১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হাদিস শাস্ত্রে হজরত আয়িশা রা:-এর অবদান

-

ইসলামী শরিয়তের প্রধান চারটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো হাদিস। অর্থাৎ, কুরআনের পরেই হাদিসের অবস্থান; তার পরে আসে ইজমা ও কিয়াস। হাদিসের পরিচয় বেশ বিস্তৃত। সংক্ষেপে, হাদিস হলো মহানবী সা:-এর কথা, কাজ ও কর্ম। হাদিসের উপর নির্ভর করে ইসলামী শরিয়তের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধিবিধান নির্ধারিত হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিতে বিশেষ অবদান রেখে হাদিস শাস্ত্রের ইতিহাসে নক্ষত্রের রুপালি আলোর মতো জ্বলমলে হয়ে আছেন একজন মহীয়সী নারী। তিনি হলেন উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়িশা রা:।
তাঁর উপাধি হুমায়রা, উম্মুল মুমিনিন ও সিদ্দিকা। তার পিতা ছিলেন পুরুষদের মধ্যে আল্লাহর নবী সা:-এর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা:। তার মায়ের নাম উম্মু রুমান/জয়নব / ওয়াদ বিনতে আমর। দুই বোনের নাম হজরত আসমা ও হজরত উম্মে কুলসুম। তিন ভাইয়ের নাম হলো হজরত আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান ও মুহাম্মাদ। এই মহীয়সী নারীর জন্মসাল নিয়ে কিছু মতানৈক্য বিদ্যমান। তবে, অধ্যাপক মুহাম্মাদ সালেহ আওয তার লিখিত কিতাব জাওয়াতুর রাসূল সা:-এ উল্লেখ করেন : তিনি নবুয়ত প্রাপ্তির চতুর্থ বা পঞ্চম সনে জন্মগ্রহণ করেন। অর্থাৎ, তিনি যে ইসলামের আবির্ভাবের পরে জন্মগ্রহণ করেন, এতে কোনো মতানৈক্য নেই। শৈশবে ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি। শৈশব থেকে তার মধ্যে এমন সব গুণাবলি লক্ষ করা যায়, যা পরিণত বয়সে তার প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার সাক্ষ্য বহন করে। মহানবী সা:- এর স্ত্রী খাদিজা রা: ইন্তেকালের পর রাসূল সা:-এর স্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন এবং সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই মহীয়সী নারী রেখে যান হাদিস শাস্ত্রে অসামান্য অবদান।
হাদিস শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ প্রথম স্তরের কিতাব সহিহুল বুখারি, সহিহুল মুসলিম ও মুআত্তা, দ্বিতীয় স্তরের কিতাব সুনানে নাসায়ি, সুনানু আবু দাউদ ও জামিউত তিরমিজি এবং অন্যান্য প্রসিদ্ধ কিতাব আল মুস্তাদরাক, সহিহ ইবনে হিব্বান ও সহিহ ইবন খুজাইমা, সবজুড়ে আছে মহীয়সী নারী আয়িশা রা:-এর অসামান্য অবদান। হাদিস শাস্ত্রের কিছু বিখ্যাত কিতাবে হজরত আয়িশা রা:-এর অবদানের চিত্রপট তুলে ধরা হলো : মালিক ইবন আনাস (মৃ. ১৭৯ হি.) রচিত আল মুয়াত্তা গ্রন্থে ১৫১টি হাদিস বর্ণনা করেন তিনি, মুহাম্মাদ ইবন ইসমাইল বুখার (মৃ. ২৫৬ হি.) রচিত সহিহুল বুখারিতে ৯৮৮টি, মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (মৃ. ২৬১ হি.) রচিত সহিহুল মুসলিমে ৬৬০টি। আবু দাউদ, সোলায়মান ইবনুল আশআস (মৃ. ২৭৫ হি.) রচিত সুনানু আবু দাউদে ৪৪১টি। তিরমিজি, আবু ঈসা মুহাম্মাদ (মৃ. ২৭৯ হি.) রচিত সুনানুত তিরমিজিতে ৩৭৩টি। নাসায়ি, আহমদ ইবনে শোয়াইব (মৃ. ৩০৩ হি.) রচিত সুনানুন নাসায়িতে ৬৭৬টি। ইবন মাজা কাজবিনি, মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াজিদ (মৃ. ২৭৫ হি.) রচিত সুনানু ইবনে মাজাতে ৩৯৩টি। ইবন আবি শায়বা (মৃ. ২৩৫ হি.) রচিত মুসান্নাফু আবি শায়বাতে ৭৪২টি, বায়হাকি (মৃ. ৪৫৮ হি.) রচিত শোয়াবুল ঈমানে ৪৪৩টি। ইবনে হিব্বান (মৃ. ৩৫৪ হি.) রচিত সহিহু ইবনে হিব্বানে ৮৩১টি, ইবনে খুজাইমা (মৃ. ৩১১ হি.) রচিত সহিহ ইবনে খুজাইমাতে ৩১৯টি এবং হাকিম নাইসাপুরি (মৃ. ৪০৫ হি.) রচিত আল মুস্তাদরাকে ৬০৪টি হাদিস বর্ণনা করেন তিনি।
হজরত আয়িশা রা: যেসব বিষয়ের উপর হাদিস বর্ণনা করেন, তার কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়বস্তু হলো- ১. ওহির সূচনা ও নবুয়ত প্রাপ্তি; ২. তকদিরের উপর বিশ্বাস স্থাপন; ৩. কবরের আজাব; ৪. কিতাব ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা; ৫. উত্তম আমল; ৬. জ্ঞানার্জন; ৭. অজুু আবশ্যক হওয়ার কারণ; ৮. প্রাকৃতিক প্রয়োজন; ৯. অজুর সুন্নত; ১০. মলমূত্র ত্যাগে শিষ্টাচার; ১০. গোসলের বিবরণ; ১১. ঋতুস্রাব; ১২. ইস্তেহাজা; ১৩. সালাতের বর্ণনা; ১৪. রমজানের তারাবিহ; ১৫. রমজান; ১৬. জাকাত ও দান; ১৭. এতেকাফ; ১৮. তওবা ও ইসতিগফার; ১৯. হজের বর্ণনা; ২০. কোরবানির বর্ণনা; ২১. ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসার বর্ণনা; ২২. বিয়ের বর্ণনা; ২৩. মোহরের বর্ণনা; ২৪. প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার বর্ণনা; ২৫. রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বর্ণনা; ২৬. শপথ ও মানত; ২৭. শিষ্টাচার ও আচার-আচরণের বর্ণনা; ২৮. প্রতিবেশীর অধিকার; ২৯. পোশাক-পরিচ্ছদ এবং ৩০. রাসূল সা:-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মুজিজা ও ইন্তেকালের বর্ণনা ইত্যাদি।
এ ছাড়া হজরত আয়িশা রা:-এর থেকে হাদিস শিক্ষাগ্রহণ করেছেন এমন লোকের সংখ্যা অগণিত। বিভিন্ন সাহাবি, তাবেয়ি, তার আত্মীয়-স্বজন, নিকটজন, নারী গোলামসহ অনেকে তার কাছ থেকে হাদিস শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। ইমাম শামসুদ্দীন আযযাহাবি (মৃ. ৭৪৮ হি./১৩৭৪ খ্রি.) আয়িশা রা: থেকে হাদিস শিক্ষাগ্রহণ করেছেন, এমন ১৯০ জনের নাম উল্লেখ করেছেন। আয়িশা রা:-এর কয়েকজন ছাত্রের নাম তুলে ধরা হলো- ১. ইবরাহিম ইবন ইয়াজিদ আন-নাখই; ২. ইবরাহিম ইবন ইয়াজিদ আত-তাইমি; ৩. ইসহাক ইবন তালহা; ৪. ইসহাক ইবন উমর; ৫. আসওয়াদ ইবন ইয়াজিদ; ৬. আয়মান আল মাক্কি; ৭. সুমামা ইবন হাজন; ৮. জুবায়র ইবনে নুফাইর; ৯. জুমাই ইবনে উমাইর; ১০. হারিস ইবন আবদুল্লাহ; ১১. হারিস ইবনে নাওফিল; ১২. আল হাসান; ১৩. হামজা ইবনে আব্দুল্লাহ; ১৪. খালিদ ইবন সাদ; ১৫. খালিদ ইবনে মাদান; ১৬. খাব্বাব; ১৭. খুবাইব ইবন আবদুল্লাহ ইবনে আজ-জুবাইর; ১৮. খিলাস আল হাজারি; ১৯. খিয়ার ইবনে সালমা এবং ২০. খায়সামা ইবনে আব্দুর রহমান প্রমুখ।
হজরত আয়িশা রা: যদি হাদিস শাস্ত্রে এ অসামান্য অবদান না রাখতেন, ইসলামী শরিয়াহর অনেক বিষয় আছে যেগুলোর বিধিবিধান নির্ধারণের ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যার সৃজন হতো, নানা মতান্তরের জন্ম হতো। তিনি এ কাজটিকে সহজ করে দিয়েছেন। হাদিস শাস্ত্রে হজরত আয়িশা রা: এই অসামান্য অবদান ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সোনালি ইতিহাসে চির অমøান হয়ে থাকবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement
গাজীপুরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের তোপের মুখে পিপি-এপিপিদের পদত্যাগ বিনামূল্যে আজীবন চিকিৎসা পাবেন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা সাফজয়ী সাবিনাদের পুরস্কার দিলো সাউথইস্ট ব্যাংক সন্ত্রাস ও দুর্নীতি বন্ধে দেশে কোরআনের আইন চালুর বিকল্প নেই : মুজিবুর সিংগাইরে চাঁদাবাজির মামলায় ২ সংবাদকর্মী জেলহাজতে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ‘জুটমিল বন্ধ করে শেখ হাসিনা শিল্পাঞ্চলকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছেন’ দেশে বিনিয়োগ করলে আমরা পাশে থাকব : ডা. শফিকুর রহমান পলকের গামছা বাঁধা মুখের ছবি তুলতে বাধা পুলিশের 'মীর কাশেম আলী সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশ গড়ার কাজ করেছিলেন' সোনার দাম আবারো কমলো

সকল