মুসলিমদের অনৈক্য ও অর্জিত আজাব
- ফিরোজ মাহবুব কামাল
- ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পবিত্র কুরআনে যখন কোনো নির্দেশ দেয়া হয়- তখন সেটি প্রতিটি মুসলিমের ওপর ফরজ হয়ে যায়। আর যখন কোনো কিছু নিষেধ করার হয়-তখন সেটি হারাম হয়ে যায়। পবিত্র কুরআন এভাবেই হালাল-হারামের পথ দেখায়। মুসলিমদের মধ্যে একতা গড়াকে ফরজ এবং বিভক্তি গড়াকে হারাম করা হয়েছে সূরা আল-ইমরানের ১০৩ আয়াতে। এ প্রসঙ্গে নির্দেশ হলো, অর্থ-‘এবং তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রশিকে শক্তভাবে ধরো এবং পরস্পরে বিভক্ত হয়ো না।’ এভাবেই বিভক্ত হওয়াকে মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের জন্য হারাম করেছেন। সূরা আলে-ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে বিভক্তির শাস্তি হিসেবে প্রতিশ্রুতি শোনানো হয়েছে ভয়ানক আজাবের। অথচ পরিতাপের বিষয় হলো- মুসলিমরা বাঁচছে মহান আল্লাহ তায়ালা নির্দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিয়ে। সে বিদ্রোহের মাত্রা এতটাই প্রবল যে, তারা দল গড়ে, রাজনীতি করে এবং যুদ্ধ করে ভাষা, বর্ণ, অঞ্চল ও গোত্রের নামে বিভক্তির দেয়াল গড়ার লক্ষ্যে। ফলে মুসলিমরা আজ ৫৭টি দেশে বিভক্ত। এরূপ বিভক্তির কারণে মুসলিমদের শক্তি বাড়েনি; বরং বেড়েছে পরাজয়, অপমান ও জানমালের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি। সে পথেই বিদ্রোহের ভয়ানক শাস্তি অপেক্ষা করেছে আখিরাতে। বুঝতে হবে, প্রতিটি হারামের পথই জাহান্নামের পথ। তাই যারা ভাষা, গোত্র, এলাকা, ফেরকা ও দলের নামে মুসলিমদের বিভক্তির দেয়াল গড়ে তারা বস্তুত জনগণকে জাহান্নামে নেয়ার রাস্তা নির্মাণ করে। শয়তান ও ইসলামের শত্রুপক্ষ তো সেটিই চায়। বিভক্তি যে ভয়ানক আজাবও ডেকে আনে- সে ঘোষণাটি এসেছে সূরা আলে-ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে, অর্থ- ‘এবং তাদের মতো হয়ো না যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসার পরও পরস্পরে বিভক্ত হলো এবং বিবাদে লিপ্ত হলো; এরাই হলো তারা যাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক আজাব।’
তাই মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতিশ্রুত আজাবের মুখে পড়তে মূর্তিপূজারী, নাস্তিক, খুনি বা চোর-ডাকাত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, সে জন্য বিভক্তি ও বিবাদে লিপ্ত হওয়াটাই যথেষ্ট। তাই যারা বিভক্তির পথ বেছে নিলো অথচ আজাবে পতিত হলো না- সেটি বিরল। নিজেদের মধ্যে বিবাদ ও বিভক্তির কারণেই স্পেন থেকে মুসলিমদের প্রায় ৭০০ বছরের শাসন বিলুপ্ত হয়েছে। সে দেশে নিহত হয়েছে লাখ লাখ মুসলিম এবং ধর্ষিতা হয়েছে হাজার হাজার মুসলিম রমণী। অথচ সে সময় স্পেনের মুসলিমরা দরিদ্র ছিল না; বরং বিপুল প্রাচুর্য ছিল সম্পদের এবং বিশাল ভাণ্ডার ছিল অস্ত্রের। তাদের নির্মাণ করেছিল বড় বড় প্রাসাদ এবং দুর্গ। কিন্তু অভাব ছিল একতার। মুসলিম রাজপরিবারগুলোর মধ্যে প্রায়ই গৃহযুদ্ধ লেগে থাকত। খ্রিষ্টান রাজার সাহায্য নিয়ে রাজা হয়ে পুত্র তার নিজের পিতাকে হত্যা করেছে। অথচ শত্রুরা ছিল একতাবদ্ধ। এক খ্রিষ্টান রাজ্যের রানী ইসাবেলা অন্য খ্রিষ্টান রাজ্যের রাজা ফার্দিনান্দকে বিয়ে করে নিজেদের রাজ্যকে বড় করেছে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে একত্রে যুদ্ধ করেছে। মহান আল্লাহ তায়ালার সুন্নত হলো- তিনি কখনোই বিভক্ত ও বিবদমান জাতিকে বিজয়ী করেন না। অথচ একতাবদ্ধ হলে এমনকি কাফিরদেরও বিজয় দেন।
নবীজি সা: দেশ গড়েছেন নানা ভাষা, নানা গোত্র ও নানা এলাকার মানুষের এক অখণ্ড ভূগোলে বসবাসের সুযোগ দিতে। যতদিন সে একতাকে ধরে রাখতে পেরেছিল ততদিন তারা বিশ্বশক্তি মর্যাদা পেয়েছে। খোলাফায়ে রাশেদা, উমাইয়া ও আব্বাসীয়দের আমলে মুসলিমদের নবীজি সা:-এর সে সুন্নত বেঁচে ছিল। তখন সমগ্র মুসলিম উম্মাহর একটি মাত্র দেশ ছিল। সে দেশে আরব, ইরানি, তুর্কি, কুর্দি, হাবশি, মিসরীয়, মুর একত্রে বসবাস করেছে। এক এলাকা বা শহর থেকে হাজার মাইল দূরের অন্য শহরে গিয়ে ঘর বাঁধতে আজকের ন্যায় কোনো ভিসা লাগত না। তাদের সে একতা আল্লাহ তায়ালার রহমত নামিয়ে এনেছে। আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের একতা চান; শয়তান চায় বিভক্তি। বিস্ময়ের বিষয় হলো- মুসলিমরা শয়তানকে খুশি করতে বিভক্তির পথ বেছে নিয়েছে। বিভক্তি বাঁচাতে ভিন্ন ভিন্ন দেশ গড়েছে। প্রায় ৪০ কোটি আরব ২২টি আরব রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়েছে।
ভেঙে গেছে পাকিস্তান। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান উন্নয়নে অর্থের অভাব দেখ দিলে কী হবে, বিভক্তির দেয়াল বাঁচাতে প্রতিটি মুসলিম দেশেই গড়া হয়েছে বিশাল বিশাল সেনাবাহিনী। আল্লাহ তায়ালা গড়াকে ভালো বাসেন, ভাঙাকে নয়। বিভক্ত মানচিত্র গড়াতে প্রতিশ্রুত আজাবও তাই মুসলিমদের ঘিরে ধরেছে। নামাজ-রোজা পালন ও লাখ লাখ মসজিদ-মাদরাসা গড়ে কি সে শাস্তি থেকে মুক্তি মেলে? শিক্ষা, বিজ্ঞান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন একতার বিকল্প নয়; ঐক্যের বিকল্প একমাত্র ঐক্য। এ জন্যই বিভক্তির আজাব থেকে মুক্তি পেতে প্রতিটি ঈমানদারের সর্ব সামর্থ্যরে বিনিয়োগ হওয়া উচিত মুসলিম উম্মাহর একতা প্রতিষ্ঠায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা