২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

শিরকের নিন্দা আল কুরআন

-

শিরক অর্থ অংশ, অংশী, অংশীদারত্ব। ইসলামী পরিভাষায় শিরক হলো বহু খোদায় বিশ্বাস করা। এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে আল্লাহ হিসাবে মান্য করা। ইবাদাতে তাকে শামিল করা। ইসলামে শিরক অমার্জনীয় অপরাধ। কুরআনে এসেছে, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। এ ছাড়া অন্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। আর যে আল্লাহর সাথে শিরক করে মূলত সে এক মহাপাপ রটনা করে। (সূরা নিসা : ৪৮) শিরকের ব্যাপারে সবার সচেতন থাকা কর্তব্য, যেন নিজের অজান্তে ইবলিসের জালে আটকে না যান।
ইবাদতের একমাত্র অধিকারী আল্লাহ : মানুষের ইবাদতের একমাত্র অধিকারী আল্লাহ। যিনি কুল-কায়েনাতের স্রষ্টা। তিনিই স্তুতি পাওয়ার যোগ্য অধিকারী। তাই কথায় কিংবা কাজে, মৌখিক কিংবা মৌন, কোনোভাবেই অন্যের ইবাদত নয়। কুরআনের ঘোষণা, তোমরা শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না। (সূরা নিসা : ৩৬) সঙ্গত কারণে কথাবার্তায়, কাজেকর্মে, চলাফেরায়, আকার-ইঙ্গিতে, গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে, আড়ালে কিংবা আবডালে কোনোভাবেই আল্লাহর প্রভুত্বে, মালিকানায়, ইবাদত ও গুণাবলিতে শরিক বা অংশীদারত্ব সাব্যস্ত করা যাবে না। যদি কারো কোনো ইবাদত ও কর্মে শিরকের ছিটেফোঁটাও প্রকাশ পায়, তাহলে তার ইবাদত সমূলে ধ্বংস হবে। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেছেন, আমি শিরক থেকে পবিত্র। যে ব্যক্তি কোনো আমল করল আর তাতে আমার সাথে কাউকে শরিক করল। আমি তাকে এবং তার শিরককে পরিত্যাগ করি। (মুসলিম : ২৯৮৫)।
আল্লাহর অংশীদারত্ব সাব্যস্ত করা সবচেয়ে বড় গোনাহ : মানুষের করা সামান্য কোনো অনুগ্রহের স্বীকার না করলে পৃথিবী তাকে নেমকহারাম বলে। কতশত কথা শোনায়। এত সামান্য ও তুচ্ছ বিষয়ে যদি এমনটা করা হয়। তাহলে যিনি সব কিছুর স্রষ্টা। যার করুণায় সবার জীবন, যার দয়াতে বাঁচি, সেই স্রষ্টাকে যদি কেউ স্বীকার না করে। উল্টো তার প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড় করায় এবং তাকে প্রভু হিসেবে ইবাদত করে। ভাবুন তো! সেটা কতবড় নেমকহারামি হবে? আল্লাহর সাথে শিরক করা সর্বাধিক বড় গোনাহ। বড় অত্যাচার। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবীজীকে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় গোনাহ কোনটি? নবীজী বললেন, আল্লাহ স্রষ্টা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করা। (বুখারি : ৪৪৭৭) আল্লাহর সাথে শিরক করা দুনিয়ার সর্বাধিক বড় অত্যাচার ও জুলুম। কুরআনে এসেছে, আর স্মরণ করুন, যখন লোকমান উপদেশ দিতে গিয়ে তার পুত্রকে বলেছিলেন, হে আমার প্রিয় পুত্র! আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করো না। নিশ্চয়ই শিরক মহা অপরাধ। (সূরা লোকমান : ১৩)
শিরকের ব্যাপারে পিতা-মাতার আদেশও অগ্রহণীয়
পৃথিবীতে সন্তানের প্রতি সর্বাধিক অনুগ্রকারী পিতা-মাতা। সেজন্য ইসলাম সন্তানকে সর্বাবস্থায় পিতা-মাতার অনুগত থাকার নির্দেশ দেয়। পিতা-মাতা কাফের হলেও তাদের সাথে সদাচারণের তাগিদ দেয়। সেই পিতা-মাতাও যদি সন্তানকে শিরক করতে বলে তাহলে তাদের সেই নির্দেশ অমান্য করতে হবে। মনে রাখবেন, শিরক কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ময়-মুরব্বি, পাড়া-প্রতিবেশী, নেতা-নেত্রী কারো আদেশে আল্লাহর সাথে শরিক করা যাবে না। কুরআনে এসেছে, আর তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে শিরক করার জন্য পীড়াপীড়ি করে, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই তাহলে তুমি তাদের কথা মেনো না। (সূরা লোকমান : ১৩)
শিরক আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষতিগ্রস্ততা সম্পর্কে কোরআনের উপমা : কোরআনে এসেছে, আর যে আল্লাহর সাথে শরিক করে সে যেন আকাশ হতে পড়ল, আর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল, কিংবা ঝঞ্চা বায়ু তাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে এক দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল (সূরা হজ : ৩১)। একটু ভাবুন! আপনি একটি বিমানে আছেন। যা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়ছে। সেখান থেকে যদি আপনাকে ফেলে দেয়া হয় তাহলে আপনার অবস্থা কী দাঁড়াবে? আপনি বাঁচবেন তো? উপরন্তু আকাশ থেকে পতিত অবস্থায় যদি বিশালাকারের কোনো পাখি আপনাকে ধরে ফেলে এবং ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। অথবা মনে করুণ! আপনি কোন ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়লেন। যার গতি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার। সে ক্ষেত্রে আপনার আস্ত কিংবা জীবন্ত ফেরার কোনো সম্ভাবনা থাকবে কি? থাকলে কত পার্সেন্ট? তেমনি অবস্থা শিরক আক্রান্ত ব্যক্তির। ইবলিস তাকে কড়ায়ত্ত করে এমন বিপদে ফেলে যা হতে পরিত্রাণ পাওয়া অসম্ভব। ধ্বংস এবং ধ্বংসই যার একমাত্র ফলাফল।
মূর্তির ইবাদত মানুষের বিবেকহীন কাজ : মানুষ বিবেকসম্পন্ন আল্লাহর বুদ্ধিমান এক সৃষ্টি। যাদেরকে আল্লাহ বিচার বিবেচনা আর মেধা-মনন দিয়েছেন। শিখিয়েছেন ভালো মন্দের পার্থক্য। সূরা শামসে আল্লাহ বলেছেন, তারপর তাকে (মানুষকে) সৎ কাজের এবং অসৎ কাজের জ্ঞানদান করা হয়েছে (৮)। মূলত এই বুদ্ধি, বিবেচনার কারণেই মানুষ সৃষ্টির সেরা। মানুষের পরম দায়িত্ব হলো, আল্লাহ প্রদত্ত সেই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে স্রষ্টা এবং সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য করা। প্রভু এবং দাসের মধ্যে ফারাক করা। সত্য মিথ্যার যাচাই করে, সত্যের আশ্রয় নেয়া এবং মিথ্যাকে পদাঘাত করা।
সৃষ্ট কখনো স্রষ্টা হতে পারেন না : জ্ঞান এবং বুদ্ধির দাবি হলো, স্রষ্টা হিসাবে শুধু এমন সত্তাকেই স্বীকৃতি দেওয়া হোক যিনি সৃষ্টি নন। যিনি সৃষ্টি করেন, তিনিই কেবল স্রষ্টা হতে পারেন। মানুষের দ্বারা সৃষ্ট মূর্তি কিভাবে স্রষ্টা হন সে সম্পর্কে ভাবা উচিত। সুস্থ বিবেক কখনোই মূর্তিকে রব হিসাবে মেনে নিতে পারে না। আল্লাহ কতই না সুন্দর বলেছেন, হে মানুষ! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে, মনোযোগসহ তা শোনো, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো তারা তো কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, এ উদ্দেশ্যে তারা সবাই একত্রিত হলেও এবং মাছি যদি কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের কাছ থেকে, এটাও তারা তার কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। অন্বেষণকারী ও অন্বেষণকৃত কতই না দুর্বল। (সূরা হজ : ৭৩) আসলেই তো, যেসব মূর্তির উপাসনা মানুষ করে তারা তো নিজেদের সামনে রাখা প্রসাদের মাছিও তাড়াতে সক্ষম নয়।
সক্ষম নয় তাদের ওপর আসা আঘাতের। যারা এতটাই দুর্বল তারা কীভাবে মানুষের স্রষ্টা হতে পারে?
যাদের শরিক ভাবি তারা কি আদৌ কিছু সৃষ্টি করেছেন : ছোট-বড়, উঁচা-লম্বা, চ্যাপ্টা-খাটো, দামি কিংবা তুচ্ছ মূর্তিরা কি এমন কোনো কিছু তৈরি করতে সক্ষম? উত্তর না এবং সুনিশ্চিত না। তা হলে এরা স্রষ্টা হয় কীভবে? সূরা সাবায় আল্লাহ বলেছেন, হে নবী বলুন, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে, তাদেরকে ডাকো। তারা আসমানসমূহে অণুপরিমাণ কিছুরও মালিক নয়, জমিনেও নয়। আর এ দু’টিতে তাদের কোনো অংশও নেই এবং তাদের মধ্যে থেকে কেউ তাঁর সহায়কও নয়। (সূরা সাবা : ২২) অন্য আয়াতে এসেছে, আল্লাহ বলেছেন, বলুন, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যেসব শরিকদের ডাকো, তাদের কথা ভেবে দেখেছ কি? তারা জমিনে কিছু সৃষ্টি করে থাকলে আমাকে দেখাও, অথবা আসমানের সৃষ্টিতে তাদের কোনো অংশ আছে কি? নাকি আমরা তাদের এমন কোনো কিতাব দিয়েছি যার প্রমাণের ওপর তারা নির্ভর করে? বরং জালিমরা (শিরককারীরা) পরস্পরকে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুরই প্রতিশ্রুতি দেয় না।
মূর্তির আড়ালে লুকায়িত অশ্লীলতার ইতিহাস : পৃথিবীতে যত ধরনের মূর্তির ইবাদত করা হয় তার অধিকাংশই নারী। এর থেকেও বড় বিষয় এদের অধিকাংশই অশ্লীল আকৃতির। কামোদ্দীপক। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, এর পেছনে লুকায়িত আছে অশ্লীলতার বিশাল দাস্তান। মক্কার প্রসিদ্ধ সাফা মারওয়া পাহাড়। যা ইসলামের ইতিহাসে স্মৃতি বিজড়িত স্থান। সাফা পর্বতে ইসাফ নামক এবং মারওয়া পর্বতে নায়েলা নামের দু’টি মূর্তি ছিল। যাদের মানুষ দেবতা হিসাবে পূজা করত। ইসলাম সেগুলোকে ধ্বংস করে। নবীপতœী আয়েশা বলেন, আমরা এটা সর্বদাই শুনতাম যে, ইসাফ ও নায়েলা দু’জন জুরহাম গোত্রের পুরুষ মহিলা যারা কাবার ভিতরে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিল। শাস্তি হিসাবে আল্লাহ তাদের পাথুরে আকৃতিতে বিকৃত করে দিয়েছিলেন। (সিরাতে ইবনে ইসহাক : ২৪) কালচক্রে মানুষ ইবলিসের খপ্পরে পরে তাদেরই ইবাদত করা শুরু করে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, যেসব মূর্তির পূজা করা হয় তাদের মধ্যে যৌন উদ্দীপক বিষয়টি কতটা প্রবল। মূর্তিগুলো কতটা খোলামেলা।
ধর্ম যার যার উৎসব সবার : বাক্যটিতে মুসলমানদের ঈমান বিধ্বংসি বিষ মেশানো আছে। ইসলাম আন্তঃধর্মীয় সহাবস্থানে বিশ্বাস করে। যার প্রমাণ নবীজীর মদিনা সনদ। যেখানে সব ধর্ম পালনের সমসুযোগ রাখা হয়েছিল। কিন্তু মুসলিমদের জন্য অন্য ধর্মীয় কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান, সাহায্যকরণ, মৌখিক কিংবা মৌন কোনো ধরনের সমর্থনের কোনো সুযোগ নেই। নবীজী অন্য ধর্মের সাদৃশ্যতা অবলম্বনে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। যে, যে ধর্মের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে, সে সেই ধর্মীয় বলে বিবেচিত হবে। (আবু দাউদ : ৪০৩১) ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এই কথার মাধ্যমে একটি চক্র অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে মুসলিমদের অংশগ্রহণকে সহজ করতে চান। ধর্মে যা আদৌ সহজ বিষয় নয়। নবীজী এটাকে বড্ড ভয়ঙ্কর বলে আখ্যায়িত করেছেন। নবীজী বলেছেন তত দিন পর্যন্ত কেয়ামত হবে না যত দিন আমার উম্মতের একটি দল মূর্তির কাছে ফিরে না আসবে। তারা আল্লাহ ব্যতীত সেসব মূর্তির ইবাদত করবে। (মুসনাদে আবি দাউদ তায়ালাসি : ২৬২৩)
লেখক : খতিব, বাইতুল আজিম জামে মসজিদ, রংপুর


আরো সংবাদ



premium cement
ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ২৪ ঘণ্টায়ও মহাসড়ক ছাড়েনি ডিইপিজেডের লেনী ফ্যাশনের শ্রমিকরা বুধবার সকালে ঢাকার বাতাসের মান ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ চীন সীমান্তের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিল মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা সুদানে গৃহযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা আগের হিসাবকে বহুগুনে ছাড়িয়ে গেছে, বলছে গবেষণা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা : যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২০ শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ নিহত আইনজীবীকে নিয়ে অপপ্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যম : প্রেস উইং হিজবুল্লাহ-ইসরাইল অস্ত্র-বিরতি চুক্তি জয় দিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরু করতে চায় টাইগ্রেসরা সহজ জয়ে সিরিজে সমতা পাকিস্তানের

সকল