০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

মানবতার কল্যাণে মহানবী

-

‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিনের আকাক্সক্ষী এবং বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করে’ (সূরা আল আহজাব-২১)। বিশ্বমানব সভ্যতার ইতিহাসে হজরত মুহাম্মদ সা: সর্বপ্রথম এমন এক সভ্যতা সংস্থাপন করলেন, যা ছিল সত্যিকার অর্থেই মানবিক মূল্যবোধসমৃদ্ধ। তাঁর আগমনপূর্ব যুগটি ছিল দলাদলি, হানাহানি ও রক্তারক্তির যুগ। মানুষে মানুষে ছিল রক্ত, বর্ণ, ভাষা ও আভিজাত্যের দুর্লঙ্ঘনীয় প্রাচীর। সমাজ ছিল তখন পশুত্ব ও পৌত্তলিকতার নিকষ কালো অন্ধকারে আচ্ছাদিত। মানুষ ছিল তখন শান্তিহারা, অধিকারহারা, নির্মমভাবে অত্যাচারিত ও নিপীড়িত। নারী জাতির অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। এক কথায় তৎকালীন মানবসমাজে মুক্তি, শান্তি ও প্রগতির আশা হয়ে উঠেছিল সুদূরপরাহত। মানব ইতিহাসের এই ঘোর দুর্দিনেই বিশ্বমানবতার পরম বন্ধু মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: মানবতার মুক্তির সনদ নিয়ে সুন্দর এই বসুন্ধরায় আগমন করেছিলেন। আধুনিক সভ্যতার সব ভালো, সব সুন্দরের ভিত্তি মহানবী সা:-ই স্থাপন করেছিলেন। মূলত তাঁর আগমনই ছিল মানবকুলের জন্য অপূর্ব নিয়ামত, রহমত ও চিরন্তন শান্তির মহান সওগাত। মহান আল্লাহ বলেন- ‘আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি’ (সূরা আম্বিয়া-১০৭)। মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করে একটি সত্যনিষ্ঠ বিশ্বভ্রাতৃসমাজ গড়ে তোলার মধ্য দিয়েই যে কেবল একটি সত্যিকার শান্তির পৃথিবী সংস্থাপন করা সম্ভব সেই শিক্ষা প্রিয়নবী সা: দিয়েছেন এবং সেই শান্তির দুনিয়া গড়ার নমুনা হিসেবে মদিনা মুনাওয়ারায় একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। একনায়কত্ব ও রাজতন্ত্রের চির অবসান ঘটানো সেই রাষ্ট্র বিশ্ব মানবসভ্যতার ইতিহাসে দীর্ঘকালব্যাপী সোনালি অধ্যায় রচনা করেছে। আজকের যে উৎকর্ষ আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা সেই সভ্যতারই ফসল। ষষ্ঠ শতকের আরব ছিল পাপের কলুষ কালিমায় আচ্ছন্ন। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ ছিল তখনকার প্রচলিত নীতি। এক কথায় নির্যাতিত মানবতা অমানসিক পশুশক্তির শিকারে পরিণত হয়েছিল। এরূপ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলার জন্য গুমরে মরছিল নির্যাতিত, নিপীড়িত অসহায় মানুষের আত্মা। এ অবস্থায় মহানবী সা: ঘোর অজ্ঞানতার কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বসমাজে ইসলামের সুবিমল জ্যোতি বিকিরণ করেন। নিঃস্ব ও অসহায়দের সেবা, অত্যাচারীদের বাধা প্রদান, বঞ্চিতদের আশ্রয় এবং বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে পারস্পরিক শান্তিশৃঙ্খলা ও সৌভ্রাতৃত্ব স্থাপন করা প্রভৃতি কর্মসূচি সামনে রেখে যৌবনকালে তিনি যুবকদের নিয়ে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে কল্যাণধর্মী একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। আমৃত্যু তিনি সংগ্রাম করে গেছেন সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায়। আজকের এ ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমাজেও মহানবী সা: -এর আদর্শ অনুসরণে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব। ইসলাম আগমনের আগে দুনিয়া নারীকে অকেজো ও অকল্যাণকর সভ্যতা-সংস্কৃতির পরিপন্থী বা তার প্রতিবন্ধক মনে করে জীবনের কর্মক্ষেত্র থেকে একেবারে বাইরে ফেলে দিয়েছিল। তাকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, নিষ্ক্রিয়তার এমন এক গহ্বরে যেখান থেকে উঠে আসা ও উত্থান-অগ্রগতি লাভ করা কোনোক্রমেই সম্ভব ছিল না। মানবতার পরম বন্ধু মহানবী সা: তাদের এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। নারীসমাজকে হীনতার নিম্নতম স্তর থেকে তুলেছেন অনেক ঊর্ধ্বে। দিয়েছেন তাদের তুলনাহীন মর্যাদা, ন্যায্য অধিকার। দিয়েছেন সামাজিক আর্থিক নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা। সম্পদে নারীর অধিকার করেছেন প্রতিষ্ঠা। ঘোষণা দিয়েছেন- নারী-পুরুষ উভয়ে উভয়ের জন্য ভূষণস্বরূপ। মেয়েদের মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী সা: বলেন, ‘নিশ্চয় সন্তানের বেহেশত মায়ের পদতলে’। সম্মান, সেবা ও সাহায্য-সহযোগিতার ক্ষেত্রে মায়ের কথা তিনি তিনবার উল্লেখ করেছেন এবং একবার উল্লেখ করেছেন বাবার কথা। বর্তমান বিশ্বে ‘নারী অধিকার’ ইস্যু নিয়ে যে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে এবং ব্যয়িত হচ্ছে লাখো কোটি বিলিয়ন ডলার তার সমাধানে আল্লাহ প্রদত্ত ও মহানবী সা: প্রদর্শিত বিধান মেনে চললেই নারী অধিকারসহ বিশ্ব মানবতার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সভ্যতার প্রধান উপাদান শিক্ষা। আর সুশিক্ষা হচ্ছে আদর্শ মানুষ ও সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার।
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement
সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য : যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব পশুর নদে গ্যাস ও কয়লাবাহী জাহাজের সংঘর্ষ, নিখোঁজ ১ চুয়াডাঙ্গা প্রকাশ্যে বিএনপি নেতাকে কোপালেন যুবলীগ কর্মী ‘আওয়ামী লীগের আমলে প্রতিবছর ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে’ গাজার জাবালিয়ায় হামাসের হামলায় ১৫ ইসরাইলি সেনা হতাহত ইসরাইলের ৫ এলাকায় হিজবুল্লাহর একযোগে হামলা শেষ মুহূর্তে জনমত সমীক্ষায় ট্রাম্পকে পেছনে ফেললেন কমলা! সোনার ছেলে বড় হয়েও যেন সোনার ছেলেই থাকে : সেলিম উদ্দিন সাফজয়ী ক্রিকেটারদের যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা রাজস্ব আদায় বাড়ানোর উপায় খুঁজছে বাংলাদেশ কুয়াকাটায় নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলেরা

সকল