মুমিন যেভাবে কথা বলবে
- মুফতি আবুল হাসান সাঈদ
- ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আল্লাহ প্রদত্ত শতসহস্র নিয়ামতের একটি বাকশক্তি বা কথা বলতে পারা। মহামহিম আল্লাহ তায়ালা করুণা কৃপা করেই যে আমাদেরকে মনের ভাব প্রকাশ করার সক্ষমতা বা যোগ্যতা দিয়েছেন তার উৎকৃষ্ট উপমা উপলব্ধি করা যায় বাকপ্রতিবন্ধী বা বোবাদেরকে দেখলে। আল্লাহ তায়ালা তার এ নিয়ামতের স্পষ্ট বর্ণনা দিচ্ছেন এভাবে- ‘পরম দয়ালু (আল্লাহ), তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, তিনিই মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তিনিই শিখিয়েছেন মনের কথা প্রকাশ করতে।’ (সূরা আর রহমান) তবে আল্লাহ তায়ালা যেভাবে বাগ্মিতার নিয়ামত দিয়েছেন ঠিক তেমনি তার যথাযত প্রয়োগ কিংবা ব্যবহার হয়েছে কিনা তার জবাবদিহিতাও নেবেন। এজন্য প্রত্যেক বনি আদম সন্তান চাইলেই অযথা অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে পারবে না, কিভাবে কথা বলবে তার নির্দেশনা দিয়েছেন আল্লাহ ও তার রাসূল সা:। সভা-সমাবেশ কিংবা পরস্পর পরস্পরের সাথে সাক্ষাতের সময় প্রথমেই সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে কথা শুরু করতে হবে। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আদম আ:-কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল ৬০ হাত। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তাঁকে (আদমকে) বললেন, যাও। ওই ফেরেশতা দলের প্রতি সালাম করো এবং তাঁরা তোমার সালামের জওয়াব কিভাবে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোনো। কারণ সেটিই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। অতঃপর আদম আ: ফেরেশতাদের বললেন, আসসালামু আলাইকুম ফেরেশতামণ্ডলী তার উত্তরে আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ বললেন, ফেরেশতারা সালামের জওয়াবে ওয়া রহমাতুল্লাহ শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা আদম আ:-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবেন। তবে আদম সন্তানের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপে এসেছে। (বুখারি) মুমিন কখনো অসতর্কতাবশত কথা বলবে না বরং প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি কথা সতর্কতার সাথে বলবে, কারণ সে জানে তার প্রতিটি কথা সংরক্ষিত হচ্ছে অদৃশ্যর লেখকদের মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সে যে কথাই উচ্চারণ করে তার কাছে সদা উপস্থিত সংরক্ষণকারী রয়েছে।’ (কাফ) শুধু তাই নয় মুমিন কখনো অসুন্দর অমার্জিত কথা বলবে না, কারণ সে উত্তম কথা বলার জন্যই ঐশীবাণী কর্তৃক নির্দেশিত হয়েছে। কুরআন চমৎকার করে বলেছে- ‘আর স্মরণ করো, যখন আমি বনি ইসরাইলের অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করবে না এবং সদাচার করবে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম ও মিসকিনদের সাথে। আর মানুষকে উত্তম কথা বলো, সালাত কায়েম করো এবং জাকাত প্রদান করো। অতঃপর তোমাদের মধ্য থেকে স্বল্প সংখ্যক ছাড়া তোমরা সবাই উপেক্ষা করে মুখ ফিরিয়ে নিলে।’ (সূরা বাকারা) পাশাপাশি মুমিন সর্বদাই অমূলক, অবান্তর ও অহেতুক কথা পরিহার করবে,কারণ অবাঞ্ছিত কথা বলা মুনাফিকদের নিদর্শন, মুমিনদের কাজ নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ওইগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আজাব।’ ( সূরা লোকমান ) উত্তম কথা বললেই হবে না; বরং সে কথা হতে হবে শ্রুতিমধুর, মিষ্টি সহনশীল ও সংযত, এজন্য মুমিন উঁচু আওয়াজে বিকট আওয়াজে কথা বলবে না; বরং নিচু আওয়াজে মাধূর্যপূর্ণ ভঙ্গিমায় কথা বলবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো, তোমার আওয়াজ নিচু করো, নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হলো গাধার আওয়াজ।’ (সূরা লোকমান) বুদ্ধিবৃত্তিক ধর্ম ইসলাম, তাই মুমিনের কথা কাজ সবকিছু হতে হবে বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানগর্ভ। মেধা মননশীলতা আর সুদূরপ্রসারী ভাবনার প্রতিচ্ছবি হবে মুমিনের কথা ও কাজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তুমি তোমরা রবের পথে আহ্বান করো হিকমত সুন্দর উপদেশ এবং উত্তম পন্থায় তর্কের মাধ্যমে।
নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভালো করেই জানেন।’ (সূরা নমল) মুমিন সব সময় সত্য কথা বলবে, কারণ মিথ্যাচার মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।
তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল।’ (সূরা আহজাব) মহানুভবতা দয়া আর ভালোবাসা ইসলামের সৌন্দর্য। তাই একজন মুসলিম সতত ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে কথা বলবে- ‘তুমি ক্ষমা প্রদর্শন করো এবং ভালো কাজের আদেশ দাও। আর মূর্খদের থেকে বিমুখ থাকো।’ (সূরা আরাফ )
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা