১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পরিপূর্ণ মুমিন মুসলিম কেন হবো

-

(দশমাংশ)
ইতঃপূর্বে আমরা পরিপূর্ণ মুমিন মুসলিম হওয়ার সফলতার পুরস্কার নিয়ে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করেছি অর্থাৎ পরিপূর্ণ মুমিন মুসলিম হওয়ার পরিণাম বা প্রতিফলন হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, ফলে পার্থিব জীবন হবে উৎকণ্ঠামুক্ত ও শান্তিময় সর্বাবস্থায়, হবে না ধৈর্য হারা বা বিচলিত কোনো অবস্থাতেই বরং থাকবে চরম-পরম নির্ভরশীলতা আল্লাহর উপর, পার্থিব জীবন প্রাধান্য পাবে না কিছুতেই পারলৌকিক জীবনের উপর বরং পারলৌকিক জীবন প্রাধান্য পেতে থাকবে সর্বাবস্থায়, পেতে থাকবে আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া, ভয় পাবে না কোনো মানুষকে বরং ভয় পাবে শুধু আল্লাহকে, হবে না অত্যাচারী পক্ষান্তরে অত্যাচারিত হয়ে প্রতিকার করার চেষ্টা করতে পারে কিন্তু ধৈর্য হারা হবে না, পরকালের চিরশান্তি তাদেরকে ভুলিয়ে রাখবে অস্থায়ী পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনের সব ব্যথা-বেদনা, ঘাত-প্রতিঘাত, দুঃখ-যাতনা, অভাব-অনটন, অনাহার-অত্যাচার, আপদ-বিপদ, বালা-মুছিবত ইত্যাদি পক্ষান্তরে তারা থাকবে ঈমানের বলে বলীয়ান, অনুভব করবে না কোনো দুর্বলতা, প্রাপ্তিতে থাকবে না আনন্দের আতিশয্য থাকবে আল্লাহর শুকরিয়া, পক্ষান্তরে যত ক্ষতি বা হারানোর মুখোমুখি হোক না কেন থাকবে না কোনো ব্যথা-বেদনা, দুঃখ-যাতনা, আল্লাহর যেকোনো সিদ্ধান্তকেই শুকরিয়ার সাথে গ্রহণ করবে এমনকি আপাতত দৃষ্টিতে তা অকল্যাণ মনে হলেও। কিসে কল্যাণ এবং কিসে অকল্যাণ তা কোনো মানুষই জানে না, জানা সম্ভবও নয়, জানেন শুধু আল্লাহ। সম্পদের পাহাড় শুধু কল্যাণেরই উৎস নয়, অকল্যাণেরও কারণ হতে পারে এবং হচ্ছে যা আমরা বাস্তবে দেখতে পাই। তেমনি করে উচ্চ শিক্ষিত, সুপ্রতিষ্ঠিত, সনামধন্য সন্তান পিতা-মাতার কল্যাণের কারণ হওয়াই স্বাভাবিক কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে অকল্যাণ, অশান্তির, অবমাননার কারণ হওয়ার দুর্ঘটনাও আমরা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি। এসব কিছু আল্লাহ তায়ালার পূর্বনির্ধারিত ‘তাকদিরের’ লিখন।
এখন আমরা ইনশাআল্লাহ আলোচনা করব ঈমান হারা বা কাফের হওয়ার ভয়াবহ অকল্পনীয় কুফল ও ভয়াবহ শাস্তি আল্লাহর বাণী অবলম্বনে।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে প্রত্যাখ্যান করল, সে তো ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। (সূরা নিসা-১৩৬) আলোচ্য আল্লাহর বাণীতে ঈমানহারা বা কাফেরদের ভয়াবহ পরিণতি উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থাৎ- তারা ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট বা সঠিক পথহারা এবং হয়ে যাবে ভ্রান্ত পথের প্রথিক যার শেষ প্রান্তে অবস্থিত ভয়াবহ অগ্নিদগ্ধ হওয়ার শাস্তি বা জাহান্নাম। নাওজুবিল্লাহি মিন জালিক অর্থ : ‘ইয়া আল্লাহ! উহা হতে তোমার সদয় আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ সর্বকালে বিশ্ববাসী দু’ভাগে বিভক্ত : ক. মুমিন অথবা; খ. কাফের, মুশরিক ও মুনাফিক। মুমিন ইনশাআল্লাহ হয় সরাসরি জান্নাতি, না হয় মেয়াদি জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার পর, পাপ বা অসৎ কাজের তারতম্যের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু দ্বিতীয় দল সরাসরি চিরকালে জন্য জাহান্নামবাসী যার শুরু আছে কিন্তু কস্মিনকালেও শেষ নেই। নাওজুবিল্লাহি মিন জালিক।
সম্মানিত মুমিন ভাই ও বোন! আমাদেরকে অবশ্যই অসাধারণ সাবধান হতে হবে আল্লাহ না করুক, আমরা যেন কোনো অবস্থাতেই পার্থিব জীবনে ঈমানহারা না হই; বরং ইনশাআল্লাহ পূর্বোল্লিখিত সাতটি বিষয়ে দৃঢ়ভাবে প্রতিনিয়ত বিশ্বাস করে চলতে থাকব এবং যথাসম্ভব ঈমান সংরক্ষণ সংক্রান্ত দোয়াগুলো আল্লাহর কাছে দাখিল করতেই থাকব। যথা : ক. ‘অমান আহইয়াইতা হু মিন্না ফা আহহি আলাল ইসলাম অমান তাওয়াফফাইতা হু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ঈমান। অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যাকে তুমি জীবিত রাখো তাকে ইসলাম বা তোমার আদেশ নিষেধ পালন এর মধ্যে রাখো (মুমিন হওয়ার পাশাপাশি) পক্ষান্তরে যাকে মৃত্যু দান করো তাকে ঈমানের উপর মৃত্যু দান করো। আমিন। খ. কুরআনে আল্লাহ আরেকটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ দোয়া দান করেছেন, যথা: রাব্বানা ফাঘফির লানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সাইয়িআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার। অর্থ- হে আমাদের প্রতিপালক! দয়া করে আমাদের পাপগুলো ক্ষমা করুন মন্দ কাজগুলো আমাদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং মুমিন-মুসলিমদের সাথে আমাদের মৃত্যু দান করুন। (সূরা আল ইমরান-১৯৩) যাদের তরফ থেকে আল্লাহ আলোচ্য দোয়াদ্বয়ের যেকোনো একটি দোয়া করে কবুল করবেন তারা ইনশাআল্লাহ জান্নাতবাসী পক্ষান্তরে যাদের দুটো দোয়াই যদি কবুল করেন তারা হবেন মহাসৌভাগ্যবান হতে পারে এমনকি জান্নাতুল ফেরদাউসের বাসিন্দা হবে ইনশাআল্লাহ। সম্মানিত মুমিন ভাই বোন! আলোচ্য দোয়া দুটো আল্লাহর কাছে যথাসম্ভব পেশ করতে থাকুন উপরোক্ত সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য তাছাড়া আপনাদের পার্থিব জীবনটিও হবে অসাধারণ সুখ ও শান্তিময় এবং উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তামুক্ত ইনশাআল্লাহ।
যারা ঈমান আনয়ন করে না, শয়তানদেরকে আমি তাদের অভিভাবক, বন্ধু বানিয়ে দিয়েছি। (সূরা আরাফ-২৭) লক্ষণীয়, মুমিন না হওয়ার ক্ষেত্রে কত বড় মারাত্মক দুঃসংবাদ। কারণ যারা মুমিন নয় বা কাফের তাদের জন্য শয়তান বন্ধু শত্রু নয় শয়তান উল্লসিত, আনন্দে আত্মহারা, কারণ সে তার জাহান্নামে অবস্থানের সাথী পেয়েছে। কোনো বুদ্ধিমান বা জ্ঞানী মানুষ কি চিরশত্রু ও অভিশপ্ত শয়তানের বন্ধু হতে ইচ্ছুক হবে? নিশ্চয়ই নয়। সম্মানিত মুমিন ভাই ও বোন! আসুন আমরা আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদেরকে পরিপূর্ণ মুমিন মুসলিম হওয়ার তাওফিক দান করেন এবং কাফের মুশরিক, মুনাফিক হওয়া থেকে রক্ষা করেন। আরো প্রার্থনা করি অতুলনীয় মহামূল্যবান ঈমান বৃদ্ধির জন্য যাতে করে শয়তান আমাদের বন্ধু হওয়া তো দূরের কথা আমাদের ধারেকাছে আসতেও সুযোগ না পায়।
(সব) মান-সম্মান কেবলমাত্র আল্লাহর, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্যই নির্দিষ্ট কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না। (সূরা মুনাফিকুন-৮) সম্মানিত মুমিন ভাই ও বোন! বিশেষভাবে লক্ষ করুন মুমিনদের মর্যাদা যা আলোচ্য আয়াতে দয়ালু আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। কত বড় সুসংবাদ মুমিনদের জন্য। একই আয়াতে আমাদের স্র্রষ্টা উল্লেখ করেছেন ‘আল্লাহ, তার রাসূল ও মুমিন’ সীমাহীন সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী হলেন আল্লাহ, উচ্চ সম্মানের অধিকারী হলেন আল্লাহর রাসূল সা: এবং উল্লেখযোগ্য সম্মানের অধিকারী হলেন মুমিনগণ অন্য কোনো সৃষ্ট যথা- কাফির, মুশরিক ও মুনাফিক সম্মানিত নয়; বরং অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্ট ফলে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত এমনকি এরা পশুর মতো কিংবা পশুর থেকেও নিকৃষ্ট। নাওজুবিল্লাহি মিন জালিক।
আমার (আল্লাহর) কর্তব্য হচ্ছে মুমিনদেরকে সাহায্য করা। (সূরা রুম-৪৭) সুবহানাল্লাহ! কত বিশাল সুসংবাদ মুমিনদের জন্য স্বয়ং আল্লাহ তাদেরকে সর্বাবস্থায় সাহায্য ও রক্ষা করেন আপদ-বিপদ, বালা-মুসিবত, অভাব-অনটন, হিংসুক, শত্রু, লাঞ্ছনা-অবমাননা, ক্ষয়-ক্ষতি, অত্যাচার-অবিচার, ভয়-ভীতি, উৎকণ্ঠা-দুশ্চিন্তা ইত্যাদি থেকে। আল্লাহর সাহায্যে পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মুমিন মুসলিমরা সত্যিই সুখ শান্তিময় জীবন-যাপন করে পার্থিব জীবন প্রতি বিমুখ হয়ে পরকালের প্রতি বিশেষ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জান্নাত লাভের আগ্রহে থাকেন আকৃষ্ট এবং সফলতার জন্য থাকেন সচেষ্ট মনেপ্রাণে।
পরিশেষে আমি (আল্লাহ) আমার রাসূলদেরকে এবং মুমিনদেরকে উদ্ধার করি। আর আমার দায়িত্ব হচ্ছে এভাবে মুমিনগণকে উদ্ধার করা। (সূরা ইউনুস-১০৩) সম্মানিত মুমিন ভাই ও বোন! লক্ষ করুন মহান আল্লাহর উদারতা ও করুণা। আল্লাহ রাসূলদেরকে এবং মুমিনদেরকে সদাসর্বদা উদ্ধার করেন সব প্রকার সমস্যা, রোগ-শোক, অভাব-অভিযোগ, অকল্যাণ, আজাব-গজব, এককথায় যা মুমিনদের ইহকালে বা পরকালে অশান্তি বা অসুখের কারণ হতে পারে। আল্লাহর এই ঘোষণাটি মুমিন মুসলিমদের জন্য কি বিশাল সুসংবাদ ও উৎসাহব্যঞ্জক।
আল্লাহ মুমিন নর ও মুমিন নারীকে এমন এক জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে। আর চিরস্থায়ী জান্নাতে তাদের জন্য সুন্দর সুন্দর বাসস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। সে দিন বান্দার প্রতি আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হবে তাদের উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর এটিই হবে সবচেয়ে বড় সাফল্য। (সূরা তাওবা-৭২) সম্মানিত মুমিন ভাই ও বোন! তুলনামূলক আল্লাহর এই বাণীটি সুদীর্ঘ। তন্মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষণীয় মুমিন মুসলিমদের চিরদিন জান্নাতে অবস্থান করা, তাদের জন্য সুন্দর সুন্দর বাসস্থানের ব্যবস্থা থাকা যা অকল্পনীয়, অভাবনীয়, অতুলনীয়, অদৃশ্যপূর্ব, অশ্রুতপূর্ব। আলোচ্য সৌন্দর্য তখন জান্নাতবাসীরা উপভোগ এবং উপলব্ধি করতে পারবে এবং প্রকাশ করতে থাকবে সর্বোচ্চ কৃজ্ঞতা সৃষ্টিকর্তার প্রতি। বিশেষভাবে লক্ষণীয় সেই বর্ণনাতীত মহা আনন্দ এবং মহাসুখের দিনে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হবে জান্নাতবাসীদের উপর সীমাহীন শক্তিধর আল্লাহর সন্তুষ্টি যা হবে তাদের জন্য সর্বোচ্চ বা চরম-পরম সফলতা, কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি জান্নাত অপেক্ষা তুলনাহীন বড় নিয়ামত।
হে পরম করুণাময় আল্লাহ! দয়া করে আপনার দুর্বল গেলামদেরকে তাওফিক দান করুন তারা যেন পরিপূর্ণ মুমিন মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করত আপনার উল্লেখযোগ্য নিয়ামত জান্নাত এবং সর্বোচ্চ নিয়ামত আপনার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। আমিন।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ


আরো সংবাদ



premium cement
গাজীপুরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের তোপের মুখে পিপি-এপিপিদের পদত্যাগ বিনামূল্যে আজীবন চিকিৎসা পাবেন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা সাফজয়ী সাবিনাদের পুরস্কার দিলো সাউথইস্ট ব্যাংক সন্ত্রাস ও দুর্নীতি বন্ধে দেশে কোরআনের আইন চালুর বিকল্প নেই : মুজিবুর সিংগাইরে চাঁদাবাজির মামলায় ২ সংবাদকর্মী জেলহাজতে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ‘জুটমিল বন্ধ করে শেখ হাসিনা শিল্পাঞ্চলকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছেন’ দেশে বিনিয়োগ করলে আমরা পাশে থাকব : ডা. শফিকুর রহমান পলকের গামছা বাঁধা মুখের ছবি তুলতে বাধা পুলিশের 'মীর কাশেম আলী সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশ গড়ার কাজ করেছিলেন' সোনার দাম আবারো কমলো

সকল