০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

ইসলামে বিনোদনের গুরুত্ব

-

মানব জীবনে বিনোদনের প্রয়োজনীয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিনোদনের মাধ্যমে মানুষের মেধা ও বোধশক্তি প্রখর হয়, আকল ও বুদ্ধি সমৃদ্ধ হয়। এছাড়া মানুষের মনের দুশ্চিন্তা বিদূরিত হয়, কাজকামের মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। বিনোদন কী- এর জবাবে আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে যেসব অর্থ বের হয়ে আসে, তা হলো- সানন্দে যাপন, তুষ্টি সাধন, সান্ত্বনা, স্বাচ্ছন্দ্য, কষ্ট অপনোদন, আমোদিতকরণ প্রভৃতি। পরিভাষায়; বিনোদন হলো ব্যক্তি অবসর সময়ে চর্চা করে এমন উপভোগ্য ইচ্ছামূলক কর্মতৎপরতা। গবেষকদের দৃষ্টিতে এটিকে অন্যভাবেও সংজ্ঞায়ন করা যায়। অর্থাৎ- বিনোদন হলো মানুষের অবসর সময়কে এমন সুন্দরভাবে কাজে লাগানো, যা তার মধ্যে শারীরিক ও চিন্তাগত নতুন শক্তি সঞ্চার এবং প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
সুস্থ ও সুন্দর বিনোদন মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক। এটি মানুষের আত্মার হক বা অধিকারও বটে। রাসূল সা: তাঁর সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনিল আস রা:-কে লক্ষ করে বলেছেন, ‘নিশ্চয় তোমার শরীরের জন্য তোমার উপর হক আছে, তোমার আত্মার জন্য তোমার উপর হক আছে।’ (বুখারি-১৯৭৫) অর্থাৎ- শরীরের যতœ নেয়া, অনাকাক্সিক্ষত ক্ষতি থেকে অঙ্গ-প্রতঙ্গকে রক্ষা করা, শরীরকে প্রয়োজন অনুপাতে বিশ্রাম দেয়া শরীরের হকের মধ্যে পড়ে। আত্মাকে আনন্দ ও প্রফুল্ল রাখা, অযথা দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা থেকে মুক্ত রাখা আত্মার হকের মধ্যে পড়ে। বিনোদনের পাশাপাশি এ প্রসঙ্গে রাসূল সা:-এর দোয়াটি প্রণিধানযোগ্য। হজরত আমর ইবনু মালিক রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেন, ‘হে আল্লাহ, দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে আমি আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করছি।’ (বুখারি-৬৩৬৩) বিনোদন গবেষক ফারুক হোছাইনের দৃষ্টিতে বিনোদনের তিনটি লক্ষ্য : ১. আরাম ও প্রশান্তি অর্জন; ২. মানুষের দৈহিক শক্তি-সামর্থ্যরে মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা এবং ৩. জীবনের ভারসাম্য রক্ষা। তবে বিনোদন দু’টি শর্তের মধ্যে থাকতে হবে, যথা- ১. দায়িত্বমুক্ত অবসর সময় এবং ২. রুচিশীল বিনোদন। এছাড়া বিনোদন হতে হবে অর্থবহ। কেননা, মুমিনরা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন- ‘আর (ওই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে) যারা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিমুখ থেকেছে।’ (আল কুরআন, সূরা আল মুমিনুন-৩) বিনোদন হতে হবে উৎকৃষ্ট, কেননা মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। কুরআনের ভাষায়- ‘আমি তাদেরকে (আদম সন্তানকে) অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (সূরা বনি ইসরাইল-৭০) এবং বিনোদন হতে হবে সুষম। কুরআনের ভাষ্য- ‘আপনার প্রতিপালকের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুষম।’ (সূরা আল আনআম-১১৫)
বিনোদনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে রাসূল সা: বলেন, ‘তোমরা মাঝে মধ্যে আত্মাসমূহকে আরাম দাও, কারণ আত্মাসমূহ যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন তা হয়ে যায় অস্থির-অবাঞ্চিত।’ (জামিউল বয়ানিল ইলমি ফাদলিহি দাম্মাম : দারু ইবনি আল জাওযি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৩৪) ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী ইবনে আবি তালিব রা: বলেন, তোমরা অন্তরসমূহকে প্রফুল্লতা দাও এবং তার জন্য প্রজ্ঞাপূর্ণ চমৎকার মজার বিষয় তালাশ করো, কারণ দেহের মতো আত্মাও বিরক্ত হয় এবং ক্লান্ত হয়ে পড়ে। (আখবারুল হুকাম্বা ওয়াল মুগাফিলিন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২) তবে বিনোদনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে দারুণ এক বয়ান পেশ করেন ইমাম (মুসা) কাযেম (১২৮ থেকে ১৮৩/১৮৪ হিজরি)। তিনি মানুষের সময়কে চার ভাগে বিভক্ত করেন। একটিাঅংশ তিনি বিনোদনের জন্য বরাদ্দ রাখেন। তিনি বলেন, তোমরা চেষ্টা করো, যেন তোমাদের সময়কাল চার অংশে বিভক্ত হয়। এক অংশকে কেবল মহান আল্লাহর সাথে চুপিসারে সম্পর্ক গড়ে তোলতে তাঁর ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকবে, আরেক অংশ তোমাদের জীবনোপকরণ অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট রাখবে, আরেক অংশ ভাই, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সাক্ষাতের জন্য বরাদ্দ রাখবে, চতুর্থ পর্যায়ে সময়ের একটি অংশ এমনভাবে নির্ধারণ করে রাখবে, যাতে তোমরা বৈধ পন্থায় আনন্দ-খুশি ও মজা করে সময় কাটাবে। সময়ের এ অংশটির মাধ্যমেই তোমরা অপর তিনটি অংশের দায়িত্বগুলো পালন করতে শক্তি সঞ্চয় করবে।’ (মুআসসাসা আল আলমি, পৃষ্ঠা-৩০২) বিনোদনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিস শিহাব আজ জুুহরি রহ: বলেন, কোনো এক ব্যক্তি রাসূল সা:-এর সাহাবিদের সাথে উঠাবসা করতেন এবং তিনি তাদের সাথে কথাবার্তা বলতেন, তাদের পারস্পরিক কথাবার্তা যখন বেশি হয়ে যেত এবং কথা যখন তাদের কাছে ভারী হয়ে উঠত তখন তিনি বলতেন, নিশ্চয় কানসমূহ কথা শুনতে অনীহা দেখাচ্ছে আর অন্তরগুলো বিতৃষ্ণা ভাব দেখাচ্ছে। অতএব, তোমরা তোমাদের নানারকম কবিতা ও কথামালা উপস্থাপন করো। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৩) সুতরাং, ইসলামে সুস্থ ও সুন্দর বিনোদনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।
লেখক : শিক্ষার্থী ও তরুণ গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement
দিল্লি জামে মসজিদ নিয়ে হিন্দুসেনার দাবি কক্সবাজার সৈকতে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের তৈরি রোবট দানব যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান গ্রেফতার সাভারে দাফন করা ব্যক্তিই হারিছ চৌধুরী তদন্ত প্রতিবেদনসহ আমু-কামরুলকে ১৭ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেশের ৬৯ কারাগারের মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ : কারা মহাপরিদর্শক আমরা হিন্দু-মুসলমান একসাথে লড়াই করে দিল্লির দাসত্বকে খান খান করে দেবো : রিজভী আজমির শরিফ : খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগাহের ইতিহাস জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও আমেরিকার বাকবিতণ্ডা ‘শেখ হাসিনা সরকার সবকিছু ধ্বংস করে গেছে’ পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ১২ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর

সকল