২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

মহানবীর অপূর্ব মীমাংসা

-

ইসলামের আলো তখনো জগৎ মাজারে ফুটে ওঠেনি। পৃথিবীময় জাহেলিয়াতের জয়জয়কার অবস্থা বিরাজমান। সমগ্র আরব ভূখণ্ড মূর্খতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। এতদসত্ত্বেও কাবাগৃহের প্রতি তাদের মায়া-মমতার কমতি নেই। পবিত্র কাবা পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কাবা নির্মাণকে তারা মঙ্গল ও পুণ্যের কাজ মনে করে। এতে অংশগ্রহণ করাকে নিজেদের সৌভাগ্য বলে ধারণা করে।
সেমতে কোরাইশের সব শাখা গোত্র ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তে উপনীত হলো- পবিত্র কাবা পুনর্নির্মাণে প্রত্যেক গোত্রের মধ্যে কাজ বণ্টন করা হবে, যাতে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক কার্যবণ্টন সম্পন্ন হলো। প্রত্যেক গোত্র পবিত্র কাবার নবনির্মাণের কাজে আত্মনিয়োগ করল। কাবার জন্য কে কার থেকে বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, কে বেশি অংশগ্রহণ করতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় নামল তারা।
যার যার কাজ সমাপ্ত করল সবাই। কিন্তু জান্নাতি কালো পাথর ‘হজরে আসওয়াদ’ স্থাপন নিয়ে দেখা দিলো বিরাট বিপত্তি। সবার মনোবাঞ্ছা- এই সৌভাগ্য ও গৌরব অর্জন করতে চায়। সব গোত্র মনে করে তারাই এর যোগ্য ও প্রকৃত হকদার। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয় এ কাজে। ফলে এক বিরাট ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলো। অবস্থা গৃহযুদ্ধের রূপ নেয়ার উপক্রম। তখন কোরাইশের কয়েকজন বয়োবৃদ্ধ, বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ সরদার পরামর্শে বসলেন কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়?
সবশেষ তারা এই ফয়সালায় উপনীত হলেন আগামীকাল ভোরে যে সবার আগে পবিত্র কাবার দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে সে যে ফয়সালা দেবে সেটিই সবাই মাথা পেতে মেনে নেবে। তার ফয়সালা হবে সবার শিরোধার্য।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর বয়স তখন ৩৫ বছর। তিনি তখনো নবুওয়াত প্রাপ্ত হননি। মক্কার ছোট-বড় সবাই তাঁর আচার-আচরণে মুগ্ধ। সবাই তাঁর নিষ্পাপ ও নিষ্কলুষ চরিত্র-আখলাক সম্পর্কে জ্ঞাত। এ জন্য তাঁকে তারা সত্যবাদী, আমানতদার ও ‘আল-আমিন’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। পরদিন ভোর হলো। মক্কাবাসী দেখতে পেল- তাদের সবার প্রিয় ও সবার মান্যবর মুহাম্মদ সা: কাবাগৃহের দরজায় দাঁড়িয়ে। সবাই তখন সমস্বরে বলে উঠল- এই তো আল-আমিন! আমরা তাঁর ফয়সালায় সন্তুষ্ট! আমরা তাঁর রায় মেনে নিতে পূর্ণ প্রস্তুত!
রাসূলুল্লাহ সা: তাদের একটি চাদর আনতে বললেন। চাদরের ওপর তিনি নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদ রাখলেন। এরপর প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে সরদার ডাকলেন। তারা চাদরটি কাবার কাছে নিয়ে গেলে রাসূল সা: স্বহস্তে যথাস্থানে স্থাপন করে দিলেন পাথরটি। আর এভাবেই রাসূল সা:-এর অপূর্ব মীমাংসায় একটি গৃহযুদ্ধ থেকে রক্ষা পেল কোরাইশ গোত্র। মিটে গেল নিশ্চিত ঘটমান ভয়াবহ এক যুদ্ধ। মক্কার অধিবাসীরা পুনরায় বসবাস করতে থাকল শান্তিতে। (সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া অবলম্বনে)

লেখক : শিক্ষক, জামিয়াতুল আবরার দারুল উলুম আল-ইসলামিয়া, উরশিউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া


আরো সংবাদ



premium cement