স্বৈরশাসকের দোসরদের ব্যাপারে কুরআনে সতর্কবাণী
- শাইখ মুহাম্মাদ জামাল উদ্দীন
- ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
একটি দেশ থেকে যখন স্বৈরশাসক পালিয়ে যায়, অন্যভাবে বললে- দীর্ঘ জুলুমের অবসানের পর যখন শান্তি-সাম্য-বৈষম্যমুক্ত শাসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখন স্বৈরশাসকের দোসররা নানাভাবে শান্তিকামী জনতাকে বাধা দিতে থাকে। জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী নতুন সরকার সংস্কার-উন্নয়নমূলক কাজ এগিয়ে নেবে নাকি পতিত-পলাতক কর্তৃত্ববাদী-স্বৈরশাসকের রেখে যাওয়া সুবিধাভোগীদের সামলাবে সেটিই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। আসলে শাসক যখন জনগণের সেবক না হয়ে মালিক বনে যায়, জগণের কষ্টার্জিত সম্পদ লুটেপুটে দেশ ফাঁকা করে ফেলে, বিচারের নামে নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসিতে ঝোলায় আর অপরাধীদের ছেড়ে দেয়, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়- তখনই খোদায়ি নিয়মে ওই শাসকগোষ্ঠীর মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। তবে শাসক চলে গেলে কিংবা মরে গেলেও তার দোসররা সজাগ থাকে বছরের পর বছর। চেষ্টায় থাকে আবার যদি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা যায় তাহলে অন্যায়-দুর্নীতি-মাদক-হত্যা সব চলবে অবলীলায়। এমন পরিস্থিতিতে শান্তিকামী জনগণের করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হিংসের আগুনে জ্বলতে থাকা ওই দোসরদের কঠোর হাতে দমন করা হোক। সূরা নিসায় এ আলোচনাটি এসেছে।
রাসূল সা: মদিনায় হিজরত করেছেন কেবল। মদিনার মানুষ রাসূলের নেতৃত্ব-ব্যক্তিত্ব দেখে তাকেই নেতা-শাসক বলে গ্রহণ করে নিলেন। এতে অসুবিধা হয়ে গেল ইহুদিদের। ইহুদিরা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই নামে এক ব্যক্তিকে মদিনার নেতা বানানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছিল ইতোমধ্যে। কিন্তু রাসূল সা: চলে আসায় ইহুদিরা মদিনার নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়ল। এতে তারা রাসূলের বিরোধিতায় উঠেপড়ে লাগল। ইহুদিরা বলাবলি শুরু করল, এতিম মুহাম্মদের কোনো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নেই। ত্যাগ নেই। সংগ্রাম নেই। তার জীবন তো বিলাসিতায় পূর্ণ। তার যে কয়টি বিবি আছে কোনো রাজা বাদশাহর তো এত বিবি নেই। এমন মানুষ কিভাবে মদিনার নেতা হয়? মুফাসসির হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেন, ইহুদিদের এমন হিংসুটে সমালোচনার জবাবে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ৫৪ নম্বর আয়াত নাজিল করে জানিয়ে দিলেন- ‘তবে কি আল্লাহ মানুষকে নিজ অনুগ্রহে যেসব নিয়ামত দিয়েছেন তা নিয়ে ওরা ঈর্ষা করে? আমি তো ইবরাহিমের বংশধরদেরও কিতাব ও হিকমা দিয়েছিলাম এবং তাদের দান করেছিলাম বিশাল সাম্রাজ্য।’ (তাফসিরে মাজহারি, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৩৬)
এ আয়াতে রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্য দলের দু’টি বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন আল্লাহ তায়ালা। প্রথমত, ওই দলটি কিতাবের অনুসারী হবে। পাশাপাশি আল্লাহর সাথে মজবুত সম্পর্কের মাধ্যমে গভীর প্রজ্ঞা বা হিকমতওয়ালা কলবের অধিকারী হবে। এ দু’টি গুণ যে দলের মধ্যে থাকবে আল্লাহ তাদের হাতে বিশাল রাজত্ব তুলে দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এ দু’টি গুণই ছিল রাসূল সা: ও তাঁর সাহাবিদের মধ্যে। এক দিকে তারা কুরআনের অনুসারী, অন্যদিকে তারা হিকমতে পূর্ণ কলবের অধিকারী। তো আল্লাহ বলতে চাচ্ছেন, মদিনার মানুষ সঠিক দলকেই নেতৃত্বের জন্য বাছাই করেছে কোনো সন্দেহ নেই। অন্যদিকে যারা ইসলামী নেতৃত্বের সমালোচনা করছে তাদের না আছে কিতাবের জ্ঞান, না আছে হিকমতের আলো।
শুধু তাই না। আল্লাহ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, মুহাম্মদ সা:-এর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। কেননা বংশগতভাবেই তার ভেতর নেতৃত্বের গুণ রয়েছে। তার পূর্বপুরুষ ইবরাহিম আ:-এর বংশে ইউসুফ, দাউদ ও সোলায়মানের মতো রাজারা বিশ^জুড়ে সাম্রাজ্য চালিয়েছেন। সুতরাং তোমরা যারা পরাজিত শক্তি বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছ, তোমাদের চেষ্টা কখনো সফল হবে না। ইতিহাস সাক্ষী! এ ইহুদিরা বারবার ইসলামী রাষ্ট্রের সাসটেইনেবেলিটি নষ্ট করার জন্য চেষ্টা করেছে। প্রতিবার রাসূল সা: ওহি ও হিকমতের আলোয় তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছেন।
সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা কিংবা স্থিতি কখনো কখনো ভেঙে পড়তে পারে। এমন পরিস্থিতি দায়িত্বশীলদের দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করতে হবে। ইতিহাস সাক্ষী, হুজুর সা:-এর ওফাতের পর নেতৃত্ব নিয়ে যে গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আবু বকর ও ওমরের রা: দৃঢ়তায় মুসলিম উম্মাহ এ যাত্রায় বেঁচে যান। আবু বকর রা: খেলাফতের দায়িত্ব নেয়ার পর ওই পরাজিত ইহুদিদের দোসরদের ইন্ধনে চার দিকে আন্দোলনের হিড়িক পড়ে যায়। কেউ জাকাত দিতে অস্বীকার করে। কেউ ধর্ম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়। কেউ নবুয়ত দাবি করে বিশৃঙ্খলা বাঁধিয়ে ফেলে। একের পর এক আন্দোলন লেগেই থাকে। আবু বকরের মতো কোমল মানুষও সেদিন কঠোর কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি ষোষণা করেছিলেন, ‘কেউ যদি জাকাতের একটি রশি দিতেও অস্বীকার করে, আমি আবু বকর তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।’ অন্যান্য সাহাবি বললেন, ‘তারা নামাজ পড়ে, রোজা রাখে; তাদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন?’ আবু বকর বললেন, ‘কুরআনে জাকাত অস্বীকারকারীদেরও কাফের বলা হয়েছে। তাছাড়া যারা আন্দোলন করছে তারা রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা বাধাচ্ছে। রাষ্ট্রের স্থিতি বজায় রাখতে এখন কঠোরতার বিকল্প নেই।’ পরবর্তীতে হজরত ওমর রা: বলেছিলেন, ‘সেদিন যদি আবু বকর রা: কঠোর না হতেন তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যেতাম।’ (জালালুদ্দিন সুয়ুতি, তারিখে খুলাফা)
একইভাবে হজরত আলী রা:-এর সময়ও একদল লোক হজরত উসমান হত্যার বিচারের দাবি জানায়। হজরত আলী রা: বারবার বলেছেন, ‘আগে পরিস্থিতি শান্ত হোক। তারপর বিচার হবে।’ কিন্তু আন্দোলনকারীরা তা না মেনে আরো জোরালো ভাষায় কথা বলা শুরু করে। আলী রা: পরিবেশ শান্ত রাখতে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পর্যন্ত করেছেন। (জালালুদ্দিন সুয়ুতি, তারিখে খুলাফা)
লেখক : চেয়ারম্যান, জামালী তালিমুল কুরআন ফাউন্ডেশন
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা