জন্মবার্ষিকী পালনে ইসলামী বিধান
- শাহাদাত হোসাইন
- ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, যা মানবজীবনের সব সমস্যার সমাধান দেয়। ইসলামের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও আইন-কানুন। তাই ইসলাম স্বীয় অনুসারীদের জীবনাচারে আন্তঃধর্মীয় সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো ক্ষেত্রেই অন্য ধর্মাবলম্বীদের জীবনাচার গ্রহণ করার অনুমতি ইসলাম দেয় না।
জন্মবার্ষিকী পালনে ইসলাম : জন্মদিনকে ভিত্তি করে প্রতি বছর জন্মবার্ষিকী পালন করা ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি পরিপন্থী। যা পরিত্যাগ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া ৫ : ৩৯৪) অনৈসলামিক সভ্যতা, সংস্কৃতির অনুসরণ ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে। অর্থাৎ পোশাক-আশাক, সভ্যতা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, খাওয়া-দাওয়া, কিংবা চলন-বলনে, তাহলে সে তাদের মধ্যেই গণ্য হবে এবং তাদের সাথেই তার কিয়ামত হবে।’ (মেরকাত ৪ : ৪৩১) সঙ্গত কারণে জন্মবার্ষিকী পালন একটি ঘৃণিত ও পরিত্যাজ্য কাজ।
জন্মবার্ষিকী অন্ষ্ঠুান হারামের আসর : সাধারণত জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে হারাম ও নিষিদ্ধ কাজের জমজমাট আসর সাজানো হয়। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নাচ-গানের ব্যবস্থা করা হয়, যা শয়তানের কাজ। নবীজি সা: বলেছেন, ‘গান শয়তানের বাঁশি’। তিনি আরো বলেছেন, ‘গান অন্তরে নেফাকির সৃষ্টি করে।’ (আবু দাউদ-৪৯২৭০) জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে খাবারের অপচয় করা হয়, যা করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন- ‘খাও, পান করো তবে অপচয় করো না।’ (সূরা আরাফ-৩১) অন্যত্র ‘অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (সূরা ইসরা-২৭) এ ছাড়াও জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশা, পর্দার বিধান লঙ্ঘনসহ শরিয়ত বহির্ভূত অনেক কাজ হয়ে থাকে।
নবীজি সা:-এর জন্মবার্ষিকী পালন করা : নবীজি সা:-এর জন্ম গোটা জগতের জন্য রহমতস্বরূপ। যেমনটি আল্লাহ বলেছেন-‘আমি আপনাকে জগতের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া-১০৭) তাই, তাঁর আলোচনা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে রহমতের। তবে প্রচলিত পদ্ধতিতে নবীজি সা:-এর জন্মদিন পালন করা নব-উদ্ভাবিত একটি বিষয়, যা বিদয়াত। আর ইসলামে নব-উদ্ভাবিত বিষয় পরিত্যাজ্য। নবীজি সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামে নতুন কোনো বিষয় সংযোজন করল যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তাহলে সেটি বাতিল ও পরিত্যাজ্য বলে গণ্য হবে। তাই, প্রচলিত পদ্ধতিতে নবীজি সা:-এর জন্মবার্ষিকী পালন করা অনুচিত। (ফতোয়ায়ে দেওবন্দ ১৮ : ৪৬৪)
নবীজির জন্মবার্ষিকী পালনের ইতিবৃত্ত : ৬০০ হিজরিতে বর্তমান ইরাকের অন্তর্ভুক্ত ইরবিলের বাদশাহই নবীজি সা:-এর জন্মদিন পালন করেন। শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। (আল-উরফুস-সাজি-১ : ২৩১) নবীজি সা. স্বীয় জীবদ্দশায় কখনোই এভাবে জন্মদিন পালন করেননি। সাহাবায়ে কেরামও এভাবে নবীজির জন্মদিন পালন করেননি। উম্মতের মধ্যে সাহাবায়ে কেরাম নবীজিকে যতটা ভালোবেসেছেন দুনিয়ার অন্য কেউ ততটা ভালো বাসতে পারেনি, পারবেও না। যদি এভাবে নবীজি সা:-এর জন্মদিন পালন করা বৈধ ও সিদ্ধ হতো এবং এটিই ভালোবাসার দাবি হতো, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম অবশ্যই নবীজির জন্মদিন পালন করতেন। যেহেতু এটি নবীজি সা: নিজে কিংবা সাহাবা, তাবেয়ি কিংবা তাবে-তাবেয়ি কেউ করেনি এবং কারো থেকে প্রমাণিত নয়, তাই তা বিদয়াত। আর বিদয়াত পরিত্যাজ্য। নবীজি সা: বলেছেন, ‘বিদয়াত মাত্রই পদভ্রষ্ট আর প্রত্যেক পথভ্রষ্ট জাহান্নামে যাবে।’ (মুসলিম-৮৬৭)
জন্মদিনে নবীজির রোজা : নবীজি সপ্তাহের প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন। সাহাবি আবু কাতাদাহ রা: বলেন, একদিন নবীজিকে এই দিনের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বললেন, ‘এ দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এই দিনেই আমার প্রতি কুরআন নাজিল হয়েছে।’ (মুসলিম-১১৬২) তার শুকরিয়াস্বরূপ তিনি এই রোজা রাখতেন।
ভিত্তিহীন বিষয় : নবীজি সা: বলেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে গেলাম। তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না, যতক্ষণ এ দু’টি জিনিসকে আঁকড়ে ধরবে। আর তা হলো- আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাত।’ (মুয়াত্তা মালেক-২ : ৮৯৯) কুরআন এবং হাদিসের কোথাও প্রচলিত পদ্ধতিতে নবীজি সা:-এর জন্মদিন পালন করার প্রমাণ পাওয়া যায় না। আল-জান্নাতু লি-আহলিস সুন্নাহ কিতাবের লেখক বলেন, আমি প্রচলিত জন্মদিন পালনের কোনো মূলনীতি কুরআন এবং হাদিসে পাইনি। অনুসরণীয় কোনো আলেম থেকেও এমন বর্ণনা পাইনি। এটি বিদয়াতি, বাতিলপন্থী এবং পেটপূজারিদের আবিষ্কৃত বিষয়।
লেখক : খতিব, বায়তুল আজিম জামে মসজিদ, রংপুর
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা