রাসূল সা:-এর যুগের ব্যাংকব্যবস্থা বনাম আধুনিক ব্যাংকিং
- ড. ইকবাল কবীর মোহন
- ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
গত দিনের পর
পাকিস্তান সুদমুক্ত ব্যাংকব্যবস্থা : ১৯৭৮ সালে পাকিস্তান সরকার দেশের সব ব্যাংকব্যবস্থা সুদমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে তিনটি সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সুদমুক্ত করা হয়। এগুলো হল-১.পাকিস্তান হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশান, ২.ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট, ৩.মিউচুয়াল ফান্ডস অব ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন পাকিস্তান।
ইরানে ইসলামী ব্যাংকিং শুরু : ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হলে, রাজতন্ত্র উৎখাত হয় এবং ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হয়। তখন প্রথম ধাপে দেশটির গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থা জাতীয়করণ করে ইসলামী ব্যাংকিং শুরু করার ঘোষণা দেয়া হয়।
আশির দশক : সফলতা এবং বিস্তৃতির যুগ
আশির দশক ইসলামী ব্যাংকিং নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এক সাড়া জাগানিয়া বছর। হিজরি চৌদ্দ শতক উদযাপনের এই সময়ে বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং অমুসলিম দেশও ইসলামী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়।
১. আধুনিক ব্যাংকব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষণা : ১৯৮০ সালের মে মাসে ইসলামাবাদে ইসলামী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফেসর মুহাম্মাদ শামস-উল-হক ইসলামী আধুনিক ব্যাংকব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
২. মুসলমানদের ‘নিজস্ব ও স্বতন্ত্র’ ব্যাংকব্যবস্থা গঠনের আহ্বান : ১৯৮১ সালের জানুয়ারি মাসে মক্কা ও তায়েফে তৃতীয় ইসলামী শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণ প্রদান করেন এবং তিনি মুসলমানদের ‘নিজস্ব ও স্বতন্ত্র’ ব্যাংকব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, The Islamic countires should develop a separate banking system of their own in order to facilitate their trade and commerce.
৩. কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সম্মেলন : ১৯৮১ সালে ইসলামী সম্মেলন সংস্থার সদস্য দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ সংস্থার প্রধানদের নিয়ে সুদানের রাজধানী খার্তুমে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একটি সর্বসম্মত কাঠামো উদ্ভাবনের প্রস্তাব গৃহীত হয়।
৪. পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী ব্যাংকিং চালুর ঘোষণা : ১৯৮১ সালে পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী ব্যাংকিং চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
৫. ইসলামী ব্যাংকিং আইন পাস : ১৯৮৩ সালে মালয়েশিয়া ও তুরস্কে ইসলামী ব্যাংকিং আইন পাস করা হয়।
৬. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা : ১৯৮৩ সালে ৩০ মার্চ বাংলাদেশে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম ইসলামী ব্যাংক ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’ কার্যক্রম শুরু করে।
৭. ইরানে সার্বিক ব্যাংকব্যবস্থার পুনর্গঠন : ১৯৮৪ সালে ইরান তার সার্বিক ব্যাংকব্যবস্থা ইসলামী শরিয়াহর আলোকে পুনর্গঠন করে।
৮. পাকিস্তানে ইসলামী পদ্ধতিতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা : ১৯৮৪ সালে এক ঘোষণার মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার এক বছরের মধ্যে দেশে দুই ধারার ব্যাংকিংয়ের পরিবর্তে ইসলামী পদ্ধতিতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিত করার নির্দেশনা প্রদান করে।
৯. পাকিস্তানে সুদভিত্তিক ব্যাংকিং লেনদেন নিষিদ্ধ : ১৯৮৫ সালের ১লা জুলাই থেকে পাকিস্তানে সুদভিত্তিক ব্যাংকিং লেনদেন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।
১০. সুদানে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের উদ্যোগ : ১৯৮৫ সালে সুদানের ব্যাংকব্যবস্থা শরিয়াহর আলোকে পুনর্গঠনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
এভাবে আশির দশকে বিশে^র মুসলিম ও অমুসলিম বিভিন্ন দেশে একশ’র বেশি ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কায়েম করা হয়। এ সময় ইসলামী ব্যাংকগুলোর শাখার সংখ্যা ১০ হাজারের কোটা ছাড়িয়ে যায়।
ঝ. নব্বইয়ের দশক : দৃঢ়ভিত্তির যুগ
১. নব্বইয়ের দশক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলামী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠা ও দুঢ়তা লাভ করার একটি ঐতিহাসিক সময়। এই সময়টি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সমন্বয় এবং দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপিত হওয়ার জন্য ছিল মোক্ষম অধ্যায়।
২. সফলতার দশক : ইসলামী ব্যাংকগুলোর ঈর্ষণীয় সাফল্য ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রতি বিশে^র ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়। ফলে দেশে দেশে ইসলামী ব্যাংক তথা সুদবিহীন ব্যাংকের প্রসার বৃদ্ধি পায়। এ সময় পাকিস্তান, ইরান, সুদান, মিসর, জর্দান প্রভৃতি দেশে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে।
৩. আওউফি প্রতিষ্ঠা : ১৯৯০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অ্যাকাউন্টিং, অডিটিং, গভর্নেস, ইথিকস এবং শরিয়াহ স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়নের লক্ষ্যে ‘আওউফি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালের ২৭ মার্চ The Accounting and Auditing Organization for Islamic Financial Institutions (AAOIFI) একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাহরাইনে এটি নিবন্ধিত হয়।
৪. দেশে দেশে ইসলামী ব্যাংকের প্রসার : আশির দশকের প্রথম সাত বছরে নতুন ৫৬টি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে আশির দশকের শেষ নাগাদ ১০০টির বেশি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ সময় বিভিন্ন দেশে ১০ হাজারের বেশি ইসলামী ব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঞ. পরবর্তী সময় : বর্তমান অবস্থা : শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার অগ্রগতি ও দ্রুত বিকাশমান অবস্থার প্রেক্ষিতে বাংক পরিচালনা এবং সমন্বয়ের জন্য এর আন্তর্জাতিক মান রক্ষার বিষয়টি তীব্রভাবে অনুভূত হয়। ফলে নতুন নতুন স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়নের নানা প্রয়াস অব্যাহত থাকে। (চলবে)
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা