পেলেন, তার আশপাশে মেয়ে শিশুসদৃশ কতক খেলনাসামগ্রী রয়েছে এবং দুপাখা বিশিষ্ট একটি ঘোড়াও রয়েছে। রাসূল সা: বললেন, দুপাখা বিশিষ্ট ঘোড়া কেমন করে হয়। হজরত আয়শা রা: বলেন, কেন আপনি কি শোনেন নি যে, হজরত সোলায়মান আ:-এর বহু পাখাবিশিষ্ট অশ^দল ছিল? জবাব শোনে রাসূল সা: হেসে উঠে ছিলেন।’ (আবু দাউদ) জলিলুল কদর সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, একদা আমরা রাসূল সা:-এর সাথে ইশার নামাজ আদায় করেছিলাম। আমি দেখেছি যে, রাসূল সা: যখন সিজদায় যেতেন তখন হজরত হাসান ও হোসাইন রা: তার পিঠে চড়ে বসতেন। তিনি যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন পেছনে হাত দিয়ে দু’জনকে আলতোভাবে ধরে মাটিতে দাঁড় করাতেন। আবার তিনি সিজদায় গেলে তার পিঠে চড়ে বসতেন। এভাবে তিনি নামাজ শেষ করেছেন।’ (আহমাদ) একটি শিশুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে হবে। কোন পিতা-মাতাই শিশুকে অসুস্থ রাখতে চায় না। বিশ^নবী সা: চিকিৎসা গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করেছেন। রাসূল সা: বলেন, ‘যখন মহান আল্লাহ রোগ নাজিল করেন, তখন ওষুধও নাজিল করেন। তিনি প্রত্যেক রোগের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করেন। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা নেবে, তবে ওষুধ রূপে হারাম ও নিষিদ্ধ বস্তু ব্যবহার করবে না।’ (আবু দাউদ) সর্বোপরি বিশ^নবী সা:-এর আদর্শই হচ্ছে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা করা। এ কার্যক্রমে পিতা-মাতা ও স্বামীর অর্থ ব্যয় করা আল্লাহর পথে সর্বোত্তম সদকা। রাসূল সা: বলেন, ‘একটি দিনার যদি তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করো, একটি দিনার যদি তুমি দরিদ্রকে দান করো এবং একটি দিনার যদি তুমি পরিবারের জন্য ব্যয় করো তাহলে পরিবারে পিতা-মাতার জন্য ব্যয় করা মুদ্রায় তুমি বেশি সওয়াব পাবে।’ (মুসলিম)
পরিশেষে বলতে চাই, রাসূল সা: হলেন বিশ^বাসীর জন্য রাহমাতুল্লিল আলামিন। তাঁর প্রতিটি কথা, কর্ম, সমর্থন আমাদের জন্য আদর্শ। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘তোমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাও তাহলে রাসূলকে ভালোবাস। সুতরাং আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে রাসূল সা:-এর ভালোবাসা অর্জন করতে হবে।’ সে হিসেবে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্য়া করাই হলো রাসূল সা:-এর আদর্শ।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গ্রন্থকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা