২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জীবন আলোকিত হোক সিরাতের আলোয়!

-

সিরাত আরবি শব্দ। অভিধানে যার অর্থ আচরণ, চরিত্র, স্বভাব প্রকৃতি, পদ্ধতি, জীবনচরিত, জীবনবৃত্তান্ত ইত্যাদি। আর এখান থেকেই ‘সিরাতুন্নবী’ একটি বহুল প্রচলিত শব্দ বন্ধনী। সিরাতুন্নবী সা: হচ্ছে, নবীজীর জীবনচরিত। যাতে বিবৃত হয়েছে, প্রিয়নবী মুহাম্মদ সা:-এর পবিত্র জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত। ঘরে বাইরে মসজিদের মিম্বরে; হাটে বাজারে, প্রতিবেশীর সাথে, আপন স্ত্রীদের সাথে, অমুসলিমদের সাথে এবং সাহাবিদের সাথে কোন বিষয়ে কখন কিভাবে তিনি কী আলোচনা করেছেন, জীবনে চলার পথে কিভাবে প্রিয় সাহাবিদের পথনির্দেশনা দিয়েছেন ইত্যাদি। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের বাস্তবসম্মত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে নবীজীর জীবনচরিতে।
আর একজন আদর্শ মানুষের জীবনাচার হয় সুন্দর ও সুশৃঙ্খল; সৌখিন ও পরিপাটি। পৃথিবীর ইতিহাসে অনুসরণীয় শ্রেষ্ঠ এমন একজন মহান ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সা:। এ কথা ঐতিহাসিকভাবে অমুসলিমদের দ্বারাও পরীক্ষিত এবং স্বীকৃত। যে কথা, প্রায় ১৪০০ বছর আগে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে; তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে (জীবনীতে) রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আহজাব-২১)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের নবীজীকে প্রেরণ করেছিলেন গোটা বিশ্বভূখণ্ডের জন্য। মনোনীত করেছিলেন রহমতস্বরূপ। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি বিশ্বজগতের রহমতস্বরূপ।’ (সূরা আম্বিয়া-১০৭)
কাজেই এ কথা বলার সুযোগ নেই যে, নবী মুহাম্মদ সা: শুধু আরব ভূখণ্ডের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন; বরং গোটা জগতের জন্য তিনি হলেন রহমতস্বরূপ। এমনকি মুফাসসিরদের মতে, অমুসলিমদের জন্যও তিনি রহমতস্বরূপ। আর এই নবী মুহাম্মদ সা:-এর স্বভাব ও চারিত্রিক সনদ দিচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা এভাবে-‘আর আপনি হলেন মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা কলম-০৩)
নবুওয়ত লাভের আগেই পুরো আরবের অমুসলিম মুশরিকরাও নবীজীকে আল আমিন বিশ্বস্ত বলে সম্বোধন করতেন। নিজেদের মাল-সম্পদ গচ্ছিত রাখতেন তাঁর কাছে। একজন মানুষ কেমন আস্থা বিশ্বাস অর্জন করলে, মানুষ তাঁর ওপর এতটা আস্থা রাখতে পারে? যার ফলে তারা নিজেদের মাল-সম্পদ আমানত রাখতে চায়। বাস্তব কথা হলো, নবীজির কথা কাজ ও মৌন সম্মতি বা সমর্থন তো প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহরই আনুগত্য। তাই তো এমন ঘোষণা। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এই স্বীকৃত দিয়েছেন যে, ‘কেউ রাসূলের অনুগত হয়, নিশ্চয়ই সে যেন আল্লাহরই অনুগত হয়।’ (সূরা নিসা-৮০)
এজন্য রাসূল সা:-এর প্রকৃত আনুগত্য তো তাঁর সুন্নাত তথা আদর্শকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমেই পূর্ণ হতে পারে। প্রত্যেক মুমিনের জীবনে সুন্নাতের সফল বাস্তবায়ন ও সুন্নাতের সঠিক অনুশীলনই হচ্ছে আলোকিত জীবনের পাথেয়। সুন্নাত জীবন বা নববী আদর্শই হচ্ছে উভয়জগতের কল্যাণ লাভের অন্যতম মাধ্যম।
যেসব সুন্নাত রয়েছে হাদিসের পাতায় পাতায়। নবীজির পূর্ণাঙ্গ জীবনী সীরাত তথা জীবনচরিতবিষয়ক গ্রন্থগুলোতে আলোচিত হয়েছে। যেসব যাচাই বাছাই করা হয়েছে, সত্যের কষ্টিপাথরে।
নবীজির জীবনচরিতের আদর্শ গ্রহণ করা কেন জরুরি? সাহাবি হজরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-একবার রাসূল সা: আমাদের এমন ওয়াজ করলেন যে, তাতে আমাদের অন্তরসমূহ ভীত-সন্ত্রস্ত হলো, চক্ষুগুলো অশ্রুসিক্ত হলো। আমরা আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটি কোনো বিদায়ী নসিহত, তাই আমাদের কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি, তাকওয়া তথা আল্লাহভীতির এবং শাসক বা নেতার কথা শোনা ও তার আনুগত্য করার, যদিও একজন ক্রীতদাস তোমাদের নেতৃত্ব দেয়। নিঃসন্দেহে তোমাদের মধ্যে হতে যে আমার পর জীবিত থাকবে, অচিরেই সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। (সে সময়) তোমাদের উপর আবশ্যক হলো, আমার সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা। তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরবে। দ্বীনের মধ্যে নতুনত্ব থেকে তোমরা সাবধান হবে। কেননা, প্রত্যেক বিদয়াত নতুন বিষয়ই পথভ্রষ্টতা।’
আর পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা নবীজির অনুসরণ অনুকরণকে আল্লাহর ভালোবাসা ও গুনাহ মাফের প্রতিশ্রুতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (সূরা আলে ইমরান-৩১)
লেখক : খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর।


আরো সংবাদ



premium cement