১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

উম্মুন তথা মা

-

মা-বাবার প্রতি হৃদয়ের টান অনুভব আমার মতোন আরো শত, সহস্র, লাখো সন্তান অন্তরে পুষে রাখে। মা এমন এক শব্দ যা নির্মল এক ভালোবাসার নাম, বিশাল পৃথিবী শূন্য মা ছাড়া। মায়ের আচলের চাইতে দামি কিছু নেই, মায়ের মুখচ্ছবির চাইতে স্বচ্ছ-সুন্দর ভালো লাগা নেই। মা ছাড়া হৃদয়ের আকুলতা বলার জায়গা নেই, মা ছাড়া ডুকরে কেঁদে ওঠা ব্যথার ভাষা বুঝার কেউ নেই। পৃথিবী যখন ছেড়ে দেয় একা, তখন মা ছাড়া অশ্রু প্রবাহের সাথে দুঃখে শামিল হওয়ার কেউ নেই। যে সুবাস একজন সন্তান স্বীয় মায়ের যতœ ও কোমলতায় অনুভব করে তা পৃথিবীর বুকে আর কোথাও নেই। সন্তানকে ঘিরে এত আয়োজন বলেই তো আল্লাহ আদেশ করেছেন তাদের প্রতি কোমল আচরণের। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমি তো মানুষকে তার মা-বাবার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার (আল্লাহর) প্রতি এবং তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে’ (সূরা-লুকমান-১৪)।
দুনিয়ার সফর সংক্ষিপ্ত হলেও মা-বিহীন জীবন মরুভূমির মতো, ঠিক যেন কূলহীন সমুদ্র। মায়ের কোলে পৃথিবীর সব সুখ বিদ্যমান। মায়ের কোল যে কত বিশাল একটি আশ্রয়স্থল তা একজন যোগ্য সন্তান ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। মা-হীন মানব জীবন সবচেয়ে দুর্বিষহ! যার মা আছে, সে কখনোই প্রগাঢ়ভাবে বেদনাগ্রস্ত নয়। মা-বাবার মুখচ্ছবি সন্তানের জন্য সাধারণ মুখচ্ছবি নয়, তা এতটাই মূল্যবান যে মকবুল হজের সমপরিমাণ।
নবী সা: বলেছেন, ‘যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে। মহান আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সাওয়াব দান করেন’ (বায়হাকি, মিশকাত, পৃষ্ঠা-৪২১)।
আমাদের দুনিয়ার মরুময় শূন্য বুকে জন্মদাতাদ্বয় নিয়ামতের অফুরন্ত ভাণ্ডার। রব চমৎকার করে দোয়া শিখিয়েছেন, যা আমাদের মা-বাবার জন্য মন ভরে করতে পারি এবং আমাদের উত্তরসূরির পক্ষ থেকেও একইভাবে আমাদের জন্য তা উপঢৌকন হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার মা-বাবার প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়ামায়া, মমতাসহকারে আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছিলেন’ (সূরা বনি ইসরাইল-২৪)।
দোয়াটা সব মা-বাবার জন্য হলেও এ দোয়ার ফল সব মা-বাবার জন্য একই রকম হবে না বরং, যে মা-বাবা সন্তানের শৈশব-কৈশোর, যৌবনে যেমন দ্বীনকে ইনভেস্ট করেছেন ঠিক তেমন বেনিফিট আমলনামায় জমা হবে। কুরআনে আছে- ‘মা-বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের প্রতি বিরক্তি দেখিয়ে উহ্ বা উফ শব্দটিও বলো না। কখনো মা-বাবার হৃদয়ে আঘাত দিও না ও তাদের প্রতি রূঢ় বা অবাধ্য হয়ো না।’
মা-বাবার কষ্টে আল্লাহ তায়ালা ক্রুদ্ধ হন। ইসলামের দৃষ্টিতে মা-বাবার মর্যাদা এত উচ্চতর যে, পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের পাশেই তাদের মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
হজরত মূসা আ:-এর প্রতিও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। আল্লাহ বলেন- ‘আর আমি বনি ইসরাইল থেকে এ অঙ্গীকার নিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করবে না, মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে’ (সূরা বাকারাহ-৮৩)।
মা-বাবার মর্যাদা বৃদ্ধিতে তিলাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম। কুরআন পাঠকারীর জন্য প্রভূত কল্যাণ বয়ে আনে এবং তিলাওয়াতকারীর মা-বাবাও সেই কল্যাণধারায় সিক্ত হন। যদি কোনো সন্তান কুরআন তিলাওয়াত করে, কুরআন মুখস্থ করে এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালানা করে তা হলে এতে মৃত মা-বাবা উপকৃত হন। কিয়ামতের দিন এ বাবা-মাকে উজ্জ্বল মুকুট পরানো হবে এবং উজ্জ্বল জান্নাতি পোশাক পরানো হবে। পৃথিবীতে যে মায়ের আচল ছিল সবচেয়ে দামি, যে বাবার মুখের হাসি ছিল দেহে প্রাণ সঞ্চারকারী সে মা-বাবা বিশাল কিয়ামতের মাঠে সন্তানের আমলের দ্বারা সম্মানিত হবেন। এর চেয়ে বড় হাদিয়া সন্তানের পক্ষ হতে মা-বাবার জন্য আর কী হতে পারে?
উম্মুন তথা মা; যার মুচকি হাসির ফাঁকে, স্বর্ণালি শব্দগুচ্ছে- সন্তানের সব মলিনতা দূর হয়ে যায় চোখের পলকে। মা ছাড়া পৃথিবী নিদারুণ নিস্তব্ধ, মা ছাড়া কিছু সময় শূন্যতায় ঢেকে থাকা নিষ্প্রাণ কাষ্ঠ। কিভাবে ভুলে থাকা যায় এ মুখ অবয়ব, যা চোখের পাতায় ভেসে থাকে সারা দিন-রাত। সন্তান প্রতিপালনের সময়, তার ছোট ছোট হাত, পায়ের যতœ করতে গিয়ে জননীর সারা জীবনের কষ্ট একত্রে ধরা দেয় যেন মস্তিষ্কে; ইয়া রব আপনি আমার আম্মাজানের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, কবরের বিছানাকে জান্নাতের সুশীতল বিছানার মতো করে দিন এবং আমাদের সন্তানদের আমাদের প্রতি উত্তম আচরণকারী বানিয়ে দিন। আমীন।


আরো সংবাদ



premium cement